শোকার্ত দুর্গাদাসের পরিবার (বাঁ দিকে)। সায়ন্তনের বাড়িতে পড়শিদের ভিড় (ডান দিকে)।—নিজস্ব চিত্র।
নিখোঁজ দুই স্কুল পড়ুয়ার দেহ উদ্ধার করল পুলিশ। শনিবার বিকেলে সাগরদিঘি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অ্যাশপন্ড থেকে মেলে দুর্গাদাস চক্রবর্তীর (১৪) দেহ। রবিবার সকালে ওই একই জায়গা থেকে উদ্ধার করা হয় সায়ন্তন সরকারের (১৪) দেহ। ওই দুই ছাত্র রঘুনাথগঞ্জ হাই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র। পুলিশ জানিয়েছে, দুর্গাদাস রঘুনাথগঞ্জ লাগোয়া বাহাদিনগর গ্রামে মামার বাড়িতে থাকত। সায়ন্তনের বাড়ি ঘোড়শালায়। শুক্রবার থেকে নিখোঁজ ছিল ওই দুই ছাত্র। দুই ছাত্রের পরিবার থেকে নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। ঘটনার পর পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে। জেলা পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “ওই দুই ছাত্র ওখানে গেল কেন, সঙ্গে কেউ ছিল কি না এবং ছাত্রদের ফোনের কল লিস্ট সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাদাস ও সায়ন্তন ছিল অন্তরঙ্গ বন্ধু। শুক্রবার বাড়ি থেকে স্কুলের পোশাক পরে তারা বেরিয়ে যায়। তারপর তারা আর বাড়ি ফেরেনি। ওই দু’জনের কাছে মোবাইল ফোন ছিল। ওই দুই ছাত্রের পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ তাঁদের বিভ্রান্ত করেছে। মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন দেখে কখনও পুলিশ বলেছে ওই দুই ছাত্র রয়েছে মির্জাপুরে, কখনও বলেছে রঘুনাথগঞ্জ শহর কিংবা জঙ্গিপুর বরজে। মির্জাপুর এলাকাতে রয়েছে ওই অ্যাশপন্ড। পুলিশ এরকম বিভ্রান্ত না করলে শুক্রবারেই ওই অ্যাশপন্ড এলাকায় ওই দুই পড়ুয়ার খোঁজ করা যেত বলে দাবি তাদের পরিবারের। দুর্গাদাসের মা মুনমুন চক্রবর্তী বলেন, “স্কুলে যাবে বলেই তো বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। তারপর কী করে যে এসব হয়ে গেল কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।” সায়ন্তনের বাবা সুবীর সরকার বলেন, “পুলিশ ঠিকমতো তদন্ত করলেই আসল ঘটনা সামনে আসবে। সে কথা পুলিশকেও আমরা বলেছি।” শনিবার বিকেলে সাগরদিঘি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অ্যাশ পন্ডে স্থানীয় লোকজন এক কিশোরের মৃতদেহ ভাসতে দেখেন। রবিবার সকালে ওই পন্ডেই আর একজনের দেহ মেলে। পরে পরিবারের লোকজন তাদের দেহ শনাক্ত করেন।
ঘটনার পর থেকে দফায় দফায় ওই ছাত্রদের বন্ধুদের থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হলেও আপাতত পুলিশকে না জানিয়ে তারা শহর ছাড়তে পারবে না বলে পুলিশ জানিয়েছে। ওই দুই ছাত্রদের পরিবারের তরফে এখনও পর্যন্ত পুলিশের কাছে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।
রঘুনাথগঞ্জ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বপন দাস বলেন, “দুর্গাদাস ও সায়ন্তন মাঝারি মানের ছাত্র হলেও দু’জনেই ছিল যথেষ্ট শান্ত স্বভাবের। তবে গত দু’মাস ধরে বাড়ি থেকে স্কুলে আসার নাম করে বাড়ি থেকে বেরোলেও স্কুলে আসছিল না।”
সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, ওই দুই ছাত্র-সহ জনা আটেকের একটা দল ছিল। তারা সবসময় একসঙ্গে থাকত, ঘুরতে যেত। শহরের সদরঘাটে নিয়মিত তারা সান্ধ্য আড্ডাও দিত। ওই দুই ছাত্রের পরিবারের সন্দেহ, এই ঘটনার সঙ্গে ওই দুই পড়ুয়ার বন্ধুদেরও কোনও যোগ থাকলেও থাকতে পারে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “কোনও সম্ভবনাই উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।” ওই দুই ছাত্রের মৃতদেহ যেখানে পাওয়া গিয়েছে অ্যাশপন্ডের পাশ থেকে দু’টি সাইকেল, স্কুল ব্যাগ, দু’টি মোবাইল, চশমা ও স্কুলের পোশাকও উদ্ধার করেছে পুলিশ।