সাপের প্রাণই পণ গোলকের

গরমের শুরু থেকে বর্ষাকাল— এই সাপের উপদ্রব বেড়ে যায়। মাঠে-ঘাটে, বাড়ির মেঝেতে এমনকি, বিছানাতেও লুকিয়ে থাকে সাপ। ফলে, এই মরসুমে প্রতিদিনই গোলককে একাধিক জায়গায় ছুটতে হচ্ছে সাপ উদ্ধারের জন্য।

Advertisement

কল্লোল প্রামাণিক

করিমপুর শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৯ ০২:০৬
Share:

উদ্ধারকর্তা গোলক। —নিজস্ব চিত্র।

তিনি সাপুড়ে নন। সাপের খেলা দেখিয়ে পয়সা রোজগার করেন না। তবু সীমান্তে সাপের কথা উঠলে তাঁর নামটাই সর্বাগ্রে চলে আসে। তাঁরই কারণে সীমান্তের লোকজন সাপ নিয়ে বেশি সচেতন। সাপের দেখা পেলে পিটিয়ে না মেরে তাঁকেই ফোন করেন ডাকেন। তাঁরই লাগাতার প্রচারে সাপে ছোবল মারলে লোকজন ওঝার কাছে না গিয়ে ছুটছেন হাসপাতালে। তিনি করিমপুরের আনন্দপল্লির যুবক গোলক বিশ্বাস। লোকমুখে যিনি ‘সাপের বন্ধু’ নামে পরিচিত।

Advertisement

গরমের শুরু থেকে বর্ষাকাল— এই সাপের উপদ্রব বেড়ে যায়। মাঠে-ঘাটে, বাড়ির মেঝেতে এমনকি, বিছানাতেও লুকিয়ে থাকে সাপ। ফলে, এই মরসুমে প্রতিদিনই গোলককে একাধিক জায়গায় ছুটতে হচ্ছে সাপ উদ্ধারের জন্য। তাতে অবশ্য আলস্য নেই তাঁর। বরং এই কাজ করে তিনি খুশি। গোলক জানান, সাপ একটি ভীষণ ভিতু প্রাণী। তারা মূলত ভয় পেয়েই ছোবল মারে। সাপে ছোবল মারলে ‘অ্যান্টি ভেনাম’ দেওয়ার জন্য হাসপাতালেই নিয়ে যেতে হবে। সে কথা এখন অনেকে বুঝতে পেরেছেন। পরিসংখ্যান বলছে, গত কয়েক বছরে করিমপুর হাসপাতালে সাপে ছোবল মারা রোগী নিয়ে যাওয়ার সংখ্যা বেড়েছে।

গোলক জানান, প্রায় ছয় বছর ধরে সাপ নিয়ে সব মানুষদের সচেতন করার পাশাপাশি সাপ উদ্ধার করে চলেছেন গোলক। এখন মানুষের মধ্যে সচেতনতা এসেছে। তেহট্ট মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় সচেতন করার সেই পাঠ দিয়ে চলেছেন গোলক। বছর ছয়েক আগে থেকে তাঁরা গ্রামের ক্লাবে, পঞ্চায়েতে কিংবা স্কুলে গিয়ে ছাত্র ছাত্রীদের পাশাপাশি সকলকে সাপ সম্পর্কে বোঝানোর কাজ করছেন। আর তারই ফল মিলছে।

Advertisement

তাঁর কথায়, “এলাকার বহু মানুষের কাছে আমার ফোন নম্বর রয়েছে। প্রায় প্রতিদিন সাপ দেখতে পেয়ে নানা জায়গা থেকে আমায় জানান। আমি ছুটে গিয়ে সেই সাপ উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় ছেড়ে দিই। ফলে মানুষের মারে সাপের মৃত্যুও কমেছে। এমন হয় যে একইদিনে নানা চার-পাঁচটি সাপ উদ্ধার করতে হয়। সে দিন স্নান খাওয়া করার সময় থাকে না।”

তিনি জানান, সীমান্তে কালাচ ও খরিস সাপের উপস্থিতি বেশি। এশিয়ার সর্বাধিক ও খরিস সাপের থেকে ষোলো গুণ বেশি বিষধর কালাজ। বর্ষাকালে সব জায়গা জলে ভরে গেলে তারা উঁচু আশ্রয়ের খোঁজে লোকালয়ে হাজির হয়। স্বভাবের দিক থেকে খরিসের উল্টো চরিত্র কালাচ সাপের। কালাচ মানুষের কাছাকাছি থাকতে বেশি পছন্দ করে। বর্ষার বৃষ্টি হলেই কালাস ঘরে ঢুকে আশ্রয় বিছানা বা বালিশ, তোষকের নীচে আশ্রয় নেয়। দিনে চলাচল না করলেও রাতে এরা ভীষণ ভয়ঙ্কর। বেশির ভাগ সময়ে কালাচের কামড়ানোর কোনও চিহ্ন পাওয়া যায় না এবং জ্বালা যন্ত্রণা না থাকায় মানুষের মৃত্যু হয়। এই সময় সাপের ব্যাপারে মানুষের অনেক বেশি সতর্ক থাকা উচিত। যেমন, রাতে বিছানায় মশারি ব্যবহার করতে হবে। অন্ধকারে যাওয়ার সময় লাইট নিতে হবে এবং সাপে ছোবল মারলে দেরি না করে সরাসরি স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন