ভাল আছেন, বিশ্বকর্মা?

শিল্পজেলা নয় নদিয়া। বিশ্বকর্মা বিগ্রহের আসন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ইতি-উতি পাতা। তবু বিএসএনএল, গাড়ির শোরুম-গ্যারাজ, যন্ত্রচালিত তাঁত যা যেটুকু আছে, কেমন অবস্থা তাদের? বার্ষিক পরবের দিনটি উদ্‌যাপন করার মতো মন বা ট্যাঁকের অবস্থা আছে তো শ্রমিক-কর্মীদের? বাস-টোটো স্ট্যান্ডের রাস্তা চমকানো পুজোর ঝলকানিতে ঢেকে যাচ্ছে না তো কারও বিষণ্ণ মুখ? আনাচ-কানাচ ঘুরে দেখল আনন্দবাজার। এই হতাশার মধ্যেই পুজো হচ্ছে কৃষ্ণনগর টেলিফোন এক্সচেঞ্জে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:৩১
Share:

তখনও হয়নি হাতবদল। মঙ্গলবার কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

বিএসএনএল

Advertisement

টানা অচলাবস্থার মুখে জাতীয় টেলিকম সংস্থা বিএসএনএল। মাস ছয়েক বেতন পাননি অস্থায়ী কর্মীরা, স্থায়ী কর্মীরাও অগস্টের বেতন হাতে পাননি। পুজোর মুখে বেতন পেতে পেতে অক্টোবর হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। মাথার উপরে ঝুলছে ছাটাইয়ের খাঁড়া।

এই হতাশার মধ্যেই পুজো হচ্ছে কৃষ্ণনগর টেলিফোন এক্সচেঞ্জে। অ্যাডমিনিসট্রেটিভ বিল্ডিংয়ে পুজো হয় না। অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ বিল্ডিংয়ের কর্মী-অফিসারেরা কিন্তু প্রতি বার চাঁদা দিতেন। এ বার আর দেননি। সাধ্য মতো চাঁদা তুলে পুজো করছেন টেলিফোন এক্সচেঞ্জের কর্মীরা, যাঁদের বেশির ভাগই অস্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক।

Advertisement

• ছ’মাস বেতন হয়নি। মনমেজাজ অত্যন্ত খারাপ। তবুও সবাই মিলে পুজোটা করছি। আমাদের জন্য তো বছরের ওই একটাই দিন।

সুদীপ চক্রবর্তী

অস্থায়ী কর্মী, অন্যতম উদ্যোক্তা

• ৩৭ বছর চাকরি করছি। পুজোর আগে বেতন পাব না, এটা কোনও দিন ভাবতেই পারিনি। তার উপর ছাঁটাই হওয়ার আশঙ্কা। মন ভীষণ খারাপ। সব মিলিয়ে আর বিশ্বকর্মা পুজোর চাঁদা দিতে ইচ্ছেই হল না

বিধানচন্দ্র রায়

অফিস সুপার (‌জেনারেল)

অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ বিল্ডিং

রানাঘাট বিএসএনএল অফিসে পুজো হচ্ছে নামে মাত্র। কর্মচারিরা যে যার সাধ্য মতো একশো-দেড়শো করে টাকা দিয়েছেন। সেই টাকা দিয়ে এই পুজো হচ্ছে। গত বারের চেয়ে চার জৌলুস অনেকটাই ম্লান।

• গত পাঁচ মাসের বেতন পাইনি। চার জনের সংসার চালাতে গিয়ে ধারে জর্জরিত হয়ে গিয়েছি। বিশ্বকর্মা পুজোর চাঁদা দেব কী করে? পারিনি। অবস্থা বুঝে কেউ চাঁদা চায়ওনি। এই অবস্থা যেন কারও না হয়।”

সমীর দাস

ঠিকা শ্রমিক, বিদ্যুৎ বিভাগ

কুপার্স ক্যাম্পের বাসিন্দা

যন্ত্রচালিত তাঁত

রানাঘাটে এক সময়ে অনেক যন্ত্রচালিত তাঁত বা পাওয়ারলুম ছিল। ধুমধাম করে বিশ্বকর্মা পুজো হত। শ্রমিকদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা ছিল। এখন প্রায় অর্ধেক তাঁত বন্ধই হয়ে গিয়েছে। জৌলুসও হারিয়েছে। খুব কম তাঁতেই বড় করে পুজো হয়।

যন্ত্রচালিত তাঁতের আর এক কেন্দ্র, নবদ্বীপের স্বরূপগঞ্জ শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনের জেরে এই ক’দিন আগেই টানা অচল হয়ে ছিল। সেই ঝামেলা মেটায় আপাতত সেখানে স্বস্তির হাওয়া, ফলে বিশ্বকর্মা‌ আছেন বহাল তবিয়তেই।

শোরুম-গ্যারাজ

গাড়ি ব্যবসায় মন্দার সরাসরি প্রভাব পড়েছে বিশ্বকর্মা পুজোয়। বিশেষ করে শো-রুমগুলিতে পুজোর বাজেট অনেকটাই কাটছাঁট করা হয়েছে। কৃষ্ণনগরের একটি শো-রুম কর্মীদের খাওয়া-দাওয়ার পর্ব বাতিল করে দিয়েছে। এই দিনটিতে শুধু শো-রুমের কর্মীরা নয়, সব কর্মী আসতেন। অনেকটা গেট টুগেদারের মতো। এ বার সব বাদ। প্রায় একই ছবি রানাঘাট বা কল্যাণীতেও। তবে গ্যারাজের অবস্থা তুলনায় ভাল। যদিও বেশির ভাগ গ্যারাজের পুজোই গত কয়েক বছরে বহরে কমেছে।

• এই মন্দার বাজারে খরচ কমাতেই হত! উপায় ছিল না।

শুভ্রাংশু চক্রবর্তী

শো-রুমের ম্যানেজার

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন