প্রযোজক গ্রামের মানুষই, শুটিং চলছে

গ্রামের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে মোরামের রাস্তা। যার একদিকে বিঘার পর বিঘা চাষের জমি। অন্যদিকে টিনের ঘর। মাঝে মাঝে মাথা তুলেছে পাকা বাড়ি। সে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়েই কানে ভেসে এল— ‘রোল। অ্যাকশন!’ 

Advertisement

সৌমিত্র সিকদার

বহিরগাছি শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৪৫
Share:

শিশুশিল্পীদের সঙ্গে। নিজস্ব চিত্র

গ্রামের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে মোরামের রাস্তা। যার একদিকে বিঘার পর বিঘা চাষের জমি। অন্যদিকে টিনের ঘর। মাঝে মাঝে মাথা তুলেছে পাকা বাড়ি। সে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়েই কানে ভেসে এল— ‘রোল। অ্যাকশন!’

Advertisement

ঘরের সামনে মাদুর পাতা রয়েছে। সেখানে বসে পিঠোপিঠি দুই বোন লক্ষ্মী-বাসন্তী। লক্ষ্মী ছবি আঁকছে। বাসন্তী দেখছে। এই সময়ে তাদের ভাই গৌর ছুটে আসে। দুরন্ত ছেলেটি দিদির আঁকার খাতা ছিঁড়তে যায়। তা দেখে ঘর থেকে তাদের মা ছুটে আসে। ছিঁড়তে না পেরে গৌর খাতাটা টেনে নিয়ে ছুড়ে ফেলে। মা তাকে টানতে টানতে ঘরে নিয়ে যায়। কাঁদতে শুরু করে লক্ষ্মী।

এত ক্ষণ অবধি মনিটরে চোখ রেখেছিলেন চিত্র-পরিচালক উজ্জ্বল বসু। এ বার ‘কাট’ বলে চিৎকার করে উঠলেন। গত তিন দিন ধরে ধানতলা থানার বহিরগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের মাঠনারায়ণপুর গ্রামে চলছে ছবির শুটিং। মানবেন্দ্র চক্রবর্তী প্রযোজিত এবং অনির্বাণ মৈত্র সম্পাদিত ‘দুধ পিঠের গাছ’ চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে। চলবে আগামী আরও কয়েক দিন। সেই উপলক্ষেই চাঁদের হাট বসেছে গ্রামে। সবচেয়ে অভিনব বিষয়টি হল, ছবিটি তৈরি হচ্ছে গ্রামের মানুষের অর্থসাহায্যেই, জানালেন পরিচালক।

Advertisement

জানা গেল, পরিচালক উজ্জ্বল একটু ব্যতিক্রমী ভাবে চলচ্চিত্রটি নির্মাণের কৌশল নিয়েছেন। ছবি করার জন্য তিনি প্রযোজকদের দোরে দোরে না ঘুরে গ্রামের মানুষের কাছে ছুটে এসেছেন। তাঁদের কাছ থেকে অর্থসংগ্রহ করেই ছবির কাজ শুরু করেছেন তিনি।

উজ্জ্বল বলেন, ‘‘এর আগেও অনেকে ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে ছবি করেছেন। আমার একটু অন্য ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে দুটো কাজ করতে চাইছি। এক, গ্রামের মানুষকেই প্রযোজক বানিয়েছি। দুই, বাংলা ছবির দর্শক তৈরি করছি। আমার বিশ্বাস, এর ফলে এই সব এলাকার মানুষ ছবিটি দেখবেন।’’

এই এলাকার পরে ছবির শ্যুটিং হবে আশপাশের গ্রামেও। ছবিটিতে লক্ষ্মীর চরিত্রে অভিনয় করছেন রিয়া দাস, বাসন্তীর চরিত্রে দেবাঙ্গনা গন, গৌরের চরিত্রে হার্সিল দাস এবং তাদের মায়ের চরিত্রে দামিনী বেণী বসু। চিত্রগ্রহণে রয়েছেন শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়।

এলাকার মেয়ে রিয়া এবং দেবাঙ্গনা এই প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘সিনেমায় অভিনয়ের জন্য আমরা এলাকার একটি স্কুলে এবং কলকাতায় ওয়ার্কশপ করেছি। প্রথম প্রথম একটু ভয় করছিল। কিন্তু উজ্জ্বলকাকু সাহস দেওয়ায় আর কোনও সমস্যা হচ্ছে না। সবাই আমাদের ছবি দেখবে, ভাবতে খুব ভাল লাগছে।’’

অভিনেত্রী দামিনি বলেন, ‘‘গ্রামের মানুষ আমাদের সঙ্গে সব রকমের সহযোগিতা করছেন। তাঁরা আমায় আনাজ কেটে, পিঠেপুলি করে দিয়ে সাহায্য করছেন। তা না হলে যে কী হত, জানি না!’’ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ফুলকলি বিশ্বাসের বাড়িতে চিত্রগ্রহণের কাজ চলছিল। একগাল হেসে উচ্ছ্বসিত ফুলকলি বলেন, “ভাবতেই পারছি না আমাদের বাড়িতে ছবির কাজ হচ্ছে!’’

পরিচালক জানিয়েছেন, এই ছবি তৈরি করতে আনুমানিক ৩৫ লক্ষ টাকা খরচ হবে। যার বেশিরভাগটাই সংগ্রহ করা হয়েছে। তা ছাড়া, ছবিটিতে বিভিন্ন স্কুল থেকে প্রায় ৬৫ জন ছোট ছেলেমেয়ে কাজ করবে।

ছবি তৈরিতে টাকা দিতে পেরে খুশি দেবাশিস দাস, সুস্মিতা গন, সোনালি দাসেরাও। তাঁরা চান সকলে এই ছবি দেখুক, প্রশংসা পাক ছবিটি। আদতে ছবির সঙ্গে তাঁরাও যে জড়িয়ে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন