সোমবার নিজের বাড়িতে গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হন ১৯ বছরের ঈশিতা মল্লিক। অভিযুক্ত দেশরাজ সিংহ পলাতক। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
কৃষ্ণনগরে বছর উনিশের ঈশিতা মল্লিক খুনে অভিযুক্ত দেশরাজ সিংহের খোঁজে ভিন্রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে রাজ্য পুলিশের দু’টি দল। পুলিশ সূত্রে খবর, একটি দল যাচ্ছে উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরে। অন্য একটি দলকে পাঠানো হয়েছে লখনউ।
জানা গিয়েছে, খুনের আগের দিন, অর্থাৎ গত রবিবার উত্তরপ্রদেশে পৈতৃক বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল দেশরাজের। ট্রেনের টিকিট কেটে দিয়েছিলেন তাঁর বাবা, পেশায় বিএসএফ জওয়ান রঘুবিন্দরপ্রতাপ সিংহ। দেশরাজ ফোনে বাবাকে জানিয়েছিলেন তিনি ট্রেনে উঠে পড়েছেন। কিন্তু আদতে যাননি। তার পরেই গত সোমবারের ঘটনা। এবং ঘটনাক্রমে পলাতক দেশরাজ। তদন্তকারীরা মনে করছেন, খুন করে উত্তরপ্রদেশেই পালিয়েছেন দেশরাজ। কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার অমরনাথ কে বুধবার বলেন, ‘‘আমরা এখনও পর্যন্ত দেশরাজকে ধরতে পারিনি। তাঁর খোঁজে উত্তরপ্রদেশে আমাদের টিম গিয়েছে। খুব দ্রুত তাকে ধরে ফেলা যাবে বলে আমরা মনে করছি।’’
সোমবার দুপুরে নদিয়ার কৃষ্ণনগরের বাড়িতে খুব কাছ থেকে ঈশিতার মাথায় গুলি করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, তিনটি গুলি লাগে কলেজছাত্রীর শরীরে। মঙ্গলবার ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোল, মৃতার চুলের ক্লিপ, রক্তের নমুনা এবং আরও কিছু জিনিস সংগ্রহ করা হয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, খুনে সেভেন এমএম পিস্তল ব্যবহার করা হয়েছে। মঙ্গলবারই ময়নাতদন্তের পরে পরিবারকে হাতে ঈশিতার দেহ তুলে দেয় পুলিশ। রাতে নবদ্বীপ মহাশ্মশানে সৎকার করা হয় তাঁকে।
ঈশিতার মা কুসুম মল্লিক পুলিশকে জানিয়েছেন, সোমবার দুপুর ২টোর আশপাশে তাঁর মেয়েকে খুন করা হয়েছে। কৃষ্ণনগরের কোতোয়ালি থানায় অভিযোগপত্রে তিনি জানান, দুপুর ২টো ১৫ মিনিট নাগাদ দোতলার স্নানঘর থেকে বার হন তাঁর ছোট মেয়ে। তখনই দেশরাজ ঘরে ঢুকে গুলি চালান। ঠিক সেই সময় ছোট ছেলে করণকে স্কুল থেকে নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন কুসুম। দেশরাজ তাঁকে দেখে তাঁর দিকেও পিস্তল তাক করেন। প্রাণে বাঁচতে ঘরের দরজা বন্ধ করে চিৎকার করেন। তখন পালিয়ে যান দেশরাজ। পরে মেয়ের ঘরে গিয়ে তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। খুনের পরে দেশরাজ কোথায় ছিলেন, কেউ তাঁকে আশ্রয় দিয়েছিলেন কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
ঈশিতা এবং দেশরাজ পূর্বপরিচিত। তাঁদের আলাপ উত্তর ২৪ পরগনার কাঁচরাপাড়ায়। পুলিশ সূত্রে খবর, ২০১৫ সালে তিনি ডেপুটেশনে হরিণঘাটায় এনডিআরএফে যোগ দিয়েছিলেন দেশরাজের বাবা রঘুবিন্দর। সেই সূত্রে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের পলাশি-মাঝিপাড়া পঞ্চায়েতের ধরমপুর কলোনির হস্টেল গেট এলাকায় সন্দীপ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়ি ভাড়া নেন তিনি। ছেলে দেশরাজ ও মেয়ে দু’জনকেই ভর্তি করিয়েছিলেন কাঁচরাপাড়া কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে। কাজের সূত্রে ভাড়াবাড়িতে বিশেষ থাকা হত না রঘুবিন্দরের। স্ত্রী পুনম দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে সেখানে থাকতেন। কয়েক দিন আগে প্রয়াগরাজের সেনাস্কুলে মেয়েকে ভর্তি করানোর জন্য উত্তরপ্রদেশ চলে যান পুনম। ভাড়াবাড়িতে একাই ছিলেন দেশরাজ।
কেন তিনি ঈশিতাকে খুন করলেন, তা এখনও পরিষ্কার নয়। রঘুবিন্দর জানিয়েছেন, ছেলে যদি কোনও অপরাধ করে থাকে, প্রশাসন যেন ব্যবস্থা নেয়। কী থেকে কী হল, এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না দেশরাজের মা।
(ভ্রম সংশোধন: গত সোমবার কৃষ্ণনগরে ছাত্রী খুনের খবরে সোম এবং মঙ্গলবার আমরা লিখেছিলাম মূল অভিযুক্তের নাম দেবরাজ সিংহ এবং তাঁকে আটক করেছে পুলিশ। এই খবর সর্বৈব ভ্রান্ত। আদতে অভিযুক্তের নাম দেশরাজ সিংহ। পুলিশ এখনও তাঁর খোঁজ পায়নি। নিহত ঈশিতা মল্লিকের বাবার নাম লেখা হয়েছিল জয়দেব মল্লিক। সেটিও ভুল। মৃতার বাবার নাম দুলাল মল্লিক। অনিচ্ছাকৃত এই সমস্ত ত্রুটির জন্য আমরা আন্তরিক দুঃখিত ও নিঃশর্তে ক্ষমাপ্রার্থী)