একের পর এক চুরিতে ত্রস্ত আখড়াপাড়া

ঘটনা ১- ৪ ডিসেম্বর বেতাইয়ের আখড়াপাড়ার বাসিন্দা প্রাক্তন সামরিক কর্মী ললিতমোহন বিশ্বাস সপরিবারে অসুস্থ মেয়েকে দেখতে গিয়েছিলেন কলকাতায়। বাড়ি ফিরে দেখেন বাড়ির দরজার তালা যেমন ছিল ঠিক তেমন আছে। তবে ভিতরে ঘরের জিনিসপত্র তছনছ, আলমারির তালা ভাঙা। চুরি হয়ে গিয়েছে প্রায় আট ভরি সোনার গয়না ও নগদ প্রায় কুড়ি হাজার টাকা এমনকী বাসনপত্রও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৫৩
Share:

ঘটনা ১- ৪ ডিসেম্বর বেতাইয়ের আখড়াপাড়ার বাসিন্দা প্রাক্তন সামরিক কর্মী ললিতমোহন বিশ্বাস সপরিবারে অসুস্থ মেয়েকে দেখতে গিয়েছিলেন কলকাতায়। বাড়ি ফিরে দেখেন বাড়ির দরজার তালা যেমন ছিল ঠিক তেমন আছে। তবে ভিতরে ঘরের জিনিসপত্র তছনছ, আলমারির তালা ভাঙা। চুরি হয়ে গিয়েছে প্রায় আট ভরি সোনার গয়না ও নগদ প্রায় কুড়ি হাজার টাকা এমনকী বাসনপত্রও। ললিতবাবুর অনুমান জলের পাইপ বা গাছ বেয়ে উপরে উঠে বাড়ির চিলেকোঠার তালা ভেঙেই ভিতরে ঢুকেছিল চোর।

Advertisement

ঘটনা ২- ওই একই দিনে স্থানীয় ব্যবসায়ী মৃণাল ধোনি বিশেষ কাজে বাড়িতে তালা দিয়ে বেরিয়েছিলেন। পরের দিন বাড়ি ফিরে দেখেন একইভাবে খোয়া গিয়েছে পাইকারি মনোহারী ব্যবসার মালপত্র ও সোনার গয়না।

ঘটনা ৩- আখড়াপাড়ার বাসিন্দা অশোক চাঁদ কর্মসূত্রে বিদেশে থাকেন। বাড়িতে থাকেন তাঁর স্ত্রী ও সন্তান। তিনি শান্তিপুরে গিয়েছিলেন বাপের বাড়ি। ৯ ডিসেম্বর সকালে প্রতিবেশীরা দেখেন অশোকবাবুর বাড়ির দরজার তালা ভাঙা। গৃহকর্ত্রী বাড়ি ফিরে দেখেন তাঁর সামান্য যা কিছু সোনার গয়না ও বাসনপত্র সবটাই চুরি হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

ঘটনা ৪- ওই পাড়ারই বাসিন্দা প্রাক্তন সামরিক জওয়ান জয় সেন সরকারের। ১৯ ডিসেম্বর জয়বাবু সস্ত্রীক দক্ষিণ ভারত ভ্রমণে গিয়েছেন বাড়িতে তালা বন্ধ করে। তাঁর ছেলে জ্যোতির্ময় সরকার কলকাতা থেকে বুধবার বাড়ি ফিরে দেখতে পান বাড়ির মূল দরজার তালা ভাঙা। ভিতরের ঘরের আলমারির ভাঙা। জ্যোতির্ময়বাবুর অভিযোগ প্রায় লক্ষাধিক টাকার সোনা ও নগদ টাকা ও বাসন পত্র নিয়ে গিয়েছে।

একমাসেরও কম সময়ে এ ভাবে একের পর এক বাড়িতে চুরির ঘটনায় রীতিমতো আতঙ্কিত তেহট্ট থানার বেতাই আখরাপাড়ার বাসিন্দারা। রাতে কোনও বাড়িতে লোকজন না-থাকলেই সেই বাড়ির তালা ভেঙে ঢুকে লুঠপাট চালাচ্ছে দুষ্কৃতীরা।

বাসিন্দাদের অভিযোগ দুষ্কৃতী দলটি একেবারেই স্থানীয়। সবদিক জেনে তবে চুরি করতে আসছে। শুধু তাই নয় এমন এই দলে রয়েছে যে নিয়মিত পাড়ার খবরাখবর রাখে। অথচ পুলিশ নির্বিকার। এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি তারা। এমনকী প্রত্যেকটি ঘটনার কথা পুলিশকে জানানোর পরেও আবারও একই রকম ভাবে চুরির ঘটনা ঘটে চলেছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ দিনের পর দিন অকুতোভয় চোরেরা লুঠ করে চলেছে অথচ পুলিশ কিছুই করতে চাইছে না

এ বিষয়ে তেহট্ট থানার পুলিশের কাছ জানতে চাওয়া হলে তাঁরা জানিয়েছেন, তদন্ত চলছে। কিন্তু কেন একের পর এক ঘটনা নিয়মিত ঘটে চলেছে, তবু ধরা যাচ্ছে না দুষ্কৃতীদের? সদুত্তর মেলেনি। বরং পুলিশের তরফে পাওয়া গিয়েছে উদাহরণ। ১৭ ডিসেম্বর তেহট্ট থানার নাজিরপুর পুলিশ ফাঁড়ির একশো মিটারের মধ্যে একটি বাড়িতে ভর দুপুরে চুরির ঘটনায় জড়িত তিন জন কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জেরায় ওই নাবালকেরা চুরির কথা স্বীকার করেছে। উদ্ধার হয়েছে চুরি যাওয়া কিছু সোনাও। পুলিশ আশাবাদি, আখরাপাড়ার চুরির ঘটনার সমাধানও হয়ে যাবে খুব তাড়াতাড়ি।

তবে এই ‘তাড়াতাড়ি’টা কবে, তা জানেন না কেউই। তাই দুশ্চিন্তায়দিন কাটাচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারা। বাড়ি বন্ধ করে দোকানে যেতেও তাঁদের ভয় হয়, জানালেন বেশ কয়েকজন গৃহবধূ। স্থানীয় বাসিন্দা আশিস বিশ্বাস বলেন, “পুলিশে জানিয়েও কোনও ফল হয়নি। এমনকী বাড়েনি ন্যূনতম নিরাপত্তা। কোনও টহলদারির ব্যবস্থা নেই।”

এ দিকে এই ঘটনা সম্পের্ক অবহিতই নন তেহট্টের এসডিপিও সুনীল সিকদার। তিনি স্পষ্টই বলেন, “বেতাইয়ের এই চুরির ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। না জেনে তো কিছু বলতে পারব না।” তবে তিনি আশ্বাসের সুরে বলেন “আমি এখনই তেহট্ট থানায় গিয়ে জানতে চাইব ঘটনাটা কী। তারপর উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ততদিন আতঙ্কেই এলাকাবাসী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement