গ্রাম ঘুরলেন জেলাশাসক

বাড়িতে প্রসব, বাড়ছে উদ্বেগ

মুর্শিদাবাদের সুতির উমরাপুর কিন্তু সে কথা বলছে না। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে না পারায় বাড়িতে প্রসব করতে গিয়ে সাহাজাদপুরে ১৭ ডিসেম্বর রাতে রুনা লাইলা নামে এক প্রসূতি মারা যান। বাঁচানো যায়নি সদ্যোজাতকেও।

Advertisement

বিমান হাজরা

সুতি শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:১৭
Share:

প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব নিয়ে ঢাকঢোল পেটানো হচ্ছে বহু দিন থেকেই। স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, এ নিয়ে নাগাড়ে তারা প্রচার করছে। সচেতনতা শিবির করা হচ্ছে প্রত্যন্ত গ্রামেও। কিন্তু গাঁ-গঞ্জ কি সত্যিই সচেতন হচ্ছে?

Advertisement

মুর্শিদাবাদের সুতির উমরাপুর কিন্তু সে কথা বলছে না। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে না পারায় বাড়িতে প্রসব করতে গিয়ে সাহাজাদপুরে ১৭ ডিসেম্বর রাতে রুনা লাইলা নামে এক প্রসূতি মারা যান। বাঁচানো যায়নি সদ্যোজাতকেও।

সেই ঘটনার পরে ওই এলাকায় স্বাস্থ্য পরিস্থিতি দেখতে গিয়ে গ্রামবাসীদের একাধিক অভিযোগ শুনতে হয় জেলাশাসক পি উলগানাথনকে। ঘন্টা দু’য়েক ধরে তিনি উমরাপুর, বাহাগলপুর, ও বাউরিপুনি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঘুরে কথা বলেন স্থানীয় লোকজনের সঙ্গেও।

Advertisement

সরকারি সমীক্ষা থেকে জানা যাচ্ছে, গত বছর নভেম্বর পর্যন্ত উমরাপুরের চারটি গ্রামে বাড়িতে প্রসবের সংখ্যা ৩৭২। বহুতালি গ্রামে অক্টোবর মাসে ৫৫ জন প্রসূতি বা়ড়িতেই সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। হারোয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার ৬৬ শতাংশেরও নীচে। গত দু’মাসে বাড়িতে প্রসবের পরে ১০ জন সদ্যোজাত মারা গিয়েছে।

এমন ঘটনায় রীতিমতো উদ্বিগ্ন জেলাশাসকও। তিনি জানিয়েছেন, চিকিৎসা-পরিকাঠামোর ঘাটতি, বেহাল রাস্তা ও সচেতনতার অভাব—মূলত এই তিনটি কারণে ওই এলাকায় এমন পরিস্থিতি। অনেক ক্ষেত্রেই মহিলারা হাসপাতালে যেতে চান না। তাঁদের সে ভাবে বোঝানোও হয় না।

প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার বাড়াতে তড়িঘড়ি কয়েকটি জরুরি পদক্ষেপ করার কথা ঘোষণা করেছেন জেলাশাসক। তিনি জানান, উমরাপুরে একটি মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাব যাতে খোলা যায় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়নের প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে রাজ্য সরকারের কাছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য হাল ফেরানো হবে রাস্তার। প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব সম্পর্কে সচেতনতার ক্ষেত্রে আরও জোর দেওয়া হবে। উমরাপুরের তিনটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে তিনটি অ্যাম্বুল্যান্সও দেওয়া হবে।

গ্রামের লোকজনের অভিযোগ, আদৌ এ সব হবে কি হবে না, সে কথা ভবিষ্যৎ বলবে। কিন্তু প্রশাসনের কর্তাদের যে দেরিতে হলেও টনক নড়েছে, গাঁয়ে এসেছেন খোদ জেলাশাসক, এটাই ঢের। উমরাপুরের পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমুলের রাকিবুল শেখ জানান, প্রত্যন্ত এই এলাকায় শিক্ষার হার কম। স্বাস্থ্য পরিষেবাও অত্যন্ত দুর্বল। মহেশাইল ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ২৫ কিলোমিটার দূরে। রাস্তা বেহাল। ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ফোন করে নিশ্চয়যান আসার আগেই বাড়িতেই প্রসব হয়ে যায় বহু প্রসূতির। তবে সবার আগে এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা বাড়ানো দরকার।

স্থানীয় ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা কবুল করছেন, ‘‘বাড়িতে প্রসবের জন্য শুধু লোকজনের সচেতনতার অভাবকে দায়ী করা ঠিক নয়। তাঁদের সচেতন করার দায় কাদের? তাছাড়া সামগ্রিক ভাবে এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতি ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা না বাড়ালে এ সমস্যা মিটবে না।’’

সুতি ২ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌমিত্র শাসমলও মানছেন, ‘‘যেখানে ছ’হাজার জনসংখ্যা পিছু একটি করে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকা দরকার, সেখানে উমরাপুরে ২০ হাজার জনসংখ্যা পিছু একটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। স্বাস্থ্য ও আশা কর্মীর সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন