বিশ লিটারি জারই এখন নদের যমুনা

কোথাও ঠিক মতো জল আসে না বাড়িতে। কারও নেমন্তন্ন বাড়ি। বা, কেটারিংয়ের কারবার। ভরসা বিশ লিটারের জলের জার। গায়ে নেই কোনও সংস্থার নাম, নেই লোগো। দাম নামি সংস্থার জারের তুলনায় কিছু নয়। পরিশুদ্ধই যদি হবে, কী করে হচ্ছে দামের এত ফারাক? কী রহস্য সেই জারে? কে নেবে দায়? খোঁজ নিচ্ছে আনন্দবাজার। ২০ লিটারের জলের জারের দাম ১০ থেকে ৩০ টাকা। এত সস্তায় কি জলের সঠিক পরিশোধন সম্ভব?

Advertisement

সৌমিত্র সিকদার ও মনিরুল শেখ

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৮ ০৮:২০
Share:

কৃষ্ণনগরে চলেছে জলের জার সরবরাহ। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

ফেলো কড়ি, কেনো জল!

Advertisement

সেই জল আদৌ জীবাণু বা আর্সেনিক-মুক্ত কিনা, তা নজরদারির কোনও ব্যবস্থা নেই। এবং অভিযোগ, নিয়ম মেনে মাটির তলা থেকে সেই জল তোলা হচ্ছে কিনা, তারও বিন্দুমাত্র পরোয়া নেই কোনও স্তরে!

তবু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে সরকারি বিভিন্ন জলপ্রকল্প এবং পুরসভার সরবরাহ করা পাণীয় জলের বদলে এই কেনা জলেই নদিয়ার জনতার আস্থা! তাতেই গত কয়েক বছরে জেলায় ঢেউ তুলেছে জলের ব্যবসা!

Advertisement

২০ লিটারের জলের জারের দাম ১০ থেকে ৩০ টাকা। এত সস্তায় কি জলের সঠিক পরিশোধন সম্ভব? কোনও উত্তর নেই।

জেলা-জুড়ে শ’খানেকের বেশি জল-সংস্থা গজিয়ে উঠেছে প্রশাসন-পুরসভার নাকের ডগায়। অভিযোগ, অতি নড়বড়ে তাদের পরিকাঠামো এবং অধিকাংশেরই বৈধ অনুমোদন নেই। কিন্তু সেই সংস্থাগুলির জল-ই প্রতিদিন কৃষ্ণনগর, কল্যাণী, তেহট্ট, রানাঘাট, নাকাশিপাড়া, ধুবুলিয়া, কালীগঞ্জের মতো শহরে বাড়ি-বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছে।

ভূগর্ভের জল নির্বিচারে তোলা বেআইনি। বিশেষ করে নদিয়ার মতো জেলায়, যেখানে ১৭টি ব্লক আর্সেনিকপ্রবণ। তা সত্ত্বেও নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না-করে জল ব্যবসায়ীরা পাম্প চালিয়ে মাটির তলা থেকে দেদার জল তুলছেন বলে অভিযোগ। ‘পরিশোধন’ করার নামে স্রেফ ক্লোরিন মিশিয়ে তা ভরা হচ্ছে জারে এবং বোতলে। আর্সেনিক, ফ্লোরাইডের মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক বা অন্য কোনও রোগের জীবাণু তাতে রয়েছে কিনা দেখার ব্যবস্থাই নেই। কালেভদ্রে পুলিশ অভিযান চালিয়ে কয়েক জন ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে, তাঁদের সংস্থায় তালা ঝোলায়, বাকিরা কিছুদিন একটু চুপচাপ থেকে ফের মাঠে নেমে পড়েন।

নাকাশিপাড়ার কালু বৈদ্য-র কথাই ধরা যাক। বছর খানেক আগে কলকাতা থেকে গোয়েন্দাদের একটি দল নাকাশিপাড়ায় গিয়ে ভেজাল জিরে ও জল বিক্রির সংস্থাগুলিতে অভিযান চালায়। কালু বৈদ্য-র জলের সংস্থা ছিল। পাম্প বসিয়ে মাটির ১৪০ ফুট নীচ থেকে জল তুলতেন তিনি। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। আপাতত তিনি মুক্ত, কিন্তু জলের ব্যবসা বন্ধ। কালুই বললেন, ‘‘এখনও পুলিশের নাকের ডগায় বেথুয়াডহরি, কলেজপাড়া, সোনাতলা, কাঁঠালবেড়িয়া—সর্বত্র বেআইনি কারখানা চলছে। এক-এক মাসে এক-একটি সংস্থা ২-৩ হাজার জার বিক্রি করছে।’’

চাকদহের চান্দুরিয়ার একটি বাড়িতে চলছে এ রকমই একটি জলের কারখানা। তার মালিক রতন বিশ্বাসের দাবি, “আমরা জলকে আয়রন ও ব্যাকটেরিয়ামুক্ত করি।’’ রানাঘাটের ব্যনার্জী লেনের আরেকটি জলের কারখানার মালিক সুদীপ মিত্র বলেন, “আমরা ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করি। জলের গুনগত মান বজায় রাখা হয়।’’

কিন্তু এই সব কারবারিদের দাবিতেই যে অনেকখানি জল মেশানো নেই, সেই নিশ্চয়তা কে দিয়েছে? ‘স্টেট ওয়াটার ইনভেস্টটিগেশন ডাইরেক্টরেট’ বা ‘সুডা’ কি তাঁদের জল তোলার অনুমতি আদৌ দিয়েছে?

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন