কখন জমাট বাঁধবে রক্ত, হয় না পরীক্ষা

কল্যাণী জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালই নদিয়ার এক মাত্র মেডিক্যাল কলেজ। রোগীর চাপে সব সময়ে সরগরম। শুধু নদিয়া তো নয়, পাশের মুর্শিদাবাদ, হুগলি, বর্ধমান, উত্তর ২৪ পরগনার স্টেট জেনারেল বা জেলা হাসপাতাল থেকে রেফার হওয়া রোগীর ভিড় লেগেই থাকে। কিন্তু সেখানেই কি না ছোট একটা রক্ত পরীক্ষার সুবিধা মেলে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কল্যাণী শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৮ ০৭:০০
Share:

প্রতীকী ছবি।

বড় হাসপাতাল। নিয়মিত অস্ত্রোপচার হয়। অথচ রক্ত জমাট বাঁধতে কত সময় লাগে, তা পরীক্ষা করার ব্যবস্থাই নেই।

Advertisement

কল্যাণী জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালই নদিয়ার এক মাত্র মেডিক্যাল কলেজ। রোগীর চাপে সব সময়ে সরগরম। শুধু নদিয়া তো নয়, পাশের মুর্শিদাবাদ, হুগলি, বর্ধমান, উত্তর ২৪ পরগনার স্টেট জেনারেল বা জেলা হাসপাতাল থেকে রেফার হওয়া রোগীর ভিড় লেগেই থাকে। কিন্তু সেখানেই কি না ছোট একটা রক্ত পরীক্ষার সুবিধা মেলে না।

চিকিৎসকেরা জানান, জরুরি ভিত্তিতে বা দিনক্ষণ বেঁধে অস্ত্রোপচারের আগেও বেশ কিছু পরীক্ষা করাতে হয় রোগীদের। রক্তে শর্করা, ইএসআর-এর মাত্রা পরীক্ষা করতে হয়। তেমনই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা ব্লিডিং টাইম-ক্লটিং টাইম (বিটিসিটি), যে পরীক্ষায় জানা যায় অস্ত্রোপচারের পর কতক্ষণে রক্ত জমাট বাধবে। রক্তের ১৩টি ফ্যাক্টর নির্ণয় করা হয় এই পরীক্ষার মাধ্যমে। এই পরীক্ষা না হলে সাধারণত কোনও চিকিৎসকই অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি নেন না। কারণ, কাটা-ছেঁড়ার পরে রক্ত জমাট না বাঁধলে বা দেরি হলে রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে।

Advertisement

রোগীর বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, বহুদিন ধরেই ওই পরীক্ষা হচ্ছে না এই মেডিক্যাল কলেজে। দিন কয়েক আগে সাবিনা মালিথ্যা নামে এক মহিলা দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা থেকে কল্যাণীতে তাঁর আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে এনে দেখা যায়, তাঁর মাথার উপরে একটি টিউমারটা দ্রুত আড়ে-বহরে বাড়ছে। আত্মীয়দের পরামর্শে তিনি যান হাসপাতালে। সার্জারি বিভাগের এক চিকিৎসক তড়িঘড়ি তাঁর অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে তার আগে কিছু রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে বলেও জানান। এতেই বাধে বিপত্তি। বাকি সব পরীক্ষা হলেও বিটি-সিটি পরীক্ষা করানো যায়নি। অগত্যা ওই গরিব মহিলাকে বাইরে থেকে শ’দুয়েক টাকা খরচ করে বাইরে থেকে ওই
পরীক্ষা করান।

ওই রোগিণীর প্রশ্ন, সরকার বলা সত্ত্বেও মেডিক্যাল কলেজে নিখরচায় সাধারণ পরীক্ষা করানো যাচ্ছে না কেন? ওই হাসপাতালে প্রতি দিন নাক-কান-গলা, হাড়, সন্তান প্রসব ও সাধারণ অস্ত্রোপচার মিলিয়ে অন্তত ২৫টি অস্ত্রোপচার হয়। দিন কয়েক আগেই চোখের অস্ত্রোপচার হয়েছে ধানতলার রাহুল মণ্ডলের। কিন্তু রক্ত জমাট বাঁধার সময় জানার পরীক্ষা বাইরে থেকেই করাতে হয়েছে।

চিকিতসকেরা জানাচ্ছেন, কাটা-ছেঁড়ার মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই রক্ত জমাট বাঁধার কথা। তার চেয়ে দেরি হলে সমস্যা হয়। ফলে এই পরীক্ষা করা জরুরি। কিন্তু কেন তা হচ্ছে না? হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই পরীক্ষার জন্য রক্ত টানার পরে তা রাখা হয় ক্যাপিলারি টিউবে। মাস দেড়েক ধরে সেই টিউবের জোগান নেই। তাই এই সমস্যা হচ্ছে। বিভাগের এক কর্মীর দাবি, তাঁরা একাধিক বার সুপারকে জানিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। হাসপাতালের সুপার নিলয় সিংহ অবশ্য জানান, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখছি। প্রয়োজনে পদক্ষেপ করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন