শোকার্ত: ইসলামপুরের পমাইপুরে। নিজস্ব চিত্র
খেলতে খেলতে ছোটদের মধ্যে ঝগ়ড়া। সেই সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে বড়দের গণ্ডগোল। এবং তার জেরে খুন হলেন নজরুল ইসলাম (৪০) নামে এক অভিভাবক। রবিবার রাতে ইসলামপুর গ্রামের পমাইপুর গ্রামের ঘটনা। পুলিশ ওই ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতারও করেছে।
তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে ডোমকল মহকুমায় খুন এই প্রথম নয়। বছর কয়েক আগে শম্ভুনগরে বেড়া টপকে মুরগি চলে গিয়েছিল পড়শির বাড়িতে। সেখানে তাড়া খেয়ে পালাতে গিয়ে মুরগির পায়ে চোট লাগে। সেই নিয়ে তুমুল গণ্ডগোল এবং খুন। ইসলামপুর থানার নসিপুরেও এক বাড়ির মুরগি গিয়ে ডিম পেড়েছিল পাশের বাড়ির গোয়ালঘরে। তা নিয়েও বাধে তুলকালাম। শেষতক খুন।
কুপিলা গ্রামে আবার জমির আলে পড়া এক সজনে গাছের দখল নেওয়াকে কেন্দ্র করে খুন হন এক প্রৌঢ়। বিশ্বাসপাড়ায় নলকূপের জল কোন দিক দিয়ে যাবে তা নিয়েও গণ্ডগোলের জেরে খুনের ঘটনা ঘটে। প্রতিবেশী দুই শিশুর খুনসুটি থেকে বড়দের খুনোখুনি? তেমন নজিরও আছে। দীর্ঘ সেই তালিকায় শেষ সংযোজন পমাইপুর।
কী ঘটেছিল ওই গ্রামে?
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়ির সামনে মোবাইলে গেম খেলছিল নজরুলের বছর তেরোর মেয়ে। অভিযোগ, পড়শি দুই নাবালক খেলতে খেলতে তাকে নানা ভাবে বিরক্ত করছিল। বাড়িতে গিয়ে বাবার কাছে মেয়েটি নালিশ জানায়। সব শুনে নজরুল ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলেন পড়শি হানিফ শেখের বাড়িতে। সেখানেই বচসা বাধে।
অভিযোগ, বচসার মধ্যেই আচমকা নজরুলের উপরে চড়াও হানিফ শেখ ও তার আত্মীয়েরা। বাঁশ দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় নজরুলকে। রক্তাক্ত অবস্থায় ঘটনাস্থলে লুটিয়ে পড়েন ওই যুবক। প্রথমে তাঁকে ইসলামপুর গ্রামীণ হাসপাতাল ও পরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় সোমবার ভোরে তাঁকে কলকাতা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু গাড়ি যখন বারাসাত এলাকায়, মারা যান নজরুল। ঘটনার পরেই হানিফ-সহ তার আত্মীয়দের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। হানিফ ও তার ভাই আব্দুল মান্নান শেখকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বাকিরা পলাতক।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, নজরুল ও হানিফ দু’জনেই চাষআবাদ করতেন। এলাকায় তাদের কোনও বদনামও নেই। কিন্তু সামান্য একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে কী ভাবে এমন ঘটে গেল তা ভাবতে পারছেন না কেউই। বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে একেবারে চুপ মেরে গিয়েছে মেয়ে। কোনও রকমে সে বলে, ‘‘ওদের ছেলেরা দোষ করল। আবার প্রতিবাদ করাতে ওরাই আব্বাকেই মেরে ফেলল!’’
নজরুলের স্ত্রী সাজেরা বেওয়ার অভিযোগ, ‘‘ছেলে দু’টো মেয়েটাকে নাগাড়ে বিরক্ত করছিল। ঘরে ফিরে মেয়ে সব কথা ওর আব্বাকে বলে। লোকটা হানিফের বাড়িতে গিয়ে সে কথা জানাতেই ওরা সবাই মিলে লোকটাকে শেষ করে দিল গো। ডোমকলের এসডিপিও মাকসুদ হাসান জানান, একটি খুনের মামলা রুজু হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় দু’জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’