এই সেই সেতু। —নিজস্ব চিত্র
বছর সাতেক আগে ভেঙে পড়েছিল সেতু। নদীতে জল কম থাকায় বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিল ডোমকল। কিন্তু তাতেও হুঁশ ফেরেনি প্রশাসনের। পরে পঞ্চায়েতের দৌলতে ডোমকল মিনি বাজার লাগোয়া ওই সেতুতে নাম-কা-ওয়াস্তে সংস্কার হলেও চলার উপযুক্ত হয়ে ওঠেনি সেটি। কাঠের সেতুতে এখন প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয়। বর্ষার মরসুমে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। সেতু সারাতে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে দাবি স্থানীয় মানুষের।
ডোমকল শহরের দু’প্রান্তকে জুড়েছে এক পাকাসেতু। সেটিও বেহাল ছিল দীর্ঘদিন ধরে। মাস দুয়েক আগে সংস্কারের কাজ শুরু হয়। ওই সেতুটি ছাড়া বিকল্প রাস্তা না থাকায় প্রায় এক যুগ আগে কাঠের ওই সেটুটি তৈরি হয়। মোটরবাইক, রিকশাও চলত সেতুর উপর দিয়ে। ফলে পাকাসেতুতে ভিড় জমলে কাঠের সেতুটি ব্যবহার করতেন লোকজন। কিন্তু ভেঙে পড়ার পর আর সে উপায় নেই। স্থানীয় বাসিন্দা সেলিমুর রহমান বলেন, ‘‘ডোমকলের কলেবর অনেক বেড়েছে। জনসংখ্যার ভিড়ে এমনিতেই দিনের ব্যস্ত সময়ে প্রায় আটকে পড়েন মানুষ। হেঁটে চলার উপায়ও থাকে না। ফলে কাঠের সেতুটা থাকলে যাতায়াতের সুবিধে হত।’’
বাম আমলে সেতুটিকে পাকা করা হবে বলেও আওয়াজ উঠেছিল। হয়নি। এমনকী এই সেতু লাগোয়া এলাকায় সব্জি, মাছ-মাংসের বাজার গড়ার জন্য মোটা টাকায় জমিও লিজ নিয়েছিল গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতি। কিন্তু সেটিও বাস্তবায়িত হয়নি। তৎকালীন পঞ্চায়েত সমিতির এক কর্মাধ্যক্ষের কথায়, ‘‘ওই সেতুকে ঘিরে বেশ কিছু পরিকল্পনা ছিল। কিছুটা হটকারী ওই সিদ্ধান্তে সমিতির আর্থিক ক্ষতিও হয়েছে। একটি বিতর্কিত জমিতে বাজার তৈরি করে, জমি লিজ নিয়ে আর কিছুই হয়নি।’’
সেতু তৈরি হলে শুধু যাতায়াত নয়, ডোমকল বাজারের দীর্ঘদিনের একটি সমস্যাও মিটত বলে মনে করেন ডোমকলের বাসীন্দা তৌফিক আনোয়ার। তিনি জানান, সব্জি বা মাছের জন্য আলাদা কোনও বাজার নেই। বড় রাস্তায় বসতে হয় ব্যবসায়ীদের। ফলে রাস্তায় চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে। প্রচুর নোংরা জমে। বর্ষায় সে সব পচে গন্ধ ছড়ায়। ওই সেতু হলে অনায়াসেই নদীর ওপারে সব্জি বা মাছ-আনাজ সামগ্রীর বাজার তৈরি করা যেত। উপকৃত হতেন ব্যাবসায়ীরাও। ডোমকল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক আফাজুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘‘রাস্তায় কোনও বিপদ ঘটলেও যাতায়াত করা কঠিন হয়ে পড়ে। আমরা চাই দ্রুত ওই সেতুটি পাকা করা হোক।’’
শুধু ব্যবসা নয়, ডোমকল ভবতারণ স্কুলের অনেক ছাত্রও ওই সেতু দিয়ে যাতায়াত করে। রাস্তা কম এবং যানজটের কথা ভেবে বয়স্ক মানুষ ওই রাস্তা ধরেন। স্থানীয় বাসিন্দা আখতার আলির কথায়, ‘‘কাঠের পাটাতন উড়ে গিয়েছে আগেই। পঞ্চায়েত বাঁশ দিয়ে কাঠ আটকে রাখলেও গোটাটাই নড়বড়ে। ফলে যে কোনও সময় বিপদ ঘটতে পারে ওই সেতুতে।’’ ছাত্রছাত্রীদের দাবি, মূল রাস্তা ঘুরতে গেলে অনেক পথ মাড়াতে হয়। তা ছাড়া প্রচুর গাড়িঘোড়া চলে সেই রাস্তায়। ফলে ঝুঁকি থাকলেও তারা এই সেতু দিয়ে পারাপার করে।
পঞ্চায়েতের দাবি, সামান্য ক্ষমতায় ওই সেতুর কাজ তাদের পক্ষে করা সম্ভব নয়। তবে মহকুমা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, পুরসভার প্রথম কয়েকটি পরিকল্পনার মধ্যে আছে এই সেতুর সংস্কার বা নতুন একটি সেতু তৈরি।
এখন দেখার নিবার্চনের পরে প্রশাসন প্রতিশ্রুতি রাখে কিনা।