জালালখালিতে কৃষ্ণনগর-বাদকুল্লা রাজ্য সড়ক অবরোধ।—নিজস্ব চিত্র
চেনা ছবি, আবার কিঞ্চিৎ অচেনাও।
সারদা কেলেঙ্কারি জাল গোটানোর সময়ে সিবিআইয়ের সুতোয় একে একে জড়িয়ে গিয়েছিলেন নেতা-মন্ত্রীদের অনেকেই। তবে, সে বার, সিজিও কমপ্লেক্সের সামনে দিন দুয়েকের নিতান্তই আটপৌরে বিক্ষোভ ছাড়া শাসক দলকে রাস্তায় নামতে দেখা যায়নি।
ছবিটা বেমালুম বদলে গিয়েছে এ বার। রোজভ্যালির সুতো গোটানো শুরু হতেই কৃষ্ণনগরের সাংসদ তাপস পাল জড়িয়ে গিয়েছেন। দলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ও গ্রেফতার হয়ে যাওয়ার পরে আর বাঁধ মানেনি। উত্তাল হয়েছে রাজ্য।
মঙ্গলবার সন্ধেয়, পুলিশের সামনেই কলকাতায় আক্রান্ত হয়েছে বিজেপি-র সদর দফতর। চড়-চাপটা, ঘুঁষি-লাথির সঙ্গে কোথায় বাঁশ পেটানোর অভিযোগ এসেছে বিজেপি কর্মীদের, কোথাও বা লাঠির গুঁতোয় গুঁড়িয়ে গিয়েছে দলের কার্যলয়।
বুধবার, রাজ্য জুড়ে দলনেত্রী আন্দোলনের ডাক দেওয়ায়, তৃণমূলের সেই আস্ফালনের মাত্রা চড়েছে। কোথাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবরোধ করা হয়েছে জাতীয় সড়ক। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে— আতঙ্কিত মানুষ পথে নেমেছেন কম, স্কুল কলেজে হাজিরাও কমেছে যথেষ্ট। মুর্শিদাবাদ কিংবা নদিয়া, দু’জেলাতেই ছবিটা একইরকম।
তবে, সেই আন্দোলনের প্রথম সারিতে তাঁরা নেই কেন? দু’জেলায় যাঁরা তৃণমূলের মুখ বলে পরিচিত, তাঁরা গেলেন কোথায়?
দলের অন্দরেই তাই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, তাহলে কি সিবিআইয়ের নজরে পড়ে যাবেন বলে একটু আড়ালেই বেছে নিলেন তাঁরা?
যা দেখে, বাম-কংগ্রেস কিংবা বিজেপি এক সুরে গাইছে— ‘সিবিআইয়ের জুজু দেখেছেন ওঁরা!’
রোজভ্যালির সুতোয় জড়িয়ে পড়ার সম্ভাব্য তালিকাটা যে বেশ দীর্ঘ, ইতিমধ্যেই তা নিয়ে কানাঘুষো শুরু হয়ে গিয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তালিকায় তৃণমূলের প্রথম সারির জনা কয়েক নেতা ছাড়াও তৃণমূল ঘনিষ্ঠ রূপোলি পর্দার নামেরও ছড়াছড়ি। রয়েছে, তৃমূলে যোগ দিয়ে মন্ত্রী হওয়া অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মী থেকে আমলার নামও। জেলা বিজেপি-র দাবি, সেই তালিকায় রয়েছে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ, দুই জেলা তৃণমূলের বেশ কয়েক জন নেতার নামও।
তাঁদের দেখা গেল না কি সে কারনেই। উত্তরটা অবশ্য মেলেনি। তবে নদিয়া জেলা তৃণমূলের এক তাবড় নেতা মুচকি হাসছেন, ‘‘আমি ওই তালিকায় নেই সেটুকু জানি। সে জন্যই আমি আন্দোলনে রাস্তায়, আর ওঁরা বাড়িতে!’’ আর মুর্শিদাবাদের এক যুব নেতা বলছেন, ‘‘সবাই জানেন কে জড়িত আর কে নন, সে কারণেই যাঁরা ভয় পাচ্ছেন তাঁরা আন্দোলন এড়িয়ে গিয়েছেন।’’
বহরমপুর শহরে মিছিল একটা বেরিয়েছিল, পুরোভাগে ছিলেন সদ্য দলত্যাগী পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য, অরিত মজুমদার-সহ কয়েক জন। তবে ওইটুকুই। দলের এক নেতাই প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘জানি না দিদির নির্দেশ সত্ত্বেও ওঁরা কেন এলেন না।’’
জনজীবন বিপর্যস্ত করে বহরমপুর-জলঙ্গি রাজ্য সড়কের উপরে ডোমকল এসডিও অফিসে মোড়ে পথ অবরোধ করেন কয়েকশো কর্মী-সমর্থক। থমকে যাওয়া পতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা থমকে থেকেছে বাস। সে ভোগান্তি হয়েছে, ইসলামপুর, জলঙ্গি, রানিনগরেও। ভাকুড়ি মোড়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক রুখে ভোগান্তি ছড়িয়েছে অন্যত্রও। বহরমপুরের এক পুরনো তৃণমূল নেতা বলছেন, ‘‘কিন্তু তাঁরা কোথায়, দলের প্রথম সারির নেতারা জেলায় এলে যাঁরা সবার আগে হাঁটেন?’’
মুর্শিদাবাদের জেলা তৃণমূলের সভাপতি মান্নান হোসেনের স্বজন বিয়োগ হয়েছে, পথে নামেননি তিনি।
আর, নদিয়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত ছিলেন ‘দলীয় কাজে’ ব্যস্ত। কিন্তু বাকিরা? নাঃ, উত্তর মেলেনি।