‘ঘুম ভাঙল’ প্রশাসনের

রবিবার সকাল থেকেই পুলিশ-প্রশাসনও ছিল সক্রিয়। কোথাও কোনও গন্ডগোল হলেই প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ পৌঁছিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৪২
Share:

নজরদারি: রবিবার বহরমপুর কোর্ট স্টেশনে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

দু’দিন ধরেই অভিযোগ উঠছিল—প্রতিবাদ-বিক্ষোভের নামে তাণ্ডব চলছে। অথচ পুলিশ-প্রশাসনের দেখা নেই। শনিবার জেলার রাজনৈতিক ও অন্য সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানান জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা। রবিবার সকাল থেকেই পুলিশ-প্রশাসনও ছিল সক্রিয়। কোথাও কোনও গন্ডগোল হলেই প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ পৌঁছিয়েছে। যা দেখে জেলার অনেকেরই মন্তব্য, ‘‘যাক, অবশেষে ঘুম ভাঙল প্রশাসনের।’’

Advertisement

নয়া নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া মুর্শিদাবাদ উত্তাল হয়েছে। সরকারি সম্পত্তিতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে শনিবার বৈঠক করে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন। সেখানে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি ইমাম মোয়াজ্জিনদের সংগঠন-সহ একাধিক সামাজিক সংগঠনকেও ডাকা হয়েছিল। শনিবার রাতেই ব্লক ও মহকুমাস্তরেও সর্বদলীয় বৈঠক করে প্রশাসন। রবিবার কোনও কোনও ব্লকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার দাবি জানিয়ে মাইকে প্রচার করা হয়েছে। প্রশাসনের দাবি, গত দু’দিনের তুলনায় রবিবার মুর্শিদাবাদে হিংসাত্মক ঘটনা কম ঘটেছে।

জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা অবশ্য বলছেন, ‘‘আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আমরা প্রথম থেকেই সক্রিয়। দু’দিনের তুলনায় এ দিন পরিস্থিতি অনেকটাই ভাল।’’ একই সঙ্গে জেলাশাসকও জেলাবাসীর কাছে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার

Advertisement

আবেদন জানিয়েছেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার মুখ্যমন্ত্রী শান্তিপূর্ণ ভাবে বিক্ষোভ আন্দোলনের অনুরোধ করেন। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট ও হিংসাত্মক কাজ করলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন। এই পরিস্থিতিতে শনিবার রাত থেকে প্রশাসন আগের থেকে অনেকটাই সক্রিয় হয়েছে। রবিবার সর্বদলীয় বৈঠকে প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আন্দোলন কর্মসূচি করার কথা বলা হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, রবিবার বিকেল ৩টে থেকে সোমবার বিকেল ৩টে পর্যন্ত সেই পরিষেবা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে শনিবার বিকেলে লালগোলা উত্তপ্ত হয়ে উঠে। লালগোলা ও লালগোলার কৃষ্ণপুর স্টেশনে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। আগুন দেওয়া হয় একাধিক ট্রেনে। শনিবার সন্ধ্যায় লালগোলার লোকজনের সঙ্গে বিডিও সামসুজ্জামান ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর মিঞা বৈঠক করেন। রবিবার ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে লালগোলার ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় মাইকে প্রচার করা হয়। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি-সহ লালগোলার বিশিষ্ট লোকজন স্থানীয় বাসিন্দাদের বোঝানোর পাশাপাশি মাইকেও প্রচার করেন। লালগোলার বিডিও সামসুজ্জামান বলেন, ‘‘ব্লকের প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতের লোকজনকে এ দিন সচেতন করা হয়েছে।

এ দিন প্রচারে বলা হয়েছে—‘আমরা জানি আপনারা নয়া নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসি নিয়ে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে আছেন। রাজ্য সরকার আপনাদের যন্ত্রণার প্রতি সহানুভূতিশীল এবং সরকার আপনাদের পাশে আছে। দয়া করে গুজবে কান দেবেন না এবং গুজব ছড়াবেন না। সরকারি ও ব্যক্তিগত সম্পতি নষ্ট করবেন না। আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। সম্প্রীতি বজায় রাখুন, হিংসাপূর্ণ আন্দোলন থেকে বিরত থাকুন। ব্লক প্রশাসন সব সময় আপনার পাশে আছে।

ইমাম মোয়াজ্জিনদের সংগঠনের পক্ষ থেকে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার আবেদন করা হয়েছে। বিভিন্ন মসজিদ থেকে হিংসাত্মক আন্দোলন না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন