ডাক্তার নেই, ওষুধ দেন ঠিকাকর্মী

শেষ কবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকের পা পড়েছিল মনে করতে পারেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। দেখা মেলে না ফার্মাসিস্ট, নার্সের। স্বাস্থ্যকেন্দ্র আগলাচ্ছেন স্থানীয় এক ঠিকাকর্মী। রোগী এলে নাড়ি টিপে ওষুধ দেন তিনিই! এমনই বেহাল দশা সাগরদিঘির গৌরীপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের।

Advertisement

বিমান হাজরা

সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৭ ০৭:৩০
Share:

শেষ কবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকের পা পড়েছিল মনে করতে পারেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। দেখা মেলে না ফার্মাসিস্ট, নার্সের। স্বাস্থ্যকেন্দ্র আগলাচ্ছেন স্থানীয় এক ঠিকাকর্মী। রোগী এলে নাড়ি টিপে ওষুধ দেন তিনিই! এমনই বেহাল দশা সাগরদিঘির গৌরীপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের।

Advertisement

গত সোমবার ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ফার্মাসিস্ট অভিজিৎ পাখিরা, নার্স সুতপা সরকার— কারও দেখা নেই। রয়েছেন ঠিকাকর্মী আবদুর রহমান ও এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ল্যাব কর্মী ইমতিয়াজ আহমেদ। আবাদুর বলছেন, “রোগীরা এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকেন। রোগীরা হয়রান হয়ে ফিরে যাবেন এই ভেবে কাউকে কাউকে ওষুধ দিই। এখন তো ওষুধও নেই।’’ তাঁর দাবি, বছর আটেক ধরে রয়েছেন ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। রোজ ১৭৪ টাকা মজুরি পাওয়ার কথা। দু’বছর হল সেটাও পাচ্ছেন না।

ততক্ষণে মেঝেতে পড়েছেন বৃদ্ধ ইসলামপুরের বাসিন্দা আব্দুল বারি। বলে ওঠেন, ‘‘আর পারি না বাপ। পায়ে খুব ব্যথা। আবাদুর, দু’টো ওষুধ দে দেখি।’’ ওষুধ নেই শুনে মুষড়ে পড়লেন তিনি। আট কিলোমিটার উজিয়ে দস্তুরহাট থেকে ছেলেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে এসেছিলেন ভারতী মণ্ডল। জ্বর ও পেটে যন্ত্রণা নিয়ে এসেছিলেন হুকারহাটের দুলাল মুর্মু। রোগীকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন গৌরীপুরের চেনতারা বিবি, ডিহিবরজের হাবিবুর রহমানের মতো এসেছিলেন অনেকেই। কিন্তু শুকনো মুখে ফিরতে হয় সকলকেই।

Advertisement

হাবিবুর বলছেন, “কাছের হাসপাতাল বলতে সেই সাগরদিঘি। যাতায়াতেই দিন কাবার হয়ে যায়। অসুস্থ রোগীকে নিয়ে যাব কী ভাবে?”

বেহাল ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশেই মাতৃসদন। ঝাঁ চকচকে ভবনে এসেছে দশটি শয্যা। সঙ্গে সহায়ক চিকিৎসা সামগ্রী। বসেছে তিনটি এসিও। কিন্তু তালা বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে সে ভবন।

টিকটিকিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মুকলেশুর রহমান বলেন, “আজ বলে নয়, সপ্তাহে দু’তিন দিনই আসেন তাঁরা। ওষুধ থাকলে রোগী দেখেন ঠিকাকর্মী আবাদুর।’’ তৃণমূল সভাপতি মুকলেশুর বলছেন, “স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এই দূরবস্থা নিয়ে কাকে না বলেছি? কেউ ফিরে তাকাননি। বছর দুয়েক ধরে মাতৃসদন চালু হওয়ার কথা শুনেই আসছি। প্রসূতিদের নিয়ে কী নাকাল হতে হয় পাটকেলডাঙার বাসিন্দাদের তা বলার নয়।”

সাগরদিঘির ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক আমিনা মরিয়ম জানান, ওষুধ নিতে নির্দিষ্ট দিনে হাজির হতে হয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীদের। তাঁরা আসেননি বলেই গৌরীপুরে ওষুধ পেতে সমস্যা হয়েছে। ওষুধ এসেছে, তাঁদের ডেকে পাঠিয়ে তা দেওয়া হবে। আর কোনও কর্মী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে না গেলে তাঁর বিরুদ্ধে নিশ্চয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঠিকাকর্মীর ওষুধ দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এমন কথা আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’ মাতৃসদন খোলার ব্যাপারে বলেন, ‘‘ঠিক হয়েছে জেলায় ক্রমান্বয়ে চালু করা হবে কয়েকটি ২৪ ঘণ্টার মাতৃসদন। গৌরীপুর আছে পঞ্চম স্থানে। তাই সময় লাগবে।”

ফার্মাসিস্টের সাফাই, ‘‘ওষুধ আনতে গিয়েছিলাম। তাই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে থাকতে পারিনি।’’ নার্সকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন