ছাত্র সংঘর্ষে উত্তাল ডোমকল

চারদিকে পুলিশ, কলেজ যেন যুদ্ধক্ষেত্র

কলেজ নয়, যেন যুদ্ধক্ষেত্র। যে কোনও সময় হামলা চালাতে পারে শত্রুপক্ষ। তাই লাঠি, বেল্ট নিয়ে তৈরি অন্য পক্ষকখনও বা আগ্নেয়াস্ত্র। কলেজ চত্বর ছাড়িয়ে কখনও কখনও ক্লাসের মধ্যেও শুরু হচ্ছে হাতাহাতি। ছাত্র সংসদের নিবার্চন যত এগিয়ে আসছে, ততই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছে মুর্শিদাবাদ আদর্শ মহাবিদ্যালয় ও ডোমকল কলেজ। পরিস্থিতি এতটাই তেতে আছে যে, দু’টি কলেজেই বসাতে হয়েছে পুলিশ পিকেট। নিত্য ছাত্রসংঘর্ষ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ-প্রশাসন।

Advertisement

সুজাউদ্দিন

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৫২
Share:

কলেজ নয়, যেন যুদ্ধক্ষেত্র। যে কোনও সময় হামলা চালাতে পারে শত্রুপক্ষ। তাই লাঠি, বেল্ট নিয়ে তৈরি অন্য পক্ষকখনও বা আগ্নেয়াস্ত্র। কলেজ চত্বর ছাড়িয়ে কখনও কখনও ক্লাসের মধ্যেও শুরু হচ্ছে হাতাহাতি। ছাত্র সংসদের নিবার্চন যত এগিয়ে আসছে, ততই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছে মুর্শিদাবাদ আদর্শ মহাবিদ্যালয় ও ডোমকল কলেজ। পরিস্থিতি এতটাই তেতে আছে যে, দু’টি কলেজেই বসাতে হয়েছে পুলিশ পিকেট। নিত্য ছাত্রসংঘর্ষ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ-প্রশাসন।

Advertisement

মুর্শিদাবাদ আদর্শ মহাবিদ্যালয় যা ইসলামপুর কলেজ বলেই পরিচিত বেশি, ছাত্র পরিষদের দখলে এখন। ৩২টি ছাত্র প্রতিনিধি আসনের সব ক’টিই দখলে রেখেছে তারা। অন্য দিকে, ডোমকল কলেজ দীর্ঘ দিন বাম ছাত্র সংগঠনের দখলে থাকলেও গত বছর ওই কলেজের দখল নিয়েছে ছাত্র পরিষদ। ৫১টি আসনের মধ্যে ২৮টিতে জেতে তারা। রাজ্যে পালাবদল ঘটলেও মুর্শিদাবাদের এই কলেজগুলিতে কংগ্রেস তাদের ছাত্র সংগঠনকে মজবুত ভাবেই ধরে রেখেছিল এতদিন। কিন্ত কংগ্রেস নেতা মান্নান হোসেন ও তাঁর ছেলে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ডোমকল কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক যোগ দিয়েছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদে। তা নিয়ে ওই কলেজ প্রায় দিনই উত্তাল হয়ে উঠছে ছাত্র সংঘর্ষে। গত শুক্রবার কলেজে গণ্ডগোলের জেরে জখম হন কয়েকজন ছাত্র। মাস খানেক আগে ইসলামপুর কলেজেও দু’পক্ষের সংঘর্ষে জখম হয়েছিলেন তিন ছাত্র। সপ্তাহখানেক আগেও ওই কলেজে দু’পক্ষের মধ্যে গণ্ডগোল বাধে।

প্রতিটি ঘটনাতেই কলেজ ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের উপস্থিতি চোখে পড়ছে। তা রুখতে পুলিশ পিকেট বসিয়েও লাভ হয়নি কিছু। মুর্শিদাবাদ জেলার ছাত্র পরিষদের সভাপতি সরফরাজ শেখ রুবেল বরং অভিযোগ করছেন, “পুলিশকে নিয়ে তৃণমূলের ছেলেরা বিভিন্ন কলেজে ছাত্রদের উপরে চাপ বাড়াচ্ছে। ভয় দেখানো হচ্ছে। আমরা শিক্ষাঙ্গনে পুলিশি চৌকির বিরোধিতা করছি।”

