একঘরে মহিলা, বিডিও-র হস্তক্ষেপে মিটল সমস্যা

গ্রাম্য বিবাদের জেরে একঘরে করে রাখা হয়েছিল এক মহিলাকে। বিডিওর মধ্যস্থতায় সমস্যা মিটল। ঘটনাটি নদিয়ার চাকদহ থানার ঘেটুগাছি পঞ্চায়েতের মহিষডাঙা গ্রামের। ওই মহিলা অবশ্য গত ২৭ অগস্ট পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে জানান, ভিন সম্প্রদায়ের এক যুবককে চাষের কাজে নিয়োগ করায় তাঁকে শাস্তি দিয়েছে মাতব্বরেরা।

Advertisement

সৌমিত্র সিকদার

রানাঘাট শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৫৮
Share:

গ্রাম্য বিবাদের জেরে একঘরে করে রাখা হয়েছিল এক মহিলাকে। বিডিওর মধ্যস্থতায় সমস্যা মিটল। ঘটনাটি নদিয়ার চাকদহ থানার ঘেটুগাছি পঞ্চায়েতের মহিষডাঙা গ্রামের।

Advertisement

ওই মহিলা অবশ্য গত ২৭ অগস্ট পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে জানান, ভিন সম্প্রদায়ের এক যুবককে চাষের কাজে নিয়োগ করায় তাঁকে শাস্তি দিয়েছে মাতব্বরেরা। গ্রামের পুরনো প্রথা হল, মাঠের কাজে কোনও ভিন সম্প্রদায়ের লোককে কাজে লাগানো যাবে না। এমন কথা অবশ্য মানতে চাননি গ্রামের বাসিন্দারা। চাকদহের বিডিও বিপ্লব সরকারও গ্রামে এমন সমস্যা আছে বলে স্বীকার করেননি। তিনি বলেন, “সব শুনে আমার মনে হয়েছে, ওঁদের মধ্যে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। বুধবার সকলকে নিয়ে আলোচনা করে মিটিয়ে দিয়েছি। আর কোনও সমস্যা নেই।”

বছর পঁয়তাল্লিশের ওই বিধবা মহিলা একাই থাকেন। নিজস্ব বিঘাখানেক চাষের জমি আছে। এ ছাড়াও, বিঘা দু’য়েক জমি ভাগে চাষ করেন। তাঁর বক্তব্য, “কয়েক জন গ্রামবাসী তাঁকে কিছু দিন ধরে নানা ভাবে ভয় দেখাচ্ছিল। রাতে ঘরে ঢিল ছোড়া হয়েছে বার কয়েক।” তাঁর অভিযোগ, “গ্রামের নিয়ম হল, অন্য কোনও সম্প্রদায়ের কাউকে দিয়ে মাঠে কাজ করানো যাবে না। আমি সেটা মানিনি। প্রয়োজন হয়েছিল বলে অন্য সম্প্রদায়ের একটি ছেলেকে দিয়ে মাঠে কাজ করিয়েছিলাম। এটাই আমার অপরাধ।” মহিলার অভিযোগ, গ্রামের কিছু লোক তাঁকে ডেকে সভা বসায়। সেখানে বলা হয়, আমার জমি ওদের নামে লিখে দিতে হবে। তিরিশ হাজার টাকাও দাবি করা হয়। সে কথা তিনি না মানায় শাস্তির খাঁড়া নেমে আসে।

Advertisement

অভিযোগ অস্বীকার করে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “সব বানানো কথা বলছেন ওই মহিলা। ওঁর কিছু আচরণ খারাপ লাগায় একদিন হরিসভায় বসে সে কথা বলা হয়েছিল। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, নিজের স্বভাব বদলাবেন না।” সে জন্য ‘বাধ্য হয়ে’ তাঁরা ওই মহিলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন বলেও মেনে নেন ওই ব্যক্তি। তবে একঘরে করা বা ভয় দেখিয়ে টাকা চাওয়ার অভিযোগ মানেননি তিনি। পাশাপাশি তিনি বলেন, “বিডিও এসে বিষয়টি মিটিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। এখন আর কোনও সমস্যা নেই।” ওই মহিলার ছোট জামাই বলেন, “মাকে নিয়ে আমরা সব সময়ে খুব দুশ্চিন্তায় থাকি। আপাতত একটা সভা করে বিডিও সমস্যাটা মিটিয়ে দিয়ে গেলেও পরে ওঁর সঙ্গে ফের এমন ব্যবহার করা হবে না, এ কথা জোর দিয়ে বলতে পারি না। গ্রামবাসীরা তাঁর শাশুড়ি সম্পর্কে ঠিক কথা বলছেন না বলেও তাঁর দাবি। পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের সিদ্দিক মণ্ডল বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমরা এর আগে আলোচনায় বসেছিলাম। কিন্তু সে সময়ে সমস্যা মেটেনি। তবে এ দিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন