‘২৭ বছরে কেউ কথা রাখেনি’

স্বামী শচীন পালকে হারিয়ে অসহায় ভাবে দিন কাটাচ্ছেন বছর পঞ্চান্নের জ্যোতিলক্ষ্মী পাল। নিহত বিশ্বনাথ সাহার স্ত্রী বেলি সাহা তখন ছিলেন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। একমাত্র ছেলেকে অবলম্বন করেই তিনি বেঁচে রয়েছেন।

Advertisement

মফিদুল ইসলাম

হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:২২
Share:

—ফাইল ছবি

সাতাশ বছর কেটে গিয়েছে। তবু হরিহরপাড়ার সেই ক্ষত আজও দগদগে। ১৯৯২ সালের ২ নভেম্বর আইন অমান্য আন্দোলন কর্মসূচি করতে গিয়ে হরিহরপাড়া বিডিও অফিস চত্বরে পুলিশ ও ইএফআরের গুলিতে প্রাণ হারান সাত জন নিরীহ মানুষ। আহত হন আরও ছয় জন। জীবন্মৃত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা।

Advertisement

স্বামী শচীন পালকে হারিয়ে অসহায় ভাবে দিন কাটাচ্ছেন বছর পঞ্চান্নের জ্যোতিলক্ষ্মী পাল। নিহত বিশ্বনাথ সাহার স্ত্রী বেলি সাহা তখন ছিলেন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। একমাত্র ছেলেকে অবলম্বন করেই তিনি বেঁচে রয়েছেন। চোদ্দো বছরের ছেলে পিন্টুকে (আমিরুল) হারিয়ে অসহায় তার বাবা গোলাম মোস্তফা।

স্বামীহারা বেলি সাহা বলছেন, ‘‘ছেলেটা ওর বাবার মুখ পর্যন্ত দেখতে পাইনি!’’ স্বামীহারা জ্যোতিলক্ষ্মী পাল বলেন, ‘‘আমরা ক্ষতিপূরণ চাই না। চাই নির্বিচারে যারা এমনটা করেছিল, সেই দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দিক বর্তমান সরকার। এই ২৭ বছরে কেউ কথা রাখেনি!’’

Advertisement

সেদিন ইএফআরএর গুলিতে আহত হন জিল্লার, রিয়াজুল, সমসের, গোলাম, খালেক ও মিনারুল। কোনও ক্রমে প্রাণে বাঁচলেও আজ তাঁরা জীবন্মৃত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। সমসের বলছেন, ‘‘সাতাশ বছর মামলা চালিয়ে আমরা নিঃস্ব। কোনও সরকারই আমাদের কথা ভাবেনি।’’ নাগরিক কল্যাণ পরিষদের সম্পাদক মদন সরকার বলছেন, ‘‘তৎকালীন কংগ্রেসের যুবনেত্রী তথা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৩ নভেম্বর নিহতদের বাড়ি গিয়ে দশ হাজার টাকা করে তুলে দিয়েছিলেন। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৩ সালে কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি হরিদাস দাসের নেতৃত্বে হয় দাস কমিশন গঠন করে। যার রায় যায় সরকারের বিরুদ্ধে।

কমিশন নিহতদের পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা এবং আহতদের দুই লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুপারিশ করে। কিন্তু ২০০০ সালে বাম সরকার স্থানীয় বিডিও-র মাধ্যমে নিহতদের পরিবারকে পঁচিশ হাজার টাকা এবং আহতদের দশ হাজার টাকা

ক্ষতিপূরণ দেয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন