হাসপাতালে জখম সাদ্দাম শেখ। —নিজস্ব চিত্র
ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হতে না হতেই তেতে উঠেছে উঠেছে কান্দির রাজনীতি। ভোটের মুখে শুরু হয়েছে অস্ত্র মজুতের প্রক্রিয়া। ঙ্গ হিসেবে বোমা বাঁধতে মৃত্যু হল দু’যুবকের। ওই ঘটনায় জখম হয়েছে তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যের ছেলে-সহ দু’জন। সোমবার মাঝরাতে ভরতপুরের বিন্দারপুর গ্রামের ঘটনা। মৃত ওই দুই যুবকের নাম— বসির শেখ (৩০) ও সোনারুল শেখ (৩১)। বিন্দারপুর এলাকার গ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য তৃণমূলের মানোয়ার শেখের ছেলে সাদ্দাম শেখ জখম হয়েছেন। আজাদ শেখ নামে আরও এক যুবক এই ঘটনায় জখম হয়েছেন। বোমার আঘাতে আজাদের দুই হাতই উড়ে গিয়েছে। অপর জখম সাদ্দাম শেখ বর্ধমানের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে ওই ঘটনায় আরও কয়েকজন জখম হতে পারে বলে মনে করছেন জেলা পুলিশের পদস্থ কর্তারা। জেলার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, ‘‘কী কারণে বোমা বাঁধা হছিল পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে। প্রায় শ’খানের তাজা বোমা ও বোমা তৈরির মশলা উদ্ধার হয়েছে। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে দু’জনকে আটক করা হয়েছে।”
এই ঘটনায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘‘পড়শি রাজ্য থেকে বেআইনি অস্ত্র ঢুকছে। তৃণমূল নেতাদের বাড়িকে একের পর এক অস্ত্র কারখানার হদিস মিলছে। এ ব্যাপারে কমিশনকে পদক্ষেপ করতে হবে।’’ যদিও জেলা তৃণমূলের সভাপতি মান্নান হোসেন জানান, এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। এই ঘটনা স্রেফ পারিবারিক বিবাদের ফল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্বে সপ্তাহ খানেক আগেই ওই গ্রামে বোমবাজি হয়। সেই থেকেই বিন্দারপুরের পরিবেশ উত্তপ্ত ছিল। সেই থেকে গ্রামে পুলিশ প্রহারা রয়েছে। ওই সময় গ্রামের ছোটদের ক্রিকেট খেলা নিয়ে অশান্তি শুরু হয়। সেই অশান্তিতে জড়িয়ে পড়ে গ্রামের দুই বিবাদমান তৃণমূল গোষ্ঠীর লোকজন। পঞ্চায়েত সদস্য মানোয়ার শেখের অনুগামী আলম শেখ ও তার বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা তাহের শেখ ওই বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। সেই বিবাদ গড়ায় বোমাবাজি পর্যন্ত। ওই ঘটনায় মানোয়ার শেখের এক আত্মীয়ার জখম হন। তাঁর একটি পায়ে আঘাত লাগে। তিনি এখন কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
স্থানীয় বাসিন্দার একাংশ জানাচ্ছেন, ওই ঘটনার পর থেকেই মানোয়ার শেখ প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। এ দিন তার নেতৃত্বে বিন্দারপুরের পাশের গ্রাম স্বরডাঙার ফাঁকা মাঠে বোমা তৈরি করা হচ্ছিল। মাঝরাতে পুলিশের একটি টহলদারি ভ্যান ওই মাঠের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। দুষ্কৃতীরা পুলিশের গাড়ি দেখে তড়িঘরি বোমা ও মশলা লুকোনোর চেষ্টা করে। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে অসাবধানে কয়েকটি বোমা ফেটে যায়। বোমার আঘাতে বসির শেখ ও সোনারুল শেখ ঘটনাস্থলেই মারা যায়। দেহ দু’টি লোপাটের চেষ্টা করে মানোয়ার শেখের দলবল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সফল হয়নি। পুলিশের এক কর্তা জানাচ্ছেন, চলতি মাসের গোড়াতেই দলেরই নেতা রেজুয়ান শেখের অনুগামীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন মানোয়ার শেখের আত্মীয়রা। ওই ঘটনার পাল্টা নিতেই বোমা বাঁধা হচ্ছিল।
মৃত সোনারুল শেখের মা ফুরুনি বিবি ও কাকিমা তজিফা বিবি বলেন, “ছেলেকে মানোয়ার বোমা বাঁধার জন্য ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। তারপরই বোমা ফেটে ছেলে মারা গেল। দলের দুই নেতার দ্বন্দ্বে সোনারুলের প্রাণ গেল।’’ মৃত বসির শেখের স্ত্রী সোনালী বিবি জানান, দুপুরের খাওয়া-দাওয়া সেরে বার হয়। তারপর আর বাড়ি ফেরেনি। রেজুয়ানের লোকেরা তাঁর স্বামীকে বোমা মেরে খুন করেছে। তাঁর স্বামী বোমা বাঁধতে জানে না।
ভোটের মুখে এই ঘটনার ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে মরিয়া তৃণমূল স্থানীয় নেতৃত্ব। ভরতপুর-১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি নূর আলম বলেন, “ওই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বোমা বাঁধছিল।’’ তবে নূর আলম এরপরই নিজেই বলে ফেলেন, ‘‘মানোয়ার আমাদের দলের পঞ্চায়েত সদস্য ঠিকই, কিন্তু এটা একেবারে পারিবারিক বিবাদের জের।’’ আর ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি আব্দুল বারি বলেন, “ভোটের মুখে নিজেদের গোষ্ঠী দন্দ্বকে আড়াল করতে কংগ্রেসের ঘারে দোষ চাপাচ্ছে তৃণমূল। কিন্তু পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানেন কারা ওই দিন ফাঁকা মাঠে বোমা বাঁধছিল। তোলা আদায় নিয়ে ওই গ্রামের তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। তার জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে।’’ এ দিকে দিন দশেকের মধ্যে দু’বার বোমাবাজির ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। গোটা গ্রাম একেবারে পুরুষশূণ্য। স্থানীয় বাসিন্দারা এ নিয়ে ক্ষোভ চেপে রাখছেন না। তাঁরা কোনও রাখঢাক না রেখেই জানাচ্ছেন, শাসক দলের গোষ্ঠীকোন্দলের কারণে গোটা গ্রামের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।