West Bengal Panchayat Election 2023

ট্রেনেই ভার্চুয়াল বৈঠক, রাত জেগে তদারকি বিডিওর! মনোনয়নের প্রস্তুতিতে ভিন্ন ছবি নদিয়ায়

তখন সন্ধ্যা ৭টা ১০। কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন ব্লক অফিসের এক কর্মী। বাসে উঠে জানলার সিট দখল করে সবে গা-টা এলিয়েছেন, সেই সময়ে বিডিও সাহেবের ফোন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২৩ ১৮:২৭
Share:

মনোনয়নের প্রস্তুতিতে ভিন্ন ছবি নদিয়ায়। নিজস্ব চিত্র।

তখন সন্ধ্যা ৭টা ১০। কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন ব্লক অফিসের এক কর্মী। বাসে উঠে জানলার সিট দখল করে সবে গা-টা এলিয়েছেন, সেই সময়ে বিডিও সাহেবের ফোন। ফোনের ও পার থেকে নির্দেশ, ‘‘কত দূর গেলেন? শিগগির ফিরে আসুন!’’ তখন থেকেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হয়ে গিয়েছিল আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন গ্রহণ-পর্বের প্রস্তুতির কাজ। কোথাও ব্লক স্তরের কর্মীদের মাঝরাস্তা থেকেই অফিসে ফিরে আসতে হয়েছে, কোথাও আবার অনেককে ট্রেনে বসেই যোগ দিতে হয়েছে জেলাশাসক, মহকুমাশাসকদের ডাকা ভার্চুয়াল বৈঠকে। কোথাও আবার মধ্যরাতে ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ে মনোনয়ন গ্রহণের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে সরকারি কর্মীদের।

Advertisement

আগামী ৮ জুলাই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন। শুক্রবার থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে মনোনয়ন প্রক্রিয়া। তা চলবে ১৫ জুন পর্যন্ত। এর মধ্যে রবিবার সরকারি দফতরে ছুটি, মনোনয়ন প্রক্রিয়া বন্ধ থাকবে। ভোট ঘোষণার পর দিন থেকেই মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাওয়ায় মহাফাঁপরে পড়েছে বিভিন্ন জেলার ব্লক প্রশাসন! এত কম সময়ের মধ্যে মনোনয়ন গ্রহণের প্রস্তুতি নিতে হিমশিম খাচ্ছে তারা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার ১ ব্লকে প্রস্তুতির অভাবে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া যায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু ভিন্ন ছবি দেখা গেল নদিয়ায়। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত সময়সূচি মেনেই শুক্রবার সকাল ১১টার মধ্যে মনোনয়ন গ্রহণের প্রায় ১০০ শতাংশ প্রস্তুতি নিতে সক্ষম হয়েছে ব্লক অফিসগুলি। যার জেরে মনোনয়ন জমা দিতে এসে কোনও প্রার্থীকে ফিরে যেতে হয়নি।

জেলা প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে, জেলার ব্লক অফিসগুলিতে সকাল থেকে প্যান্ডেল বাঁধার কাজ শুরু হয়। যে হেতু ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ভোট, তাই আলাদা আলাদা টেবিলেরও ব্যবস্থা করা হয়। মনোনয়ন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ রাখতে বেশির ভাগ জায়গায় নজরদারির জন্য বসানো হয় সিসি ক্যামেরাও। পুলিশ প্রহরারও ব্যবস্থা করা হয়। নদিয়ার করিমপুর ২ ব্লকের বিডিও সামসুজ্জমান বলেন, ‘‘রাতারাতি মনোনয়নপত্র তৈরি করে প্রেসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সকালেই তা ব্লক অফিসে পৌঁছে গিয়েছিল।’’

Advertisement

কিন্তু এই স্বল্প সময়ে কী ভাবে প্রস্তুতির কাজ সেরে ফেলা গেল? প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, বৃহস্পতিবার যখন পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণা হচ্ছে, তত ক্ষণে ব্লক অফিসের কর্মীদের অনেকেই কাজ শেষ করে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। কিন্তু দিনক্ষণ প্রকাশ্যে আসার আধ ঘণ্টার মধ্যেই তৎপরতা শুরু হয়ে যায় ব্লক স্তরে। ব্লককর্মীদের জরুরি ভিত্তিতে অফিসে ডেকে পাঠানো হয়। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই জেলাশাসক, মহাকুমাশাসকের নেতৃত্বে বিডিওদের নিয়ে শুরু হয় ভার্চুয়াল বৈঠক। কী ভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হবে, তা সেই বৈঠকেই স্থির হয়। এর পর ব্লক কর্মীদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে শুরু হয় কাজ। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ ব্লক আধিকারিক এবং কর্মীদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠকও হয়। তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়, শুক্রবার সকাল ৭টার মধ্যে তাঁদের অফিসে ফিরতে হবে। এর পর রাত ১১টা নাগাদ ব্লক কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

নদিয়া জেলার জেলাশাসক শশাঙ্ক শেট্টি বলেন, ‘‘রাজ্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা মতো জেলা প্রশাসন প্রস্তুত। নির্দিষ্ট সময় থেকেই মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। জেলা পুলিশও প্রস্তুত ছিল। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন প্রক্রিয়ার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রতিটি ব্লক অফিসে সকাল থেকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আশা করছি, সুষ্ঠু ভাবে গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।’’ এ বিষয়ে কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কৃশানু রায় বলেন, ‘‘আমরা ইতিমধ্যেই সমস্ত মনোনয়ন গ্রহণকেন্দ্রে পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন