অবৈধ মাটি কাটা রুখতে সচেতনতা প্রচারের ভাবনা

সরকারের নদী মানে আমাদেরই নদী, সেখান থেকে মাটি তোলা আবার অন্যায় কিসের? নদীর মাটি কাটা নিয়ে এমনটাই মনে করেন ডোমকলের মাটি-মাফিয়ারা। এমনকী পুলিশকে অভিযানে গিয়ে এই প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়, “এতদিন তো কেউ কিছু বলেনি, আজ হঠাৎ কেন?” অবৈজ্ঞানিক উপায়ে যত্রতত্র মাটি কাটার ক্ষতিকারক দিক নিয়ে ন্যূনতম সচেতনতাটাটুকুও নেই ডোমকলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ডোমকল শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৪ ০০:০৫
Share:

সরকারের নদী মানে আমাদেরই নদী, সেখান থেকে মাটি তোলা আবার অন্যায় কিসের? নদীর মাটি কাটা নিয়ে এমনটাই মনে করেন ডোমকলের মাটি-মাফিয়ারা। এমনকী পুলিশকে অভিযানে গিয়ে এই প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়, “এতদিন তো কেউ কিছু বলেনি, আজ হঠাৎ কেন?”

Advertisement

অবৈজ্ঞানিক উপায়ে যত্রতত্র মাটি কাটার ক্ষতিকারক দিক নিয়ে ন্যূনতম সচেতনতাটাটুকুও নেই ডোমকলে। যার যখন প্রয়োজন, নদী পযর্ন্ত পৌঁছলেই হল। এ ছাড়াও কোথাও নদী, জলা কোথা আবার নিজ মালিকানার জমি থেকে অবৈজ্ঞানিক ভাবে তোলা হচ্ছে মাটি। অবৈধ ইটভাটার দৌলতে মাটি-মাফিয়ার চক্র এখন পাড়ায়-পাড়ায় মাথা চাড়া দিয়েছে। দেরিতে হলেও বিষয়টি নিয়ে নড়ে-চড়ে বসেছে প্রশাসন। দিন কয়েক আগেই রানিনগর থানা এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে মাটি-সহ দু’টি গাড়ি। ডোমকলের এসডিপিও অরিজিৎ সিংহ বলেন, “অবৈধ ভাবে মাটি কাটা বন্ধ করতে সব থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নিয়ে এক সপ্তাহে ৬টি গাড়ি ও ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আগামী দিনেও এই অভিযান চলবে।”

ভৈরবের পাড় ঘেঁষে ইসলামপুর বাজার। মাঝখানে সেতু। উঁচু পাড় ঘেঁষা জনপদ আর সেতুর তোয়াক্কা না করে সেখান থেকে অবাধে চলছিল মাটি কাটা। যা পরিবেশের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকারক। কী ভাবে? নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র জানান, মাটি তুলতে গেলে নদীর উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত সমান ভাবে তুলতে হয়। সেটা না করে হঠাৎ কোথাও থেকে গভীর করে মাটি তুলে নিলে পাড় ভেঙে যাওয়া ছাড়াও নানা সমস্য দেখা দিতে পারে। কোনও একটা এলাকায় গভীর করে কেটে নিলে নদীর অন্য অংশ শুকিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।

Advertisement

পরিবেশ নিয়ে এত ভাবনার সময় নেই মাটি-মাফিয়াদের। বরং একটা নির্দিষ্ট এলাকা বেছে নিয়ে সেখানেই ক্রমাগত মাটি তুলে যায় তারা। এক্ষেত্রে আবার সেতু সংলগ্ন এলাকা পছন্দ তাদের। কারণ, সেক্ষেত্রে মূল রাস্তা থেকে নদীতে গাড়ি নামানোর একটা বড় সুবিধা থাকে। এর ফলে যে সেতুর ভিত নড়বড়ে হয়ে বড়সড় ক্ষতি হতে পারে, তা ভেবে দেখে না কেউ।

ইসলামপুরের বাসিন্দা মন্টু সরকারের কথায়, ‘‘বর্ষাকাল বাদ দিলে বাকি মরসুমে ভৈরব নদীর বুক থেকে বিপজ্জনক ভাবে মাটি কেটে নেওয়া হয়। এমনকী বছর কয়েক আগে ১০০ দিনের প্রকল্পে দেওয়া নদীবাঁধকেও কেটে নিয়ে ছিল মাফিয়ারা।” স্থানীয় বাসিন্দা ধীমান দাস বলেন, ‘‘প্রায় শুকিয়ে যাওয়া ভৈরব নদীর তলায় তবুও সরু নালার মতো স্রোত বইছিল। কিছুদিন আগে মাফিয়ারা জেসিবি দিয়ে সেই স্রোতটুকুকে আটকে মাটি তোলার কাজ শুরু করেছে। এখন ভৈরবকে দেখলে মনে হবে নদীর মাঝে আবার পুকুর কাটা হয়েছে।”

ডোমকল বাজারের নীচ দিয়ে বয়ে যাওয়া শেয়ালমারি (দু’পাড়ের জনপদ এই নদীকে এমন ভাবে গ্রাস করেছে তাতে কিছুদিন বাদে এটিও কৃষ্ণনগরের অঞ্জনার মতো খালে পরিণত হবে) নদীবক্ষ থেকেও অবৈধ ভাবে মাটি তুলে নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি স্থানীয়দের। ডোমকল সেতুর তলা থেকেও বিপজ্জনক ভাবে মাটি তোলা হচ্ছে। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। কড়া পুলিশি পদক্ষেপের পাশাপাশি এই নিয়ে সচেতনতা প্রচারেরও কথা ভাবা হচ্ছে। ডোমকলের বিডিও রবীন্দ্রনাথ মিশ্র বলেন, ‘‘এই নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে নদী নিয়ে একটি আলোচনা সভা করব আমরা। তাছাড়াও ওই এলাকায় নদীর মাটি কাটা নিয়ে সতর্ক বার্তা লেখা বোর্ড লাগানো হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন