গুলিতে বেঘোরে মৃত্যু ছাত্রের, পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ

জনবহুল এলাকায় এক দুষ্কৃতীকে তাড়া করেছিল বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর লোকজন। ছিটকে আসা গুলিতে বেঘোরে প্রাণ গেল এক ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রের। বুধবার রাতে নদিয়ার কৃষ্ণনগর সদরে ইন্দ্রনীল রায় (২০) নামে ওই ছাত্রটির মৃত্যুর পরে ২৪ ঘণ্টা কাটলেও ঘটনায় জড়িতদের কেউ ধরা না পড়ায়, এলাকাবাসীর একটা বড় অংশ প্রশ্ন তুলেছেন পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। এক ধাপ এগিয়ে কৃষ্ণনগরের পুরপ্রধান তথা তৃণমূল নেতা অসীম সাহার অভিযোগ, ‘‘ঘটনাটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, আমাদের শহরে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য কতটা। পুলিশ-প্রশাসন দুষ্কৃতীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না বলেই তারা এ ভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৪ ০২:০৬
Share:

তখনও বেঁচে ইন্দ্রনীল।

জনবহুল এলাকায় এক দুষ্কৃতীকে তাড়া করেছিল বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর লোকজন। ছিটকে আসা গুলিতে বেঘোরে প্রাণ গেল এক ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রের। বুধবার রাতে নদিয়ার কৃষ্ণনগর সদরে ইন্দ্রনীল রায় (২০) নামে ওই ছাত্রটির মৃত্যুর পরে ২৪ ঘণ্টা কাটলেও ঘটনায় জড়িতদের কেউ ধরা না পড়ায়, এলাকাবাসীর একটা বড় অংশ প্রশ্ন তুলেছেন পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। এক ধাপ এগিয়ে কৃষ্ণনগরের পুরপ্রধান তথা তৃণমূল নেতা অসীম সাহার অভিযোগ, ‘‘ঘটনাটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, আমাদের শহরে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য কতটা। পুলিশ-প্রশাসন দুষ্কৃতীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না বলেই তারা এ ভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।”

Advertisement

জেলার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ অবশ্য জানান, পুলিশের কাছে খুনের কারণ এখনও ‘অস্পষ্ট’। এমনকী, কৃষ্ণনগরের রাস্তায় ‘গ্যাংওয়ার’ চলছিল বলেও তাঁর জানা নেই। তাঁর বক্তব্য, “এক স্থানীয় দুষ্কৃতীকে আটক করে জেরা চলছে। আশা করছি, দ্রুত ব্যাপারটা স্পষ্ট হবে।”

কলকাতার গড়িয়া এলাকার একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছিলেন আদতে নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের বাসিন্দা ইন্দ্রনীল। দাদুর বাৎসরিক শ্রাদ্ধে যোগ দিতে বুধবার রাত সওয়া ৮টা নাগাদ ট্রেন থেকে কৃষ্ণনগর স্টেশনে নেমে মেসোমশাই সুবোধ প্রামাণিকের সঙ্গে রিকশা করে নাজিরাপাড়ায় মামাবাড়ি যাচ্ছিলেন। সুবোধবাবু বলেন, “আচমকা একটা শব্দ হল। ভেবেছিলাম রিকশা বা সাইকেলের টায়ার ফেঁসেছে। তখনই ইন্দ্রনীল বলে, ওর পেটে কী যেন ঢুকেছে। দেখি, রক্তে ভেসে যাচ্ছে ও!”

Advertisement


ইন্দ্রনীলের বাবা গৌতম রায়। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ঘটনাস্থল বেলেডাঙা মোড়। ইন্দ্রনীলদের রিকশা থেকে সামান্য দূরেই তখন এলাকার পরিচিত সমাজবিরোধী ব্যাঙা সিংহের দলের লোকজন তাড়া করেছিল বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নিতাই দাসের দলের এক জনকে। এক সময় নিতাইয়ের ঘনিষ্ঠ ছিল ব্যাঙা। কৃষ্ণনগর স্টেশন লাগোয়া শক্তিনগর, বেলেডাঙা বাজার এবং গরুর হাটের ব্যবসায়ীদের থেকে কে, কতটা তোলা আদায় করবে তা নিয়ে বছর দেড়েক আগে তাদের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। মাঝেমধ্যেই এক পক্ষ অন্য পক্ষের উপরে হামলা করে। ব্যাঙার মা-কে বছরখানেক আগে খুন করার অভিযোগ রয়েছে নিতাইয়ের সঙ্গীদের বিরুদ্ধে। তার পর থেকে ব্যাঙা এলাকাছাড়া ছিল। বুধবার সে এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করে। ব্যাঙার লোকজন নিতাইয়ের দলের এক জনকে দেখতে পেয়ে জনবহুল রাস্তা দিয়েই তাড়া করে। গুলিও চালায়।

রক্তাক্ত ইন্দ্রনীলকে সঙ্গে সঙ্গে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সুবোধবাবু বলেন, “হাসপাতালে ডাক্তার বললেন, ইন্দ্রনীলের তলপেটে গুলি লেগেছে।” অবস্থা খারাপ হতে থাকায় তাঁকে কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে ‘রেফার’ করা হয়। পথে রানাঘাটের কাছে অ্যাম্বুল্যান্সে মা ইলোরাদেবীর কোলেই মারা যান ওই ছাত্র। ইন্দ্রনীলের বাবা গৌতম রায় বলেন, “জ্ঞান ছিল ছেলের। শেষ মুহূর্তে বলল, ‘বাবা প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছে’। তার পরে ওর বুকটা আর ওঠানামা করেনি!” পেশায় গৃহশিক্ষক গৌতমবাবু জানান, ছোট থেকেই ইন্দ্রনীল চুপচাপ থাকতেন। বই ছিল তাঁর সঙ্গী। মাধ্যমিকে ৯৫ শতাংশ এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ৭৮ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করে তিনি মেক্যানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হন। গৌতমবাবুর আক্ষেপ, “আমার শান্ত ছেলেটাকে এ ভাবে চলে যেতে হল কেন?”

সমাজবিরোধীদের গণ্ডগোলের মাঝে পড়ে নিরীহ নাগরিকের প্রাণ যাওয়ার ঘটনা অবশ্য এই প্রথম নয় নদিয়ায়। মাসখানেক আগে শান্তিপুরেও দুষ্কৃতীদের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষের সময় লক্ষ্যভ্রষ্ট গুলি লেগে এক বৃদ্ধা মারা যান। তার পরে জেলা সদরে বুধবার রাতের ঘটনা। সে কথা উল্লেখ করে কৃষ্ণনগরের পুরপ্রধানের মন্তব্য, “পুলিশ-প্রশাসন এখনই সক্রিয় না হলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement