হুঁশ-নেই। জঙ্গিপুর স্টেশনে।
রেললাইন যেন বাড়ির উঠোন! কাপড় মেলা থেকে সান্ধ্য আড্ডা— লাইনের উপর জাঁকিয়ে খবরদারি না করলে যেন চলে না! আর তাই কখনও নিমতিতা কখনও সাঁকোপাড়া দুর্ঘটনার বিরাম নেই।
দশেরার সাঁঝে অমৃতসরে রাবন বধের পালা দেখার উৎসাহে লাইন জুড়ে হল্লায় মেতে থাকা ৬৪ জনের প্রাণহানির পরেও তাই দেশের আনাচ কানাচে, কোথাও নিজস্বী তোলার উৎসাহে কোথাও বা নিছক ঝুঁকি নিয়ে লাইন পারাপার করতে গিয়ে মৃত্যু মিছিল চলছেই। সেই তালিকায় শেষ সংযোজন রাখী পাল (৩২)। সুতির জগতাই গ্রামেও ওই মহিলা মঙ্গলবার সকাল ৯টা নাগাদ ফরাক্কার সাঁকোপাড়া হল্ট স্টেশনে লাইন পার হওয়ার সময়ে নবদ্বীপধাম এক্সপ্রেসের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মারা যান। ওই ঘটনায় আহত অন্য এক মহিলাকে সঙ্কটজনক অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর একই ভাবে নিমতিতা রেল স্টেশনে লাইন পেরোতে গিয়ে দুরন্ত গতিতে আসা কলকাতাগামী গরীব রথ এক্সপ্রেসের ধাক্কায় মারা গিয়েছিল বছর আঠারোর এক কিশোর। সাঁকোপাড়া হল্ট স্টেশনেও গত ছ’মাসের মধ্যে লাইন পার হতে গিয়ে মারা গেলেন দু’জন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই মহিলা আত্মীয়ের ছেলের অন্নপ্রাশনে ফরাক্কার হাজারপুর গ্রামে গিয়েছিলেন। অনুষ্ঠান সেরে এ দিন সকালে আজিমগঞ্জগামী মালদহ টাউন প্যাসেঞ্জার ধরতে সাঁকোপাড়া হল্ট স্টেশনে আসেন। স্টেশন লাগোয়া বাম পাশের পাকা সড়ক দিয়ে আশপাশের অন্তত দশটি গ্রামের মানুষ চলাচল করেন। দুর্ঘটনা এড়াতে বসানো হয়েছে রেলগেট। এ দিন মালদহ প্যাসেঞ্জার লেট থাকায় সময়ে স্টেশনে ঢোকেনি। কিন্তু ওই সময়ে ধুলিয়ান গঙ্গা স্টেশন থেকে ফরাক্কা যাচ্ছিল নবদ্বীপধাম এক্সপ্রেস। সাঁকোপাড়া হল্ট স্টেশনে দাঁড়ায় না বলে দ্রুতগতিতে তা বেরিয়ে যায়।
দুর্ঘটনায় আহত জরিনা খাতুন বলছেন, ‘‘বোন সাহনাজকে সঙ্গে নিয়ে প্যাসেঞ্জার ট্রেন ধরতে যাচ্ছিলাম সাঁকোপাড়া হল্টে। যাওয়ার কথা ছিল ধুলিয়ানে বিড়ি শ্রমিকের কার্ড করাতে। রেল গেট বন্ধ দেখে আমরা ভাবি স্টেশনে ট্রেন ঢুকছে, তাই রেল গেট বন্ধ করা হয়েছে। লাইন পার হতে গেলাম আর ট্রেনটা হুড়মুড় করে ঘাড়ের উপর এসে পড়ল।’’ আজিমগঞ্জ রেল পুলিশের ওসি চিন্তাহরণ সিংহ বলেন, ‘‘যাত্রীদের নিরাপত্তা সুরক্ষিত করতে প্রচারের শেষ নেই। কিন্তু জীবনটা তো তাঁদের। এত দুর্ঘটনার পরেও রেল লাইন পেরিয়ে যাতায়াতের স্বভাব বদলালো না।’’