কামরা প্রায় খালি। কিন্তু দেরি করে আসার জন্য চলন্ত রানাঘাট-শিয়ালদহ লোকালে পড়িমড়ি করে উঠে পড়েছিলেন আনুলিয়ার সুভাষ সরকার। কামরার ভিতরে এক ঝলক তাকিয়ে মনে হয়েছিল, তিনি বুঝি ভুল করে ‘ভেন্ডার’ কামরায় উঠে পড়েছেন।
ভুল অবশ্য ভাঙে অচিরেই। নাহ্, ভেন্ডার নয়, তিনি যাত্রী কামরাতেই উঠেছেন। তবে কামরার মেঝেয় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জঞ্জালের স্তূপ দেখে তাঁর এমনটাই মনে হয়েছিল।
লোকাল ট্রেনের কামরায় জঞ্জাল নিয়ে অভিযোগ বহু দিনের। বার বার অভিযোগে কাজ না হওয়ায় শনিবার ট্রেন থেকে নেমে রানাঘাটে অবরোধ শুরু করেন যাত্রীরা। রেল পুলিশের অনুরোধেও সে অবরোধ ওঠেনি। শেষ পর্যন্ত সাফাই কর্মীদের ডেকে ট্রেনের কামরা পরিষ্কার করলে অবরোধ ওঠে। ট্রেন ছাড়ে।
শিয়ালদহ থেকে কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, কল্যাণী সীমান্ত, গেদে, শান্তিপুর, সব লোকালেই জঞ্জাল-চিত্রটা একই রকমের। তবে শিয়ালদহ বা কলকাতা থেকে লালগোলাগামী প্যাসেঞ্জার ট্রেনের ছবিটা এর থেকে কিছুটা আলাদা বলে জানাচ্ছেন যাত্রীরা। তবে ডিএমইউ বা ইএমইউ ট্রেনে কিন্তু জঞ্জাল-চিত্র এখনও বদলায়নি। এই বিষয় নিয়ে অভিযোগ-আন্দোলন হলেও কোনও সুরাহা হয়নি।
রানাঘাটের রেলযাত্রী দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, “সকালে ট্রেন ধরতে এসে রোজই দেখতে হয় কামরার চতুর্দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বাদামের খোলা, ফলের খোসা, খাবারের টুকরো, জল। সেগুলি পচে দুর্গন্ধ বেরচ্ছে।’’ তিনি জানান, যাত্রীদের নাকে রুমাল দিয়ে বসে থাকতে হয়। আর এক যাত্রী জয়দীপ গোস্বামী বলেন, “এমনও দিন গিয়েছে আমরা নিজেরাই সাফাই কর্মীদের খুঁজে নিয়ে এসেছি। সেই সময় অন্য কাজে ব্যস্ত থাকলেও তাদের অনুরোধ করে ট্রেনের কামরা সাফ করাতে হয়েছে।’’ মূলত রানাঘাট-শিয়ালদহ লোকালেই এই ঘটনা বেশি ঘটে।
পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র অবশ্য জানান, ট্রেন কারশেড থেকে আসার আগে তা নিয়মিত পরিষ্কার হয়। পরে সেগুলি নোংরা হয়। তাঁর বক্তব্য যে ভুল নয়, তার সমর্থনও মিলেছে যাত্রীদের কথায়। কৃষ্ণনগর-বেলঘরিয়ার নিয়মিত যাত্রী সুচন্দ্রা সরকার। তিনি বলেন, ‘‘ট্রেনের কামরা যে নোংরা থাকে, সেটা ঠিকই। তাতে যাতায়াতে বিস্তর সমস্যা হয়।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কামরা তো আর এমনি এমনি নোংরা হয় না। আমাদের মতোই যাত্রীরাই তো তা করেন। যাত্রীরা আর কবে সচেতন হবেন?’’
কল্যাণী সীমান্ত লোকালের যাত্রী জয়ন্ত বিশ্বাস জানাচ্ছেন, স্বল্প দূরত্বের ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছনোর অনেক আগে থেকেই কামরা খালি হতে শুরু করে। সেই সময় যাত্রীরা ট্রেনের মধ্যেই খাওয়া দাওয়া করে সব ট্রেনের মধ্যেই ফেলেন। এমনকী হাতও ধোওয়া হয় সেখানেই।
এ ভাবে দিনের পর দিন চলতে চলতে কামরা জঞ্জালের স্তুপে পরিণত হয়। তবে কামরা যে নিয়মিত সাফ হয় না সেটাও ঠিক। রেলের এক কর্তা জানাচ্ছেন, প্রতিদিন ট্রেন সাফ করা সম্ভব নয়। সেই জন্য যাত্রীদের শুভ বুদ্ধির উপরেই কিছুটা ছাড়তে হচ্ছে।
বহরমপুর প্রোগ্রেসিভ যাত্রী সমিতির সদস্যদের দাবি, মূলত ইএমইউ এবং ডিএমইউ ট্রেনগুলিতে এই ধরনের নোংরা আবর্জনা থাকে। কলকাতা বা শিয়ালদহ থেকে ট্রেনগুলি লালগোলা আসার পর পরিষ্কার করা হয়না। অপরিষ্কার অবস্থাতেই লালগোলা থেকে সেই ট্রেন ছেড়ে দেয়। যার ফলে কামরায় নোংরার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সংগঠনের সভাপতি সোনালি গুপ্ত বলছেন, “পরিষ্কার না করেই ট্রেন ছাড়ায় আমরা বেশ কয়েক বার প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু দু’-এক দিন পরিষ্কার হয়। তার পর আবার যে কে সেই।’’
(সহ প্রতিবেদন: সৌমিত্র সিকদার)