এমনই দশা হরিণঘাটার মোল্লাবেলিয়া সেতুটির। —নিজস্ব চিত্র।
গাড়ি উঠলেই দুলে ওঠে সেতু। যতক্ষণ না গাড়ি পার হয়ে যায়, নাম-জপ করেন লোকজনকে জানে কী হয়।
নদিয়ার হরিণঘাটার মোল্লাবেলিয়ায় যমুনা নদীর সেতুটি দীর্ঘ দিনের। কমপক্ষে বছর পঞ্চাশ আগে সেতুটির উদ্বোধন হয়েছিল। মোল্লাবেলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত ছাড়াও দেউলী, নগরউখড়া, বিরহী ১ এবং ২ পঞ্চায়েতের মানুষ এই সেতু ব্যবহার করেন। একদিকে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ, অন্য দিকে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। এই যোগসূত্র ছিন্ন হলে কমবেশি সাত কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে যাতায়াত করতে হবে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
সংস্কারের অভাবে বসে গিয়েছে এহেন গুরুত্বপূর্ণ সেতুর একাংশ। সেদিক দিয়ে গাড়ি গেলে ভেঙে পড়তে পারে যে কোনও মুহূর্তে। এ জাতীয় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে ইট দিয়ে ‘গার্ডওয়াল’ করে দেওয়া হয়েছিল সেতুর দু’প্রান্তে। কিন্তু কোনও গাড়ির ধাক্কায় সেটিও ভেঙে গিয়েছে। সেতুর নীচে বিপজ্জনক ভাবে খসে পড়ছে চাঙড়। বেরিয়ে আছে মরচে ধরা লোহার রড।
স্থানীয় বাসিন্দা আসুবারি বিশ্বাস বলেন, এক সময় সেনারা এই রাস্তা ব্যবহার করত। এখন একটা গাড়ি গেলেই মনে হয়, এই বুঝি ভেঙে পড়ল। গাড়িটা পার না-হওয়া পর্যন্ত আতঙ্কে থাকতে হয়।” বিশেষ করে বর্ষার সময়ে, যে কোনও দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। পঞ্চায়েত-সহ বিভিন্ন জায়গায় সংস্কারের আবেদন জানানো হয়েছে বলে দাবি বাসিন্দাদের। কিন্তু, কারও কোনও হেলদোল নেই।
রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রাক্তন রাষ্ট্রমন্ত্রী ও হরিণঘাটার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক বঙ্কিম ঘোষ বলেন, “আমাদের এই সেতু সংস্কার করার কথা ছিল। কিন্তু তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর এদিকে নজর দেয়নি। প্রতিদিন সমস্যা আরও বেড়ে চলেছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ তথা তৃণমূল নেতা চঞ্চল দেবনাথ জানান সেতুর সমস্যা নিয়ে পূর্ত দফতরের সঙ্গে আলোচনা চলছে। মোল্লাবেলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের আলাউদ্দিন মণ্ডল বলেন, “বিষয়টি প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে জানিয়েছি। দুবার মাপজোক হয়ে গিয়েছে। আশা করছি এবার কিছু কাজ হবে।” পূর্ত দফতরের কল্যাণী বিভাগের বাস্তুকার তাপস মাইতি বলেন, “জানি সেতুর অবস্থা খুবই খারাপ। এক দিকে খানিকটা বসে গিয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে দু’দিকে ইটের গার্ডওয়াল দেওয়া হয়েছিল সেটাও ভেঙে গিয়েছে। সেক্ষেত্রে নতুন করে সেতু নির্মাণ পরিকল্পনা আছে। সেভাবেই কাজকর্ম এগোচ্ছে। আপাতত পুরনো সেতুটি সংস্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”