ভোটের সকালেই রক্ত ঝরেছিল মুর্শিদাবাদে। সেই ঘটনার রেশ থিতিয়ে যাওয়ার আগেই ফের খুন হল এক যুবক, এ বার জেলা সদর বহরমপুরে।
তবে বহরমপুর লাগোয়া নবগ্রামের বাসিন্দা মাসারুল হোসেন ওরফে সুমন (২৬) খুনের কারণ স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছে। ওই ঘটনার পরে তৃণমূল সরাসরি কংগ্রেসকেই দায়ি করেছে। কংগ্রেস পাল্টা দলীয় কোন্দলের অভিযোগ তুলেছে। তবে, জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, রাজনীতি নয়, ঘটনাটা পুরনো শত্রুতার জেরে।’’
জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক দাসের দাবি, সুমন সম্পর্কে স্থানীয় তৃণমূল নেতা জালাল শেখের ছেলে অনুভব আহমেদের ভাই। শাসক দলের সঙ্গেই তাদের ওঠাবসা। শুক্রবার রাতে, অনুভবদের গোরাবাজারের বাড়িতেই বসেছিল ‘মদের আসর’। সেখানেই ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে বচসার জেরে গুলি চলে। মারা যায় সুমন। অশোক বলেন, ‘‘সুমনকে নিয়ে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে গিয়েছিল অনুভবেরা। এখন ঘটনাটা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’’ যা শুনে জালাল শেখ বলেন, ‘‘এখন দেখছি, মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি। নিজের বাড়ির চেয়ে পরের হেঁশেলের খবর কংগ্রেস বেশি রাখছে!’’
তবে, বহরমপুর থানার আইসি শৈলেনকুমার বিশ্বাস ঘটনার পরে প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও খুনের কারণ স্পষ্ট করতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘‘খুনের কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। পুলিশের তদন্ত চলছে।’’
ওই ঘটনায় একমাত্র সাক্ষী অনুভব জানাচ্ছে— শুক্রবার রাতে, তাঁদের বাড়িতে কেউ ছিল না। সুমন ও তিনি আড্ডা মারছিলেন। রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ সুমন নবগ্রামে ফিরে যেতে চাইলে তিনিও চেপে বসেন বাইকে। তিনি বলেন, ‘‘খাগড়াঘাট রেলগেট পেরিয়ে কলাবাগান মোড়ের কাছে কালভার্ট পার হওয়ার পরেই দেখি একটা বাইক নিয়ে দু’জন দাঁড়িয়ে। একটু এগোতেই আচমকা উল্টো দিক থেকে দু’জন মোটরবাইকে করে এসে খুব কাছ থেকে গুলি চালায়।’’
গুলি চালানোর সময়ে অনুভব সুমনের পিছনে মুখ লুকিয়ে ফেলেন বলে জানান। তিনি জানান, সুমনের কোথাও লেগেছে তা প্রথমে বুঝতেই পারেননি তাঁরা। তাঁর কথায়,
‘‘তবে কিছু ক্ষণের মধ্যেই দেখি ওর জামা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। মোটরবাইক ঘুরিয়ে বহরমপুরে আসি।
খাগড়া রেলগেটের কাছে এসে সুমন বলে, তাঁর মাথা ঝিমঝিম করছে।
তাই সোজা গোরবাজারের বাড়িতেই ফিরে আসি।’’ পরে এক আত্মীয়কে ডেকে তারা সুমনকে নিয়ে যান হাসপাতালে।
সুমনকে সরাসরি হাসপাতালে নিয়ে না গিয়ে গোরাবাজারের বাড়িতে যাওয়া হল কেন? চিকিৎসকেরা জানান, সুমনের গায়ে যে সপ্লিন্টার লেগেছিল তা বোমার। অথচ অনুভবেরা পুলিশকে বোমার কথা এক বারও বলেনি কেন? গোরাবাজারের একাধিক বাসিন্দাও পুলিশকে জানান, শুক্রবার রাতে তাঁরা জালালের বাড়ির দিক থেকে বেশ কয়েকটি বোমার আওয়াজ পেয়েছিলেন। এ সব প্রশ্নের কোনও উত্তর পুলিশের কাছে নেই।