Advertisement

তবে পুলিশ নিয়ে ভয় দেখানোর অভিযোগ মানতে নারাজ তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। জেলার তৃণমূল ছাত্র পরিষের সভাপতি রাজা ঘোষের দাবি, ‘‘একদিকে যেমন জেলায় কংগ্রেসে ভাঙন চলছে, ঠিক তেমন ভাবে কলেজেও ছাত্র পরিষদকে ছুড়ে ফেলতে চাইছেন ছাত্র-ছাত্রীরা। এই অবস্থায় ছাত্র পরিষদের নেতা-কর্মীরা বহিরাগত গুন্ডা ঢুকিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসগুলিকে যুদ্ধ ক্ষেত্রে পরিণত করছে। পুলিশ নিয়ে অযথা অপপ্রচার করছে ছাত্র পরিষদ।”

সাধারণ পড়ুয়াদের বক্তব্য, গণ্ডগোলটা হচ্ছে দু’পক্ষের তরফেই। মুর্শিদাবাদ আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র রাহুল শেখের কথায়, ‘‘কলেজে ভর্তির পর থেকে দেখছি মারপিট চলছে। কেউ কম যায় না। কলেজে যেতেই ভয় করে এখন। বাড়ির লোকেরাও বারণ করছেন কলেজে যেতে।’’ ওই কলেজেরই প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীর বাবা মিনহাজুল শেখ বলেন, ‘‘মেয়ের লেখাপড়ার থেকে নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছি। কলেজে গেলেই কখন ফিরবে সেটা ভাবি।’’ ডোমকল কলেজের এক প্রাক্তন ছাত্র মুক্তি রায় বলেন, “বছর দশেক আগে কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম যখন, অনেক প্রতিকূলতা ছিল। রাস্তা ছিল না। কলেজের পরিকাঠামো উন্নত নয়। শিক্ষকের সংখ্যাও কম ছিল। কিন্তু এত অশান্তি ছিল না। পুলিশ পিকেট তো দূরের কথা কোনও দিন দেখিনি কলেজে পুলিশ যেতে।’’

কলেজ কর্তৃপক্ষও এভাবে পুলিশ বসানোর বিরুদ্ধে। নেহাত উপায় নেই বলেই পুলিশ ডাকতে হচ্ছে তাঁদের। ডোমকল কলেজের অধ্যক্ষা অনুরাধা সেনগুপ্তের কথায়, ‘‘এটা আমার লজ্জা, কলেজে পুলিশ পিকেট বসাতে হচ্ছে। কিন্তু উপায় নেই। আমাদের ছাত্ররা যেন আর ছাত্র নেই। ক্লাসের মধ্যে চলছে মারপিট-স্লোগান। প্রাক্তন বেকার ছাত্ররা কলেজে এসে দাদাগিরি করছে।’’ মুর্শিদাবাদ আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক আবার এই নিয়ে কথা বলার আগে শর্ত দিলেন, নাম প্রকাশ করা যাবে না। ওই অধ্যাপকের কথায়, “যে ভাবে কলেজে রাজনীতির কারবারীদের দাপাদাপি শুরু হয়েছে তাতে দমবন্ধ এক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এই ভাবে চলতে থাকলে কলেজগুলি গুন্ডা তৈরির কারখানায় পরিণত হবে। মুখ বুজে সব মেনে নিলে আমরা হব গুন্ডা তৈরির কারিগর।’’

শুধু কী কলেজ কর্তৃপক্ষ, ছাত্র রাজনীতির এই রূপে জেরবার পুলিশ-প্রশাসনও। ডোমকলের এসডিপিও অরিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘কলেজ নিয়ে আমরা প্রায় দিশেহারা। নিত্যদিন ঝামেলা হচ্ছে। আর কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের ফোন করেই দায় সারছেন। নিজেরা কোনও ছাত্রের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেন না। এমনকী অভিযোগটুকুও করেন না।” পুলিশের এক বড়কর্তার কথায়, “আমাদের মহকুমায় আরও কয়েকটি কলেজ থাকলে থানায় তালা ঝুলিয়ে সেখানেই থাকতে হত পুলিশকে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement