‘হোম’ চান রূপান্তরকামীরাও

তাঁর দাবি, এই মুহূর্তে তাঁর হরমোন থেরাপি চলছে। পরবর্তী সময়ে অস্ত্রোপচার করাবেন। 

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৩৩
Share:

নিজেকে ছোট থেকে মেয়ে ভাবতেন। তখন থেকে চালচলনেও তেমন ভাবই প্রকাশ পেত। ২০১১ সালের পরে নিজেকে নারী হিসেবে মেলে ধরার চেষ্টা করেন। আর তখন থেকে বাড়িতে মানসিক অত্যাচার শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে মানসিক অত্যাচারের মাত্রা বাড়তে থাকে। এক সময় শারীরিক অত্যাচারও শুরু হয়। হরমোন থেরাপি নিতে শুরু করলে অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায়। বাধ্য হয়ে সাত মাস আগে ঘর ছাড়েন মুর্শিদাবাদের বছর চব্বিশের এক রূপান্তরকামী।

Advertisement

ওই রূপান্তরকামী মুর্শিদাবাদের বাড়ি ছেড়ে পড়শি জেলা নদিয়ায় এক বন্ধুর কাছে আশ্রয় নিয়েছেন। ঘরছাড়া ওই রূপান্তরকামী বলছেন, “ প্রথম থেকে মনে নারী, শরীরে পুরুষ ছিলাম। বয়স একটু বাড়তেই নিজেকে নারী হিসেবে মেলে ধরি। আর তখন থেকে পরিবার থেকে প্রথমে মানসিক ভাবে, পরে শারিরীক অত্যাচারও শুরু হয়। তাই ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। আমার মত অনেক রূপান্তরকামী ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তাই আমাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করলে উপকার হয়।”

তাঁর দাবি, এই মুহূর্তে তাঁর হরমোন থেরাপি চলছে। পরবর্তী সময়ে অস্ত্রোপচার করাবেন।

Advertisement

বহরমপুরের শহরের আরও এক রূপান্তরকামী পারিবারিক সমস্যার জেরে গত বছর অক্টোবর মাসে ঘর ছেড়েছেন। ২১ বছর বয়সী ওই রূপান্তরকামী মুর্শিদাবাদ ছেড়ে উত্তরপ্রদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি জানাচ্ছেন, ছোট থেকে তিনিও নিজেকে মেয়ে বলেই মনে করতেন। কিন্তু তার প্রকাশ পায় ২০১৫ সালে। তাঁর নারীসত্তা প্রকাশ পাওয়ার পর থেকেই বাড়িতে সমস্যা শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত ঘর ছাড়তে হয় তাঁকেও। সেখানে নাচকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘গত মে মাসে অস্ত্রোপচার করে পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তরিত হয়েছি। আমার মত অনেকে নানা কারণে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। ঘর ছেড়ে তাঁরা অনিশ্চিত জীবন নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। নাচ-গান করে কোনও রকমে নিজের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করছেন। তাই বহরমপুরে থাকার জন্য হোমের ব্যবস্থা করলে উপকার হয়।’’

আর এই ধরণের রূপান্তরকামীদের জন্য সরকারি হোমের দাবি জানাল রূপান্তরকামীদের সংস্থা ‘মধ্য বাংলার সংগ্রাম’। সংস্থার সম্পাদক অরুনাভ নাথ সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের জেলাশাসককে চিঠি দিয়ে রূপান্তরকামীদের হোমের দাবি জানিয়েছেন।

জেলাশাসক পি উলাগানাথন বলছেন, “ওঁদের আবেদন পেয়েছি। হোমের বিষয়ে রাজ্যে প্রস্তাব পাঠাব। রাজ্য যা নির্দেশ দেবে সেই মত কাজ হবে।”

অরুণাভ জেলাশাসককে চিঠিতে জানিয়েছেন, নানা কারণে অনেক রূপান্তরকামীকে ঘর ছাড়তে হয়েছে। তাই রূপান্তরকামীদের আশ্রয়ের জন্য একটি হোম প্রয়োজন। এছাড়াও রূপান্তরকামীদের হাতের কাজের প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

অরুণাভর দাবি, ‘‘বহরমপুর পুরসভার কাছে আমরা রূপান্তরকামীদের জন্য আলাদা একটি শৌচালয়ের দাবি জানিয়েছিলাম। বহরমপুর পুরসভা আমাদের জন্য পৃথক শৌচালয় তৈরির কাজও শুরু করেছে। আমরা আশাবাদী জেলা প্রশাসন আমাদের আশ্রয়ের জন্যও একটি হোমের ব্যবস্থা করবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন