শিশুশ্রম রোধে আইন রয়েছে, আছে শিশু অধিকার সুরক্ষা আয়োগ, শ্রম দফতর। তা সত্ত্বেও রাজ্য জুড়ে এখনও শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বিপুল।
সোমবার বহরমপুরে শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহ রোধে হওয়া কর্মশালায় শ্রম দফতর এবং পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা আয়োগের প্রধানেরা সে কথা কবুলও করলেন।
পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা আয়োগের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী বলেন, “সমস্যা আছে, এটা স্বীকার না করলে সেই সমস্যার সমাধান করা যায় না।”
এ দিন সকালে পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা আয়োগের উদ্যোগে দুই দিনাজপুর, মালদহ, বীরভূম, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের প্রতিনিধিদের নিয়ে শিশুশ্রম এবং বাল্যবিবাহ রোধে কর্মশালা শুরু হল। আজ, মঙ্গলবারও হবে। পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা আয়োগের ছয় সদস্য, শ্রম দফতরের প্রতিমন্ত্রী তথা বিড়ি মালিক জাকির হোসেন, মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সভাধিপতি বৈদ্যনাথ দাস এবং জেলাশাসক পি উলগানাথন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উদ্ধার হওয়া কয়েকটি শিশু শ্রমিককেও সেখানে হাজির করানো হয়েছিল।
মাথাগুনতি শিশু শ্রমিক
সাল ভারতে (কোটি) রাজ্যে (লক্ষ)
১৯৭১ ১.৭ ৫.১১
১৯৮১ ১.৩৬ ৫.১১
১৯৯১ ১.১২ ৭.১১
২০০১ ১.২৬ ৮.৫৭
২০১১ ০.৯০ ৫.৫১
প্রশ্ন হল, কর্মশালার বার্তা কি আদৌ শিশুরা শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে গিয়ে পৌঁছবে?
সুতির বাগশিরা গ্রামের বছর চোদ্দোর এক কিশোর জানায়, তার বাড়িতে বাবা শয্যাশায়ী। দুই বোন স্কুলে যাওয়ার পাশাপাশি মাকে বিড়ি বাঁধতে সাহায্য করে। তাতে যা আয় হয়, সংসার চলে না। তাই রাজমিস্ত্রির কাজে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তাকে ছুটতে হয়। ওই ব্লকেরই নতুন চাঁদরা গ্রামের বছর বারোর একটি ছেলে অরঙ্গাবাদে চায়ের দোকানে কাজ করে। তার বাবা মারা গিয়েছেন, বছর পনেরোর দাদা ভিন্ রাজ্যে রাজমিস্ত্রির কাজ করে। দুই বোন মা-কে বিড়ি বাঁধতে সাহায্য করে। তাতে দিনে দু’শো টাকা আয় হয়। তার প্রশ্ন, ‘‘আমি না খাটলে সংসার চলবে কী করে?’’ নদিয়ার করিমপুরের বছর তেরোর কিশোর অন্য রাজ্যে কাজে গিয়েছে। তার পরিবারের প্রশ্ন, ছেলে কাজ না করলে খাব কী?
অনন্যা বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদে আগের শিশু সুরক্ষা আধিকারিকের কাছে শুনেছিলাম যে বিড়ি বাঁধতে না জানলে নাকি মেয়েদের বিয়ে হতে চায় না।’’ পরে বিড়ি সংস্থার মালিক জাকির হোসেন বলেন, ‘‘বিড়ি বাঁধতে না পারলে আগে ছেলেরা মেয়েদের বিয়ে করতে চাইত না।’’ তাঁর দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নানা কর্মসূচি নেওয়ায় এখন ৯০ শতাংশ শিশুশ্রম বন্ধ হয়েছে। তবে শিশুশ্রম একেবারে নির্মূল হবে, এমনটা বোধহয় সম্ভব নয়।’’
শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ঠিক কত, তা অবশ্য শ্রম দফতরের কর্তারা ঠিক করে জানাতে পারেননি। জঙ্গিপুরের সহকারী শ্রম কমিশনার শ্যামাপ্রসাদ কুণ্ডু জানান, রাজ্যে ৯৮৫টি শিশু শ্রমিক স্কুলের ৮৬০টি চালু আছে। সেগুলিতে প্রায় ৩৬ হাজার পড়ুয়া রয়েছে। তাঁর দাবি, রাজ্য সরকার অসংগঠিত শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষায় নানা কর্মসূচি নিয়েছে। ভবিষ্যনিধি প্রকল্প থেকে শুরু করে ছেলেমেয়ের পড়াশুনা, স্বাস্থ্যবিমা-সহ নানা সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। গত এক বছরে সারা রাজ্য থেকে দু’শো শিশু শ্রমিককে উদ্ধার করা হয়েছে।