ফ্লেক্সের ছায়ায় মুখ ঢেকেছে রং-তুলি 

ফ্লেক্স আর ব্যানারের ঝকঝকে দাপটে এখন দেওয়ালে তুলির টান দেওয়া সেই সব শিল্পীরা এক বাতিল সাইন বোর্ডের মতোই দুষ্প্রাপ্য।    

Advertisement

আব্দুল হাসিম

রানিনগর  শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৫০
Share:

হারানো আর্টিস্ট! রানিনগরে। নিজস্ব চিত্র

ধানি জমি ফুঁড়ে কারখানার ধবধবে দেওয়ালে এখনও রয়ে গিয়েছেন তিনি। মিষ্টির দোকানের তেলচিটে দেওয়াল, বাসস্ট্যান্ডের পানের পিক ফেলা থাম, সেলুনের দোমড়ানো সাইনবোর্ড— হ্যাঁ সেখানেও এখনও নমো নমো করে টিকে রয়েছেন। তবে,ওইটুকুই, চটা ওঠা, আধ ভাঙা সেই সব মলিন দেওয়ালের মতোই তাঁরাও এখন হারানো স্মৃতির মতো।

Advertisement

ফ্লেক্স আর ব্যানারের ঝকঝকে দাপটে এখন দেওয়ালে তুলির টান দেওয়া সেই সব শিল্পীরা এক বাতিল সাইন বোর্ডের মতোই দুষ্প্রাপ্য।

আলতা পায়ের নরম ছবি দেখে পথচারীর প্রশংসা শুনে তাই মিনমিনে গলায় রানিনগরের এক প্রায় হারানো সাইনবোর্ড শিল্পী বলছেন, ‘‘আর ভাল, নতুন প্রজন্ম এ সবের দাম বোঝে!’’

Advertisement

কয়েক বছর আগেও, দোকানের সাইনবোর্ড লেখার জন্য ডাক পড়ত তাঁদেরই। সস্তার শাড়ি থেকে আলতা, সার কিংবা নতুন খোলা দোকানের বোর্ডে ঝলমল করত এই সব শিল্পীরই রং-তুলি। কিন্তু প্লাস্টিকের বাজার তার প্রতাপ দেখানো শুরু কতরতেই ব্যানেরের ধাক্কায় মুছে গিয়েছেন তাঁরা। বর্ষার ভেজা দেওয়াল থেকে মুছে গিয়েছে তাঁদের দুপুর জাগা সৃষ্টি।

তাঁদের অনেকেই তাই ফিরে গিয়েছেন রিকশা, টোটো কিংবা দিন মজুরের পেশায়। শিল্পীর কদর মুছে তাঁরা এখন নিতান্ত আটপৌরে মানুষ! তারই মাঝে কেউ বা নিজের শিল্পী সত্ত্বা বজায় রাখতে শিল্পীসত্বা বজায় রাখতে শুরু করেছেন ছবি আঁকার ক্লাস। সেখানে ছেলেমেয়ের ভিড় তেমন হয় কই, আফশোস ছাড়া সেখানেও পড়ে নেই কিছু।

রানিনগরের এক শিল্পী গাজু শেখ বলেন, ‘‘রং দিয়ে সাইনবোর্ড লেখার কাজটা হারিয়েই গেল, এখন আমার আঁকা পুরনো দেওয়াল চোখে পড়লে জল আসে চোখে। মনে পড়ে য়ায় সেই সব দিন।’’ এখন সারা মাসে দু’টো বড়জোর তিনটে বোর্ড আঁকার ডাক পান চতিনি। বলছেন, ‘‘তাতে কি পেট ভরে!’’ শেখপাড়ার শিল্পী ফিরোজ আলম, তাই এ সব ছেড়ে দোকান দিয়েছেন। বলছেন, ‘‘কমবেশি ১৫ টাকা স্কোয়্যার ফিট হিসেবে ফ্লেক্স তৈরি করি।’’

একটি প্রমাণ সাইজের দোকানের সাইনবোর্ড ৩০ স্কোয্যার ফিট অর্থাৎ ৪৫০ টাকার মধ্যে হয়ে যায়। অন্যদিকে রং দিয়ে লিখতে গেলে খরচ ৯০০ থেকে হাজার টাকা। তার পরে আবার দামী কোম্পানির রং ব্যাবহার করলে আরও বেশি। কে আর সস্তার বাইরে তাকায়!

তাই মহম্মদ আলম কিংবা নিতাই মালাকারেরা ফিরে গিয়েছেন রিকশা আর টোটো-র পেশায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন