থমথমে মুখে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন হুমায়ুন

এ ভাবেই উল্টে যায় রাজনীতির পাশা। যে হুমায়ুন কবীর একদিন মুশির্র্দাবাদে তৃণমূলের প্রায় সর্বময় কর্তা ছিলেন, তাঁরই স্থান হল না দলের কোনও কমিটিতেই। এমনকী বৈঠকের ঘর থেকেই তাঁকে বেরিয়ে আসতে হল পর্যবেক্ষকের নির্দেশে। শুক্রবার দুপুর তিনটে থেকে সাড়ে চারটে পর্যন্ত মুর্শিদাবাদের জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক ইন্দ্রনীল সেনের উপস্থিতিতে চলে তৃণমূলের বিশেষ বৈঠক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৪ ০০:২৮
Share:

এ ভাবেই উল্টে যায় রাজনীতির পাশা। যে হুমায়ুন কবীর একদিন মুশির্র্দাবাদে তৃণমূলের প্রায় সর্বময় কর্তা ছিলেন, তাঁরই স্থান হল না দলের কোনও কমিটিতেই। এমনকী বৈঠকের ঘর থেকেই তাঁকে বেরিয়ে আসতে হল পর্যবেক্ষকের নির্দেশে।

Advertisement

শুক্রবার দুপুর তিনটে থেকে সাড়ে চারটে পর্যন্ত মুর্শিদাবাদের জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক ইন্দ্রনীল সেনের উপস্থিতিতে চলে তৃণমূলের বিশেষ বৈঠক। বহরমপুর স্টেশন লাগোয়া বেনফিসের ‘সিরাজবাগে’ ওই সভায় দলীয় কমিটি গঠিত হয়। সেখানে গঠিত কোনও কমিটিতে ঠাঁই হয়নি সাগির আলি, মহম্মদ আলি, সুব্রত সাহার মতো নেতাদেরও। তবে এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি কেউই। জেলার এক নেতা বলেন, “সংবাদমাধ্যমের কাছে বৈঠকের ব্যাপারে বা কমিটি গঠন নিয়ে কারও কোনও বক্তব্য দেখতে পেলে গোটা বিষয়টি দিদিকে জানানোরও হুমকি দেন ইন্দ্রনীলবাবু।”

হুমায়ুন ঘনিষ্ঠ মহলে বলেন, “এত দিন রাজনীতি করছি। কিন্তু কোনও দিন এত অপদস্থ ও অপমানিত হইনি।” তিনি জানান, অন্যরা কে কী ভাবে বিষয়টি দেখছে তিনি জানেন না। তবে তিনি ওই অপমান হজম করবেন না। তার ক্ষোভ, “আমি মুকুল রায়ের হাত ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রেখে কংগ্রেস দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিই। ইন্দ্রনীল সেনকে দেখে আমি তৃণমূলে আসিনি। আমি যখন তৃণমূলে এসেছি তখন ইন্দ্রনীল সেন তৃণমূল ভবন পর্যন্ত চিনত না! অপমান-অপদস্থ করার সঙ্গে আমাকে অবহেলাও করা হচ্ছে।”

Advertisement

এ দিন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলা পর্যবেক্ষক ইন্দ্রনীল সেন একা বৈঠক পরিচালনা করেন। শুরুতে সাংগঠনিক টুকিটাকি কয়েকটি কথাবর্তা বলার পরেই নতুন গঠিত জেলা ও ব্লক কমিটি পদে যারা রয়েছেন, তাদের নাম ঘোষণা করেন তিনি। পরে নতুন কমিটি’র সদস্যদের নিয়ে তিনি আরও এক প্রস্থ রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। তার আগে কমিটিতে যাদের ঠাঁই হয়নি, তাঁদের ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেও বলেন ইন্দ্রনীলবাবু। তার পরেই হুমায়ুন একা গম্ভীর মুখে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন।

হুমায়ুনের ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, বহরমপুর থেকে বাড়ি ফিরে ইফতার সেরেই হুমায়ুন মুকুল রায়কে তাঁর ক্ষোভের কথা জানান। আগামী সোমবার মুকুলবাবু তাঁকে দেখা করার সময় দিয়েছেন বলেও জানা গিয়েছে। মুকুল রায়ের সঙ্গে কথা বলেই কোনও চরম সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাও ভেবেছেন বলে হুমায়ুন ওই ঘনিষ্ঠ মহলে জানান।

বহরমপুর লোকসভা এলাকায় হুমায়ুন কবীরের মনোনীত দলীয় ১৩ জন সভাপতি এ দিন বদল হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেলডাঙা-১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সানাউল্লা শেখকে সরিয়ে আব্দুল করিমকে ওই পদে বসান হুমায়ুন। এ দিন ফের সানাউল্লা শেখকে ওই পদে পুনর্বহাল করা হয়েছে। একই ভাবে বেলডাঙা-২ ব্লক (পশ্চিম) সভাপতি হুময়াুনের পছন্দের বামদেব দত্তকে সরিয়ে ওই পদে বসানো হয়েছে কালীপদ ঠাকুর ওরফে হেমন্ত ঠাকুরকে। বেলডাঙা-২ ব্লক (পূর্ব) মহসিন শেখকে সরিয়ে বসানো হয়েছে ইমামউদ্দিন শেখকে।

জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র আশিস রায়চৌধুরী বলেন, “আগামী ২৬ জুলাই ইন্দ্রনীল সেন ফের বহরমপুরে আসবেন সভা করতে। সেই সময়ে তিনি বহরমপুরের আসার পরে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে কে কোন কমিটিতে রয়েছেন, তা জানিয়ে দেওয়া হবে।”

নতুন কমিটি গঠন নিয়েও তৃণমূলের অন্দরে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। দলের একাংশের কথায়, “যাঁদের কোনও পলিটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। তাদেরকেই ব্লক সভাপতি করা হয়েছে।”

তবে অন্য পক্ষের দাবি, কমিটিতে নতুনদের সুযোগ দিয়ে দল ভাল করেছে। আগে কয়েকজন ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছিল। এবার সেই ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটানো হয়েছে। সমস্ত স্তরের কর্মীদের নেতৃত্বের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন এমন এক নেতার কথায়, “দল পুনর্গঠনের জন্য নতুন মুখকে সুযোগ দিতেই হত। গত পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে এই জেলায় দল ভাল ফল করতে পারেনি। নতুন কমিটি টোটকার কাজ করতে পারে।”

এ দিন বৈঠকে আমন্ত্রিত সমস্ত স্তরের নেতৃত্বকে মোবাইল জমা দিয়ে সভা ঘরে ঢোকার অনুমতি পেয়েছেন। তার আগে খাতায় নিজেদের পরিচয় লিপিবদ্ধ করতে হয়েছে। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “তাপস পালের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েই ওই সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। দলীয় কর্মীদের সামনে বলা কথা যাতে সংবাদমাধ্যমের কাছে কোনও ভাবে প্রকাশ না পায়।” তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য প্রকাশ্যে তো স্বীকার করতে নারাজ। এক নেতার সাফাই, “ঘনঘন মোবাইল বেজে উঠলে বৈঠকে বিঘ্ন ঘটে। তাই মোবাইল ভেতরে নিয়ে যাওয়া নিষেধ ছিল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন