জয়ের লক্ষ্যে এখনই মাঠে তিন ছাত্র সংগঠন

দুয়ারে কড়া নাড়ছে কলেজ ভোট। সেই নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এখনই ঘর গোছানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী তিন ছাত্র সংগঠন ছাত্র পরিষদ, এসএফআই এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। তিন ছাত্র সংগঠনের মধ্যেই কলেজ ভোটে জয়ী হওয়ার জন্য ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে তৎপরতা দেখা দিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৩১
Share:

বহরমপুর কলেজে চলছে নবীনবরণ উৎসব। —নিজস্ব চিত্র।

দুয়ারে কড়া নাড়ছে কলেজ ভোট। সেই নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এখনই ঘর গোছানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী তিন ছাত্র সংগঠন ছাত্র পরিষদ, এসএফআই এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। তিন ছাত্র সংগঠনের মধ্যেই কলেজ ভোটে জয়ী হওয়ার জন্য ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে তৎপরতা দেখা দিয়েছে।

Advertisement

গত বার মুর্শিদাবাদ জেলার ১৫টি কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্র পরিষদ ১২টি কলেজে জয়ী হয়। বাকি তিনটে কলেজের মধ্যে লালবাগ নেতাজি সুভাষচন্দ্র সেন্টেনারি কলেজ ও পাঁচথুপি হরিবালা গৌরীবালা কলেজ দখল করে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। জঙ্গিপুর কলেজে এসএফআই জয়লাভ করে।

এ বার ছাত্র পরিষদ যেমন ১৫টি কলেজেই জয়ী হয়ে বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলিকে ‘হোয়াইট ওয়াশ’ করার লক্ষ্যে ভোটে লড়বে, তেমনি তৃণমূল ছাত্র পরিষদ মরিয়া আরও বেশি কলেজে জিতে ছাত্র সংসদ নিজেদের দখলে রাখতে। অন্য দিকে, এসএফআই-ও সমস্ত কলেজে প্রার্থী দিয়ে ক্ষমতা বাড়াতে চায়। তবে কংগ্রেসের গড় হিসেবে পরিচিত মুর্শিদাবাদে ছাত্র পরিষদ অপেক্ষাকৃত ভাল জায়গায় রয়েছে। তবে বেশ কয়েকটি কলেজে এসএফআই ভাল লড়াই দেবে আশা তাদের।

Advertisement

সম্প্রতি মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে এসএফআইয়ের লোকাল ও জোনাল সম্মেলন চলছে। ওই লোকাল সম্মেলন থেকে এসএফআই আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।

এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, “এসএফআইয়ের বিভিন্ন লোকাল সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে স্থানীয় ছাত্রদের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগের কাজ শুরু হয়েছে। ফলে দল এখন অনেকটা ভাল জায়গায়। তবে সব কলেজে না পারলেও অনেক কলেজে লড়াই করতে পারব বলে বিশ্বাস।” বিশেষ করে ডোমকল, ইসলামপুর, বেলডাঙা, সালার, আমতলা, পাঁচথুপি, লালগোলা, জঙ্গিপুর ও বহরমপুরের দুটি কলেজে এসএফআই ভাল ফল করতে পারবে বলে জানান মুস্তাফিজুর।

গত বার এসএফআই বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি। বহরমপুর কলেজে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও পরে তা বাতিল হয়ে যায়।

মুস্তাফিজুর বলেন, “গত বার কৃষ্ণনাথ কলেজে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কোনও গণতান্ত্রিক পরিবেশ ছিল না। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার অনেক আগে থেকেই ছাত্র পরিষদ ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মধ্যে মারপিট বেঁধে যাওয়ায় আমাদের ছাত্র-সমর্থকেরা সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। ফলে ওই কলেজে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারিনি। তবে বহরমপুর কলেজ কর্তৃপক্ষ অবৈধ ভাবে আমাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেয়। এ বার বহরমপুরের ওই দুটি কলেজে প্রার্থী দেব আমরা।”

তৃণমূল অবশ্য এখন থেকেই জেলার বিভিন্ন কলেজে, বিশেষ করে যে কলেজগুলি ছাত্র পরিষদের দখলে রয়েছে, সেই ১২টি কলেজ ছাত্র সংসদের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষের কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। উদ্দেশ্য, ছাত্র পরিষদের আর্থিক দুর্নীতি ছাত্রছাত্রীদের সামনে তুলে ধরা।

তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি রাজা ঘোষ বলেন, “স্মারকলিপি কর্মসূচি গ্রহণের মধ্যে দিয়ে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের কাছে ছাত্র পরিষদের দুর্নীতির কথা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মন জয় করা আমাদের উদ্দেশ্য। আমরা স্মারকলিপি জমা দেওয়ার ফলে ছাত্রছাত্রীরাও বুঝতে পারছেন যে ছাত্র পরিষদ দুর্নীতিগ্রস্ত দল। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে যে টাকা খরচ করার কথা ছিল, তা না করে ওই টাকায় ছাত্র পরিষদের নেতা-কর্মীরা ফূর্তি করে উড়িয়েছে। ফলে ছাত্রপরিষদের কাছ থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।” তবে এ বার প্রতিটি কলেজে ছাত্র প্রতিনিধি দাঁড় করানো হবে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কোনও কলেজে ছাত্র পরিষদ জিততে পারবে না বলেও জানান তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ওই নেতা।

কলেজ ভোট জেতা নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তিত নয় ছাত্র পরিষদ। ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি সরফরাজ শেখ রুবেল বলেন, “আমাদের কোনও রণকৌশল নেই। তা সত্ত্বেও বলছি আমরা জিতবই। গত বার ১২টি কলেজে জিতেছি। এবার বাকি কলেজগুলিতেও জিতব।”

এই অবস্থায় আশা ও আকাঙ্খায় দুলছে এসএফআই। তারা ছাত্র পরিষদ ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দ্বৈরথে আতঙ্কিতও। মুস্তাফিজুর বলেন, “এসএফআইয়ের লোকাল ও জোনাল সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে বুঝতে পারছি, সংগঠন আগের থেকে অনেক বেশি মজবুত হয়েছে। ফলে বিভিন্ন কলেজে ভাল লড়াই হবে। তবে আশঙ্কা প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকবে কিনা! এক দিকে কলেজের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করবে তৃণমূল। অন্য দিকে, পুলিশ ও প্রশাসনের সহায়তায় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বন্দোবস্ত হবে।” তাঁর কথায়, “তাই এখন থেকেই সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা, ছাত্র পরিষদ ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দুর্নীতির কথা এবং গোটা রাজ্যে জুড়ে শিক্ষাক্ষেত্রে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে, সে কথাও ছাত্রছাত্রীদের বোঝানো হচ্ছে।”

ছাত্র পরিষদের নেতাদেরও কথা, তৃণমূল গায়ের জোরে, ভয় দেখিয়ে, প্রলোভন দেখিয়ে এবং পুলিশকে ব্যবহার করে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে দলে টানার চেষ্টা করছে। ছাত্র পরিষদের ওই কথায় সায় রয়েছে এসএফআইয়েরও।

এসএফআই সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি লালগোলা কলেজে একটি গণ্ডগোলের জেরে ১২ জন ছাত্রের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করেছে পুলিশ। তারা দীর্ঘ দিন ভয়ে বাড়ি ছাড়া ছিল। ওই ঘটনায় অবশ্য তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে পুলিশ জামিনযোগ্য ধারায় মামলা করে।

তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নতুন দল হিসেবে মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন কলেজের ক্ষমতা দখলের চেষ্টায়, ছাত্র পরিষদ নিজেদের সংগঠন অটুট রাখতে আর এসএফআই নিজেদের হারিয়ে যাওয়া ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় মরিয়া। তাই কলেজ ভোটের বাদ্যি বাজতে না বাজতেই তিন পক্ষ তাদের অস্ত্রে শান দেওয়া শুরু করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন