আয়ার কাছে অবৈধ গর্ভপাত, মৃত্যু তরুণীর

অবৈধ ভাবে ঝুঁকির গর্ভপাতে প্রতি দু’ঘণ্টায় এক জন প্রসূতির মৃত্যু হয় ভারতেসমীক্ষা করে এমনটাই জানিয়েছিল একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সেই হিসাবে যে ভুল কিছু নেই, ফের জানিয়ে দিল মুর্শিদাবাদের ডোমকল। অবৈধ গর্ভপাত করাতে দিয়ে মৃত্যু হল স্থানীয় হরিহরপাড়ার পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা সোনিয়া আখতারের (২০)। গর্ভপাত যাঁর কাছে হয়েছিল, তিনি নার্সিংহোমের ঝাড়ুদার ছিলেন আগে। পরে পদোন্নতি হয়ে আয়া হন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ডোমকল শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৪ ০০:১৯
Share:

অবৈধ ভাবে ঝুঁকির গর্ভপাতে প্রতি দু’ঘণ্টায় এক জন প্রসূতির মৃত্যু হয় ভারতেসমীক্ষা করে এমনটাই জানিয়েছিল একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সেই হিসাবে যে ভুল কিছু নেই, ফের জানিয়ে দিল মুর্শিদাবাদের ডোমকল। অবৈধ গর্ভপাত করাতে দিয়ে মৃত্যু হল স্থানীয় হরিহরপাড়ার পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা সোনিয়া আখতারের (২০)।

Advertisement

গর্ভপাত যাঁর কাছে হয়েছিল, তিনি নার্সিংহোমের ঝাড়ুদার ছিলেন আগে। পরে পদোন্নতি হয়ে আয়া হন। গর্ভপাতের প্রাথমিক কাজকর্ম শিখে ডোমকলে বাড়িতে খুলে বসেন অবৈধ ‘ক্লিনিক’। সুলেখা বিবি নামে ওই মহিলার বিরুদ্ধে মৃতার মা সোমবার বিকেলে অভিযোগ করেছেন। সুলেখা পলাতক হলেও তাঁর সহযোগী ফরিদা বিবিকে রাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বছর দু’য়েক আগে শ্রীপুর গ্রামের সোনিয়ার বিয়ে হয় তেহট্ট গ্রামের যুবক সফিউজ্জামানের সঙ্গে। মাস পাঁচেক আগে সোনিয়া অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর থেকে শুরু হয় গণ্ডগোল। স্বামী দাবি করেন, স্ত্রীর গর্ভের সন্তান তাঁর নয়। মৃতার মা আফরোজা বিবির কথায়, ‘‘মেয়ের সংসার বাঁচানো নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। একজন জানিয়েছিল হরিহরপাড়া বাজারের ফরিদা বিবি গর্ভপাতের কাজে সিদ্ধহস্ত। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ৭ হাজার টাকায় চুক্তি হয়। সোমবার বিকেলে ফরিদা আমাদের নিয়ে ডোমকলে সুলেখা বিবি নামে এক জনের বাড়িতে আসে। সেখানেই গভর্পাত হবে বলে জানানো হয়। ঘণ্টাখানেক বাদেও সাড়াশব্দ না পেয়ে বুঝতে পারি কিছু একটা গণ্ডগোল হয়েছে। আমি ভেতরে যেতে চাইলে ওরা বার করে দেয়।”

Advertisement

কী করবেন বুঝতে না পেরে আফরোজা বিবি ডোমকল থানায় গিয়ে সুলেখা বিবির নামে অভিযোগ জানান। রাতেই ডোমকল থানার পুলিশ হানা দেয় সুলেখার বাড়ি। কিন্তু সেখানে কেউ ছিল না তখন। তদন্তে নেমে পুলিশ খবর পায় হরিহরপাড়ায় ফরিদার বাড়িতে দেহটি আছে। এরপর হরিহরপাড়ার পুলিশের সাহায্য নিয়ে উদ্ধার হয় দেহ। গ্রেফতার করা হয় ফরিদাকে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার পর দেহটি লোপাট করার চেষ্টা করছিলেন ফরিদা।

ডোমকলের এসডিপিও অরিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘সোনিয়ার মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই হাতুড়ের সহযোগী ফরিদা বিবিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সুলেখা পলাতক। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৩১৪, ৩০৪ ও ২০১ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।’’

অবৈধ গর্ভপাতে হাতুড়েদের রমরমা ডোমকলে বহু দিনের। স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসনের নাকের ডগাতেই ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে হাতুড়েদের ‘ক্লিনিক’। এর আগেও হাতুড়ের কাছে গর্ভপাত করাতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে বেশ কিছু প্রসূতির। কয়েকটি ক্ষেত্রে অভিযোগ হলেও অধিকাংশ সময় টাকার বিনিময়ে সালিশি করে মিটিয়ে নেওয়া হয়।

প্রশাসন কিছু করছে না কেন? ডোমকল মহকুমা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার শুভরঞ্জন চন্দের দাবি, “সবটাই হয় গোপনে। কোনও বাড়ি ভাড়া নিয়ে ক্লিনিক খুলে বসে। ঘনঘন বাড়ি বদলায় এরা। তা ছাড়া এই নিয়ে কেউ অভিযোগও করে না। ফলে আমরাও ঠিক কোথায় অবৈধ কারবার চলছে, জানতে পারি না।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুলেখা প্রথমে ডোমকলের একটি নার্সিংহোমে ঝাড়ুদারের কাজ করতেন। সেখান থেকে আয়া হন তিনি। পরে নিজেই ‘ক্লিনিক’ খুলে শুরু করেন অবৈধ গর্ভপাত। ডোমকলের মেয়ে ফরিদাও একই ভাবে এই পেশায় হাত পাকান। হরিহরপাড়ায় বিয়ের পর সংসারে মন দিলেও পুরোপুরি ছাড়তে পারেননি পুরনো পেশা। ইদানীং তিনি অবৈধ গর্ভপাতে দালালির ব্যবসায় মন দিয়েছিলেন। গর্ভপাতের জন্য অবৈধ ক্লিনিকের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে কমিশন নিতেন তিনি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এমন ‘কমিশন’ নিয়মিত যায় স্বাস্থ্য দফতর থেকে প্রশাসন এমনকী রাজনৈতিক দলের কাছেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন