অধ্যক্ষকে তালা দিয়ে বাইরে ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা। —নিজস্ব চিত্র।
ছাত্র বিক্ষোভের আশঙ্কা আঁচ করে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। কয়েক ডজন পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন ছিল সশস্ত্র বিএসএফ জওয়ানও। তা সত্ত্বেও মঙ্গলবার বহিরাগতদের নিয়ে কলেজে ঢুকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের ঘরে তালা ঝোলাল এসএফআই। অন্য দিকে, এ দিন কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতাদেরও দলবল-সহ কলেজে আসার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত না আসায় কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে পুলিশ।
বাড়তি ছাত্রছাত্রীর ভর্তির দাবিতে এ দিন কলেজ খুলতেই পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী এসএফআইয়ের সমর্থকরা জঙ্গিপুর কলেজে বিক্ষোভ দেখান। পরে আলোচনার জন্য কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অসীম মণ্ডল ৫ জন ছাত্রকে তাঁর ঘরে ঢোকার অনুমতি দিলে এসএফআইয়ের ছাত্ররা তাঁর ঘরে ঢোকেন। তাঁদের দেওয়া দাবিপত্র নিলেও ছাত্র ভর্তির দাবি মানতে রাজি হননি তিনি। ফলে তাঁদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। অভিযোগ, তারপরেই এসএফআই ছাত্ররা অসীমবাবু ঘরে থাকা অবস্থায় তাঁ র ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেন। ঘরের সামনে বসে বিক্ষোভও দেখাতে শুরু করেন। ঘণ্টাখানেক পর পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে ফের ঘরের তালা খুলে দু’পক্ষের আলোচনা শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয় বাড়তি ছাত্রভর্তির অনুমোদন চেয়ে ফের কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আবেদন জানাবে কলেজ।
বাড়তি ছাত্রভর্তি নিয়ে গত জুন মাস থেকেই ওই কলেজে ছাত্র সংগঠনগুলি বিক্ষোভ দেখিয়ে আসছে। ৩০ জুন অনলাইন ভর্তির কাউন্সেলিংয়ের দিন দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় ৩ ছাত্র সংগঠনের মধ্যে। এমনকি মারামারিতে জখম ৪ জনকে ভর্তি করতে হয় জঙ্গিপুর হাসপাতালে। ছাত্র সংগঠনগুলির অভিযোগ, দীর্ঘদিন থেকে জঙ্গিপুর কলেজে অনার্সে যা আসন তার অনেক বেশি ছাত্র ভর্তি হয়ে এসেছে। গত বছরই বাংলা অনার্সে ৭৩টি আসন থাকলেও ভর্তি হয়েছে ২০০ জন। ইংরেজি অনার্সে ৪৯ জনের জায়গায় ভর্তি হয়েছে ১১০ জন। এমনকি ল্যাবরেটরি ব্যবহার হয় এমন বিষয় ভূগোল অনার্সেও ৮৪ জনের জায়গায় ২১০ জন ছাত্র ভর্তি নেওয়া হয়েছে। ১৩টি অনার্স বিষয়ের সবেতেই এভাবে বাড়তি ছাত্রভর্তি করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি ছাড়াই। পাশ কোর্সে ৭১৬ জনের জায়গায় ১৬০০-র বেশি ছাত্র ভর্তি হয়েছে। তাঁদের দাবি, তাহলে এ বছর কেন বাড়তি ছাত্র ভর্তি নেওয়া হবে না। কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে অবশ্য বলা হয়েছে, ছাত্র সংগঠনগুলির দাবি মেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে বাড়তি ছাত্র ভর্তি নেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ও কলেজের পরিকাঠামো খতিয়ে দেখার জন্য দুই অধ্যাপিকাকে ওই কলেজে পাঠান। তাঁরা কলেজ ও ছাত্র সংগঠনগুলির সাথে কথা বলার পর ফিরে গিয়ে রিপোর্ট জমা দেন। সেই রিপোর্টয়ের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের আবেদন নামঞ্জুর করে।
কলেজে স্থায়ী অধ্যক্ষ অবসর নিয়েছেন গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর। তারপর থেকে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেন কলেজেরই বাংলা বিভাগের প্রধান অসীমবাবু। কিন্তু ক্রমাগত ছাত্র বিক্ষোভে বিরক্ত অসীমবাবু। এক সময় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে তিনি ইস্তফাও দিতে চান। তিনি বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে কলেজে পাশ কোর্সে ৭০০ এবং বায়ো সায়েন্সে গুটিকয় আসন ফাঁকা রয়েছে। অর্থবিদ্যা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও হিসাবশাস্ত্রে কয়েকটি অনার্সের আসনও ফাঁকা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি ছাড়া সেই ফাঁকা আসনে নতুন কাউকেই ভর্তি করা যাবে না।” তিনি আরও বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ খুব শিঘ্রই এ নিয়ে বৈঠকে বসবেন জানিয়েছেন।” তবে এসএফআইয়ের দাবি মেনে বিশ্ববিদ্যালয়কে আবারও চিঠি দিতে সম্মত হলেও সেই চেষ্টা ফলপ্রসু হবে কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত নন তিনি।