অন্য মনে ওদের দেখলে ক্ষতি কী

নিকাশি বা ভ্যাটে খাবার না ফেলে বাড়ির সামনে একটি পাত্রে সেই খাবার রাখুন। যা পশু-পাখিরা খাওয়ার সুযোগ পাবে। বাড়ির সামনে একটি পাত্রে জল রাখুন যা পশু খাওয়ার সুযোগ পাবে।

Advertisement

মেঘা মেহরা

শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:০৮
Share:

১৯ বছর আগের ঘটনা। দিল্লিতে আমাদের ফ্ল্যাটের কাছেই এক প্রতিবেশি কুকুর মেরে ফেলার চেষ্টা করছিল। খবর পেয়েই অফিস থেকে ছুটে আসি। কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। ১৫টি কুকুরছানাকে কীটনাশক দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছিল। তাদের বাঁচানোর সুযোগ না পেলেও সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে দিল্লি পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলাম। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে সেই অন্যায়ের কথা তুলে ধরেছিলাম। পরে তাঁরাই আদালতে মামলা লড়েছিলেন। সেই ঘটনা আমার জীবনকে বড় শিক্ষা দিয়েছে। শুধু আইন নয়, এ বিষয়ে কুকুরের প্রতি মানুষের আচরণের পরিবর্তন প্রয়োজন। তার জন্য জরুরি সচেতনতা।

Advertisement

কলকাতায় এনআরএস চত্বরের ঘটনার সঙ্গে মিল রয়েছে বহরমপুরের খাগড়ার একটি ঘটনার। গত বছর নভেম্বর মাসে খাগড়ার কিছু লোকজন একটি কুকুরকে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে মেরে দেয়। ঘটনার কিছুক্ষণ আগে আমাদের কাছে খবর এসেছিল। কিন্তু সেখানে পৌঁছনোর আগেই কুকুরটি মারা পড়ে। খাগড়ার কুকুর পিটিয়ে মেরে দেওয়ার ভিডিয়ো দেখে সারা রাত আমি ঘুমোতে পারিনি। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখলাম কলকাতায়। সেখানে কুকুরছানাকে দু’জন মহিলা পিটিয়ে মেরে দিচ্ছেন। ওই মহিলারাও হয়তো এক দিন মা হবেন, তাঁদের সন্তান হবে। এটা কি ঠিক হল?

আইন নিশ্চয় তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করবে। কিন্তু আমরা চাই কুকুরের প্রতি মানুষের আচরণের পরিবর্তন। চাই মানুষ ও পথ কুকুরের সম্পর্কের বন্ধন। কুকুর কখনও কারও ক্ষতি করে না। ভালবেসে একটু খাবার দিলে ওরা খুশি হয়।

Advertisement

আমাদের আবেদন, নিকাশি বা ভ্যাটে খাবার না ফেলে বাড়ির সামনে একটি পাত্রে সেই খাবার রাখুন। যা পশু-পাখিরা খাওয়ার সুযোগ পাবে। বাড়ির সামনে একটি পাত্রে জল রাখুন যা পশু খাওয়ার সুযোগ পাবে। অনেকে বিস্তর টাকা খরচ করে বিদেশি কুকুর পোষেন। কিন্তু পথে অনেক সুন্দর কুকুরছানা ঘুরে বেড়ায়। তাদের একটি বাড়িতে নিয়ে যান। এই কুকুর পুষতে বড় খরচ হয় না।

ছোটবেলা থেকে পথ কুকুরদের ভালবাসি। ওদের জন্য কাজ করি। অসুস্থ কুকুর দেখলে বাড়ি এনে সেবা করা বা বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে গিয়ে পথ কুকুরদের খাওয়ানোর মতো কাজ করে আসছি। আমার স্বামীর কাজের জন্য প্রায় ১১ বছর পশ্চিমবঙ্গে আছি। কলকাতা, দুই মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ ও কোচবিহারে থেকেছি। সব জায়গায় পথ কুকুরদের নিয়ে কাজ করেছি। শুধু একা করলে হবে না, অন্যদের সঙ্গে নিয়ে পথ কুকুরদের জন্য কাজ
করতে হবে।

বছর দু’য়েক আগে কোচবিহারে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করে পথ কুকুরদের চিকিৎসা, খাবার দেওয়া শুরু করি। মানুষকে সচেতন করার কাজ শুরু করি। গত বছর জুন মাসে একটি সংস্থা তৈরি করি। এই সংস্থা আপাতত মুর্শিদাবাদ ও কোচবিহারে কাজ করছে। এখনও পর্যন্ত বহরমপুর শহরে তিন দফায় ৩৫০০ পথ কুকুরকে অ্যান্টি র‌্যাবিস ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। ফের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। বহরমপুরের পাশাপাশি জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জে আমাদের সংস্থা কাজ করছে। শীঘ্রই ডোমকল ও কান্দিতে কাজ শুরু হবে।

মুর্শিদাবাদ ও কোচবিহারের একটি পশুপ্রেমী সংস্থার কর্ণধার

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন