ভোরবেলা দরজা খুলিয়ে ঠিকানা খোঁজার ভান করে ছিনতাইয়ের হাওয়া এবার কল্যাণীতে। অভিযোগ, শিল্পাঞ্চলে একের পর এক বাড়িতে এই একই কায়দায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও পুলিশ কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথের ভূমিকায়। কিছুদিন আগেও নিমতায় প্রাতঃভ্রমণকারীদের হার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটত। মোটরবাইকের পিছনে বসা আরোহী বয়স্কা প্রাতঃভ্রমণকারীদের দাঁড় করিয়ে কারও বাড়ির ঠিকানা বা জায়গার নাম জানতে চাইত। ভেবে কিছু বলার আগেই সেই প্রৌঢ়া বা বৃদ্ধা গলার হার নিয়ে চম্পট দিত মোটরবাইক আরোহীরা
মঙ্গলবার কল্যাণীর বি ১/১৪২ নম্বর বাড়ির মালিক আশি ছুঁইছুঁই নীলা ভাদুড়ির অভিজ্ঞতাও প্রায় একই রকম। ঘুম ভাঙার পর কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে দরজা খুলতেই নীলাদেবী দেখেন লাল রঙের একটা বাইক দাঁড় করানো রয়েছে দরজার সামনে। বছর ত্রিশের কালো, দোহারা চেহারার এক যুবক একজনের বাড়ির ঠিকানা জানতে চায়। অপরিচিত ওই নামটা শোনার পরে বৃদ্ধা যখন ভাবার চেষ্টা করছেন ওই নামে কেউ সেখানে আছেন কিনা তখনই তাঁর গলায় থাকা সোনার হার ছিনিয়ে নিয়ে বাইক স্টার্ট দিয়ে হাওয়া। গত এক সপ্তাহের মধ্যে ওই এলাকায় এরকম একাধিক ঘটনা ঘটেছে। কল্যাণীর ফাঁকা রাস্তায় এমনিতেই গাড়িঘোড়া কম। নজরদারির জন্য পুলিশি ব্যবস্থাও কার্যত নেই। বছর খানেক আগে কল্যাণী সেন্ট্রাল পার্ক, আইটিআই মোড়, স্টেশন এলাকা এবং গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে সিসিটিভি বসানোর পরিকল্পনা হয়েছিল। যদিও সেই পরিকল্পনা এখন বিশ বাঁও জলে। শহর কল্যাণীর মধ্যেই চারশো কিলোমিটারেরও বেশি গোলোকধাঁধার মতো রাস্তা। পুলিশ কর্তাদের দাবি, কল্যাণী থানার অল্প সংখ্যক পুলিশকর্মীর পক্ষে এতবড় এলাকা টহল দেওয়া অসম্ভব। যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, পুলিশের সাদা পোশাকের বাহিনী (পিসি পার্টি) থাকা সত্ত্বেও তারা বেশি ব্যস্ত থাকে এক্সপ্রেসওয়েতে ও শহরের বিভিন্ন মোড়ে গরুর লরি থেকে টাকা নেওয়ার জন্য। প্রসঙ্গত, এই শিল্পাঞ্চলের সবথেকে বড় চুরির অভিযোগে ধরা পড়া শরত জেলে থাকাকালীন কল্যাণীতে চুরি, ছিনতাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কল্যাণী থানার তদন্তকারী অফিসারের তদন্তে সন্তুষ্ট না হয়ে কৃষ্ণনগর আদালত শরতকে মাস কয়েক আগে জামিনে মুক্তি দেয়। তারপর থেকেই আবার চুরি-ছিনতাইয়ের প্রকোপ বাড়ছে কল্যাণীতে। কল্যাণীর এসডিপিও রাণা মুখোপাধ্যায় বলেন, “গত কয়েকদিনে এরকম বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে আমরাও উদ্বিগ্ন। ওই এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে।”