হাতুড়েদের হাতেই চলে নার্সিংহোম

নার্সিংহোম সাফ-সুতরো করার কাজ করতেন যে মহিলারা তাঁদেরই কেউ কেউ হয়ে গিয়েছেন নার্স।

Advertisement

শুভাশিস সৈয়দ ও সুজাউদ্দিন

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৮ ০১:৫০
Share:

প্রতীকী ছবি।

অপারেশন থিয়েটারে কিছু দিন সার্জনের পাশে ছুরি-কাঁচি এগিয়ে দেওয়ার কাজ করতেন, সেই তিনি-ই হয়ে উঠলেন স্বঘোষিত সার্জন। অথচ আদতে তিনি কলা বিভাগে সাধারণ বিএ পাশ। গলিঘুঁজিতে গজিয়ে ওঠা একাধিক নার্সিংহোমে অস্ত্রোপচার করেন। হার্নিয়া, সিজার, টিউমার, অ্যাপেন্ডিক্স, ফিশ্চুলা—সব কিছুর জন্যই রোগীরা তাঁর কাছে আসেন। বেশির ভাগই গ্রামগ়ঞ্জের গরিবগুর্বো মানুষ। ডাক্তারবাবুর ডিগ্রি যাচাই করার ‘দুঃসাহস’ তাঁরা দেখান না। তুলনায় সস্তায় অপারেশন করাতে পারছেন এই না কত! ভুয়ো চিকিৎসক নির্বিঘ্নে পার পেয়ে যান এবং ব্যবসা চালাতে থাকেন।

Advertisement

নার্সিংহোম সাফ-সুতরো করার কাজ করতেন যে মহিলারা তাঁদেরই কেউ কেউ হয়ে গিয়েছেন নার্স। দিব্যি গুরুতর অসুস্থ রোগীকে ওষুধ দেওয়া, স্যালাইন চালানো, এমনকী ইঞ্জেকশন দেওয়ার কাজ করছেন। তাঁদের পরনে নার্স দিদিদের মতোই সাদা পোশাক, ফলে কেউ কখনও ডিগ্রি জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন মনে করেননি। খবরের কাগজে প্রায়শই বিজ্ঞাপন দেয় এমন একাধিক সংস্থা। গ্র্যাজুয়েট ছেলেমেয়েদের কিছু দিনের প্রশিক্ষণ দিয়ে ডাক্তার বা নার্স বানিয়ে দেয় তারা। কাজের সুযোগও মিলবে সঙ্গে-সঙ্গে। একাধিক জেলার স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাই জানিয়েছেন, এই কাজের প্রধান জায়গাই হচ্ছে জেলায় শহর ও আধা-শহরে গজিয়ে ওঠা এই ধরনের কিছু নার্সিংহোম।

বিষয়টি জেলা স্বাস্থ্য কর্তাদের অজানা নয়। উল্টে অভিযোগ, এঁদের একাংশের মদত রয়েছে এর পিছনে। অভিযোগ, ওই নার্সিংহোম মালিকদের অনেকের হাত ‘লম্বা’। তাঁদের অনেকে বাড়িতে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের আনাগোনা আছে। রাজ্যের নার্সিংহোম অ্যাসোসিয়েশন-এর এক কর্তার কথায়, ‘‘এত কম টাকায় এই নার্সিংহোমগুলি পরিষেবা দেয় বলে উঁচু ডিগ্রির ডাক্তার বা নার্স রাখা সম্ভব হয় না। বেশি টাকায় নামী ডাক্তার আনলে আবার রোগী কমে যাবে।’’ মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিরুপম বিশ্বাস বলেন, ‘‘নার্সিংহোমের সব কাজ যে স্বচ্ছতা মেনে চলছে, তা নয়। কোথাও গণ্ডগোল রয়েছে।’’ মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক বিভু গোয়েল বলেন, ‘‘আরএসবিওয়াই, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের কাজ ঠিক মত করার কথা বলা হয়েছে। সব জায়গায় প্রশিক্ষিত চিকিৎসক কাজ করছেন না বলে খবর আসছে। বিশেষ করে আরএসবিওয়াই নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছি।’’

Advertisement

নদিয়া জেলার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত এক বছরে সেখানে ১৫টি নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়ে। ৫টি অভিযোগ খারিজ হয়েছে। বাকি ১০টি নতুন তৈরি হেলথ রেগুলেটরি কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এক বছরে লাইসেন্স নবীকরণে দেরি করার জন্য নদিয়ার ৬টি নার্সিংহোমের থেকে ২২ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকা জরিমানা নেওয়া হয়েছে। মুর্শিদাবাদে গত তিন মাসে নার্সিংহোম নিয়ে ১৭টি অভিযোগ জমা পড়েছে। ৮টি ঘটনার তদন্ত চলছে। দুটি ঘটনা স্বাস্থ্য কমিশনে পাঠানো হয়েছে।

(তথ্য সহায়তা: সুস্মিত হালদার)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন