পাটুলিঘাটে লাগানো ভেটিভার।
একশো দিনের কাজের প্রকল্পে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা সফল ভাবে মাছ চাষ করেছেন। ওই প্রকল্পে ছাই ইট বানিয়েও লাভের মুখ দেখেছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা। এ বার সেই তালিকায় নবতম সংযোজন— নদী ভাঙন রুখতে ভেটিভার ঘাষ লাগানোর প্রকল্পে যুক্ত করা হল স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের। ঘাষ লাগানো, রক্ষণাবেক্ষণ, এ সবই করবেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। আর এর জন্য গোষ্ঠীর সদস্যরা মজুরি পাবেন একশো দিনের প্রকল্প থেকে।
ফি বছর জেলার কয়েকটি ব্লক ভাগীরথীর ভাঙনের কবলে পড়ে। ভিটে-বাড়ি তলিয়ে যায় নদী-গর্ভে। অন্যান্য নদীও প্রতি বছরই ভাঙছে। ভাঙন-রোধে নদীগুলির দুই পাড়ে একশো দিনের প্রকল্পে ভেটিভার ঘাস লাগানো শুরু হয়েছে। আর এই গোটা প্রকল্পটাই পরিচালিত হবে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের মাধ্যমে। জেলায় ইছামতি, জলঙ্গী, মাথাভাঙা, চুর্ণি ও ভাগীরথী-সহ বিভিন্ন নদীর প্রায় ৭৪৩ কিলোমিটার পাড় রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ৫০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই ঘাস লাগানো হবে। পাঁচশোটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী এই কাজ করবে। কোন এলাকার কোন স্বনির্ভর গোষ্ঠী এই দায়িত্ব পালন করবে তা স্থির করবে সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত। ১৫ অগস্টের মধ্যে এই নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। আর মাস কয়েকের মধ্যে পুরো দমে চালু হয়ে যাবে এই প্রকল্প। যার পোশাকি নাম ‘জীবিকাসাথী।’
প্রকল্প কী ভাবে বাস্তবায়িত হবে, তার জন্য গোষ্ঠীর সদস্যদের বিশেষ ভাবে তালিমও দেওয়া হচ্ছে।
ভেটিভার শিকড় মাটির গভীরে প্রবেশ করে ভাঙন ঠেকায়। আর এই ঘাসের পাতা দিয়ে তৈরি হয় ঘর সাজানোর নানা শৌখিন সামগ্রী। জেলার বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা ঘাস কেটে হরেক রকমের শৌখিন সামগ্রী বানাবেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নদী পাড়ের প্রতি এক কিলোমিটারে প্রায় ৬০ হাজার ঘাসের চারা লাগানো হবেয়। এক একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী ওই চারা লাগাবে। চারা লাগানোর পরবর্তী ছ’মাস তার দেখভালও করবেন গোষ্ঠীর সদস্যরা। প্রতিদিন ছ’জন গাছের পরিচর্যা করবেন। আর তাঁদের মজুরি মেটানো হবে একশো দিনের কাজের প্রকল্পের তহবিল থেকে।
ছ’মাস পর ঘাস কাটার অবস্থায় পৌঁছবে। গোষ্ঠীর সদস্যরা দু’ফুট রেখে ঘাসের বাকি অংশ কেটে নিতে পারবেন। তা থেকে নানা সামগ্রী তৈরি করবেন ওই মহিলারা। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “আসলে এতে এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাবে। এক, নদীর পাড়ে নিয়মিত নজরদারি চলবে। দুই, এতে করে মহিলাদের আয়ের ব্যবস্থা হবে।’’
ভেটিভার ঘাস থেকে কী কী সামগ্রী তৈরি হবে? জেলাশাসক বিজয় ভারতী জানান, গৃহসজ্জার বিভিন্ন উপকরণ ছাড়াও মহিলাদের ব্যাগ, চপ্পল, মাদুর-সহ নানা জিনিস এই ঘাস থেকে তৈরি হয়। বাজারে এই সব উপকরণের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। এর ফলে মহিলাদের রোজগারের নতুন দিগন্ত খুলে যাবে।
জেলা প্রশাসনের দাবি, ‘ইন্টারন্যাশনাল ভেটিভার অর্গানাইজেশন’ এই উপকরণ তৈরির প্রশিক্ষণ দেয়। পুদুচেরিতে ওই সংগঠন ভেটিভার ঘাস থেকে নানা রকম জিনিস তৈরির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলেছে। জেলার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কয়েকজন সদস্যদের সেখানে পাঠানো হবে। ওই মহিলা জেলায় ফিরে অন্যান্যদেরও প্রশিক্ষণ দেবেন। জেলাশাসকের আশ্বাস, ‘‘স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা ওই উপকরণ যাতে বাজারে ন্যায্য দরে বেচতে পারেন, সে দিকে নজর রাখবে জেলা প্রশাসন।’’
প্রশাসনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন জেলার বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। কালীগঞ্জের একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দলনেত্রী ইয়াসমিন তারা বিবি বলেন, ‘‘এতে করে আর্থিক ভাবে দুর্বল গোষ্ঠীর মেয়েরা দু’টো পয়সার মুখ দেখবেন।’’