থিমের টক্করে জমজমাট লক্ষ্মীপুজো

থিম কম পড়ে নাই এখানে। কোথাও পাটের সাজে মণ্ডপ তো কোথাও বাতিল লোহা-লক্কর দিয়ে চোখধাঁধানো আর্ট। কোনও ক্লাবে থিম ‘দাও ফিরে সে অরণ্য’, তো কোথাও ‘বাল্যবিবাহের কুফল’।

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

চাকদহ শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৬ ০১:১০
Share:

চাকদহের একটি মণ্ডপ।

থিম কম পড়ে নাই এখানে।

Advertisement

কোথাও পাটের সাজে মণ্ডপ তো কোথাও বাতিল লোহা-লক্কর দিয়ে চোখধাঁধানো আর্ট।

কোনও ক্লাবে থিম ‘দাও ফিরে সে অরণ্য’, তো কোথাও ‘বাল্যবিবাহের কুফল’। সামাজিক সচেতনতার পাঠ থেকে শুরু করে পরিবেশ সচেতনতা, থিমে রয়েছে সব কিছুই। রয়েছে থিম নিয়ে ক্লাবগুলোর টক্করও।

Advertisement

কিন্তু দুর্গাপুজো তো ওভার!

আসলে দুর্গার মেয়ে লক্ষ্মীকে নিয়েই এখানে বেশি মাতামাতি। দেশভাগের যন্ত্রণায় উৎসবের নানা রং এদের জীবনে ধরা পড়ত না। দুর্গাপুজো আসত, আবার চলেও যেত। কিন্তু, ও-পার বাংলায় ঘটা করে যে উৎসবটা হতো, সেই লক্ষ্মীপুজোর টানটা রয়েই গিয়েছিল। সেই ভাবনা থেকেই শুরুটা হয়েছিল। প্রথমে কোনও এক বাড়িতে। তার পরে বাড়িতে বাড়িতে। ৬৫ বছর পর, আজ চাকদহের কয়েকটি গ্রামে লক্ষ্মীপুজোর এই উৎসব সর্বজনীন।

একটি বাড়ির প্রতিমা। -নিজস্ব চিত্র

দুর্গাপুজোয় অন্যান্য এলাকায় যে লড়াইটা পাড়ায়-পাড়ায়, ক্লাবে-ক্লাবে হয়, চাকদহের বল্লভপুর, দরাপপুর, চৌগাছা, নেতাজি বাজারে সেই লড়াই হয় লক্ষ্মীপুজোয়। বারোয়ারি পুজো কমিটিগুলির মধ্যে রীতিমতো টক্কর চলে। এলাকার বাসিন্দাদের সবথেকে বেশি আগ্রহ থাকে মেলা নিয়ে। ‘‘মেলা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন লোকজন। ভিন্ জেলা থেকেও অনেকে ভিড় করেন এই মেলায়। এখানকার পুজো ঘিরে উন্মাদনা প্রতি বছর একটু একটু করে বাড়ছে’’, বলছেন স্থানীয় ক্লাব মিলন সঙ্ঘের সম্পাদক বিপুল বিশ্বাস।

দেশভাগের আগে ঢাকার পূর্বাইল থানার জয়দেবপুর এলাকায় ঘরে ঘরে মহাআড়ম্বরে লক্ষ্মীপুজো হতো। বসত মেলা। দেশভাগের পর ওই এলাকার বহু মানুষ চাকদহের আশপাশের এলাকায় এসে পড়েন। ১৯৫০ সাল থেকে এ পারে তাঁরাই শুরু করেন লক্ষ্মীপুজো। প্রথম দিকে গৃহস্থ বাড়িতে পুজো হলেও, পরে বিভিন্ন ক্লাব পুজো শুরু করে। শুরু হয় মেলাও। এখন তিনশোরও বেশি পুজো হয়। প্রথমে মরালী নদীর তীরে বল্লভপুর স্কুলের মাঠে মেলা বসত। এখন মেলা ছড়িয়ে পড়েছে অন্যত্রও। স্থানীয় বাসিন্দা তথা ক্লাব উজ্জ্বল সঙ্ঘের সভাপতি সমীর দাস জানালেন, স্থানীয় মরালী নদীকেই বাংলাদেশের নদী হিসেবে কল্পনা করে তার তীরে মেলা শুরু হয়েছিল। সেই সময় হ্যাজাকের আলো জ্বালিয়ে মেলা চলত।

চাকদহ শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে বল্লভপুরেই প্রথম ঘটা করে লক্ষ্মীপুজো শুরু হয়েছিল। মেলাও প্রথম শুরু হয় এখানেই। ৬৪ বছরের সেই মেলা এখন পার্শ্ববর্তী দরাপপুর, চৌগাছা এবং নেতাজি বাজারে ছড়িয়ে পড়েছে।

বিসর্জনও হয় ধুমধাম করে। বিভিন্ন বাড়ি ও ক্লাবের প্রতিমা শোভাযাত্রা করে আনা হয় এই মেলায়। রঙবাহারি আলো, আর হরেক কিসিমের ট্যাবলো।

নাড়ু-মিষ্টি-নতুন জামা-আলোর মালা-প্যান্ডেল— সব মিলিয়ে জমাজমাট লক্ষ্মীর থিমপুজো।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন