২০১৪ সালের বারোদোলে কৃষ্ণনগরে ফেরার আগেই অগ্রদ্বীপে আটকে দেওয়া হয়েছিল বিগ্রহ

গোপীনাথ মামলায় নির্দেশ ‘রিসিভার’ নিয়োগের

কয়েকশো বছরের পুরনো প্রথা মেনে প্রতি বছর কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির কুলদেবতা গোপীনাথ দুর্গাপুজোর পর কৃষ্ণনগর থেকে কয়েক মাসের জন্য বর্ধমানের অগ্রদ্বীপে অবস্থান করতেন। দোলপূর্ণিমার পরের একাদশী তিথিতে অগ্রদ্বীপের মেলার শেষে বারোদোলের আগে আবার রাজবাড়িতে ফিরে আসতেন গোপীনাথ। কিন্তু ২০১৪ সালে অগ্রদ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দারা গোপীনাথের বিগ্রহকে আর কৃষ্ণনগরে ফিরতে দেননি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৭:১০
Share:

এই বিগ্রহ নিয়ে মামলা। নিজস্ব চিত্র

কৃষ্ণনগর রাজ পরিবারের আবেদনে অবশেষে সাড়া দিল কোর্ট। অগ্রদ্বীপের গোপীনাথকে কৃষ্ণনগরে ফেরানোর দাবিতে করা মামলায় রিসিভার নিযুক্ত করার জন্য নিম্ন আদালতকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলল কলকাতা হাইকোর্ট।

Advertisement

গত ২১ জানুয়ারি কৃষ্ণনগর রাজপরিবারের প্রধান সৌমীশচন্দ্র রায়ের তরফে কলকাতা হাইকোর্টে এই বিষয়ে আবেদন জানানো হয়। সৌমীশচন্দ্র বলেন “গোপীনাথকে কৃষ্ণনগরে ফেরানো সংক্রান্ত মামলায় রিসিভার বসানোর বিষয়টি যাতে দ্রুত হয় সেই জন্য আদালতের কাছে আর্জি জানিয়েছিলাম। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য কাটোয়ার ২ নম্বর দেওয়ানি আদালতকে দু’মাসের মধ্যে রিসিভার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।”

কয়েকশো বছরের পুরনো প্রথা মেনে প্রতি বছর কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির কুলদেবতা গোপীনাথ দুর্গাপুজোর পর কৃষ্ণনগর থেকে কয়েক মাসের জন্য বর্ধমানের অগ্রদ্বীপে অবস্থান করতেন। দোলপূর্ণিমার পরের একাদশী তিথিতে অগ্রদ্বীপের মেলার শেষে বারোদোলের আগে আবার রাজবাড়িতে ফিরে আসতেন গোপীনাথ। কিন্তু ২০১৪ সালে অগ্রদ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দারা গোপীনাথের বিগ্রহকে আর কৃষ্ণনগরে ফিরতে দেননি।

Advertisement

অগ্রদ্বীপের মানুষের বক্তব্য, স্বয়ং চৈতন্যদেবের নির্দেশে তাঁর পার্ষদ গোবিন্দ ঘোষ এই গোপীনাথ বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন অগ্রদ্বীপে। ‘ব্রহ্মশীলা’ নামের এক দুষ্প্রাপ্য কোষ্ঠীপাথর দিয়ে এই কৃষ্ণমূর্তি গড়া হয়। সুতরাং গোপীনাথ আদতে অগ্রদ্বীপের। কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির সঙ্গে গোপীনাথের সম্পর্ক অনেক পরে। গোপীনাথকে নিয়ে এই লড়াইয়ের জল গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। অগ্রদ্বীপবাসীদের একটা বড় অংশের বক্তব্য, গোপীনাথ যখন অগ্রদ্বীপের তখন কেন তিনি বছরের অনেকটা সময় কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে থাকবেন? তাঁদের অভিযোগ, গোপীনাথকে ঘিরে যে বিরাট মেলা অনুষ্ঠিত হয় তার থেকে আয় হওয়া মোটা টাকা এবং মন্দিরের প্রণামী রাজ পরিবারের হাতে চলে যায়। অথচ মন্দিরের সংস্কার পর্যন্ত তাঁরা করেন না।

এ দিকে, কূলদেবতা ফেরাতে আইনি লড়াই শুরু করে কৃষ্ণনগর রাজ পরিবার। ২০১৪ থেকে মামলা চলছে। যদিও হাইকোর্টের এই নির্দেশের কথা আদৌ জানেন না বলে দাবি করেছেন অগ্রদ্বীপ গোপীনাথ সেবা সমিতির সভাপতি অশোক ঘোষ। তাঁদের আইনজীবী বাদল ঘোষ বলেন, “গোপীনাথ মন্দিরে রিসিভার বসানোর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ চেয়ে আমরা হাইকোর্টে আবেদন করেছি। আদালতের নির্দেশের অপেক্ষায় আছি।” কৃষ্ণনগর রাজপরিবারের তরফে অমৃতা রায় অবশ্য দাবি করেন, “ ওঁরা কোথায় কী করেছেন তা আমাদের জানা নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন