ভুল স্বীকার করে বয়কট তুললেন গ্রামের মুরুব্বিরা

অবশেষে উঠল সামাজিক বয়কট। এক মাস ধরে বন্ধ ছিল মুদি, ধোপা ও বাড়িতে দুধ দেওয়া। গ্রামের বিভূতি প্রামাণিকের ‘অপরাধ’ ছিল গ্রামের মন্দির সংস্কারে কয়েক ছটাক জমি দিতে অপারগতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৬ ০১:০৪
Share:

অবশেষে উঠল সামাজিক বয়কট।

Advertisement

এক মাস ধরে বন্ধ ছিল মুদি, ধোপা ও বাড়িতে দুধ দেওয়া। গ্রামের বিভূতি প্রামাণিকের ‘অপরাধ’ ছিল গ্রামের মন্দির সংস্কারে কয়েক ছটাক জমি দিতে অপারগতা।

নওদার আলমপুরের প্রামাণিক পরিবারের উপরে তাই নেমে সামাজিক বয়কট। গ্রামের মাথারা রায় দিয়েছিলেন— ‘ওদের মন্দিরের প্রসাদ দেওয়া চলবে না। মন্দিরের চৌহদ্দিতে পা-ও রাখতে পারবে না ওরা’। সেই সঙ্গে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ধোপা-মুদিখানা। এমনকী বিভূতি প্রামাণিকের পুত্রবধুর কাছে টিউশন নিতে যাওয়ার উপরেও ফতেয়া জারি হয়েছিল।

Advertisement

তবে ছবিটা বদলে গিয়েছিল গত ২৭ জুলাই আনন্দবাজার পত্রিকায় এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর। নড়েচড়ে বসে পুলিশ-প্রশাসন। নির্দেশ যায় গ্রামের মোড়লের কাছে। সেই মতো শুক্রবার রাতে আলমপুরের গ্রামের লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দিরে বসে জরুরি মিটিং। গ্রামের মোড়ল, মন্দির কমিটির সদস্য ও গ্রামের লোকজনের পাশাপাশি ডেকে নেওয়া হয় বিভূতি ও বিবেক প্রামাণিককেও।

তবে মিটিং শুরু হতেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় বিভূতিবাবুদের— ‘‘আপনারাই কী খবর দিয়েছিলেন পুলিশকে?’’ উত্তরটা ‘না’ হলেও বিশ্বাস করেননি অনেককেই। তাই ফের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় তাঁদের। তা হলে পুলিশ জানল কী করে? এ বারেও উত্তর, ‘জানি না’।

তবে এর বেশি আর জলঘোলা হয়নি। মিটিংয়ে একযোগে সকলে স্বীকার করে নেন, ভুল হয়ে গিয়েছে। গ্রামের মোড়ল সভায় দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘সকলেই শুনে নিন্দা করছে। পুলিশ আমাদের নির্দেশ দিয়েছে গ্রামেই মিটিং করে যেন বয়কট তুলে নেওয়া হয়। সেই মতো উপস্থিত সকলকে জানাচ্ছি, যা হয়েছিল, ভুল হয়েছিল। পুরানো সব কথা ও নির্দেশ ভুলে গ্রামের সব পরিবারের সঙ্গে প্রামাণিক পরিবারকেও মেনে নিতে হবে।’’

সেই সঙ্গে মিটিংয়ে এ-ও স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়, ভবিষ্যতে গ্রামের কেউ কোনও সমস্যায় পড়লে থানা বা আদালতে যেতে হবে। মোড়ল হস্তক্ষেপ করবেন না। খুশি প্রামাণিক পরিবারও। বিভূতিবাবু বলেন, ‘‘গ্রামের মানুষের মুখগুলো কেমন অচেনা হয়ে গিয়েছিল। দীর্ঘদিন পর সকলের সঙ্গে দেখা হয়ে ভাল লাগলো। গ্রামের মাথারা তাঁদের ভুল স্বীকার করে নিয়েছেন। আর কী...?’’ নওদার ওসি উৎপল দাসের কথায়, ‘‘ওরা কথা রেখেছে। ভাল খবর।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement