তখনও পোড়াডাঙা স্টেশনে অবরোধ চলছে। — নিজস্ব চিত্র
সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল নয়। কাছেপিঠে যেতে হলে ট্রেনই ভরসা। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে সবেধন নীলমণি সেই পোড়াডাঙা স্টেশনেও এ বার থেকে দু’টো প্যাসেঞ্জার ট্রেন দাঁড়াবে না। আগুনে ঘৃতাহুতি পড়ে। পরদিন ট্রেন অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় ১২টি গ্রামের বাসিন্দারা। রবিবার সাগরদিঘির পোড়াডাঙা স্টেশনের ঘটনা। ঘটনার জেরে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। পরিস্থিতি এত দূর গড়ায় যে পরিস্থিতি সামাল দিতে স্থানীয় পঞ্চায়েত কর্তাদের খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান সাগরদিঘি থানার ওসি। শেষ পর্যন্ত তাঁরই মধ্যস্থতায় অবরোধ ওঠে। তবে গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন সাত দিনের মধ্যে তাঁদের দাবি পূরণ না হলে ফের রেল অবরোধের পথে নামবেন।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পোড়াডাঙা ছা ড়াও গোবর্ধনডাঙা, মানসিংহপুর, নতুনপাড়া, দস্তুরহাট, গয়সাবাদ, বিশ্বনাথপুর , হরিণাডাঙা, খাটুয়া, চিলাডাঙা-সহ ১২টি গ্রাম রয়েছে। জঙ্গিপুরের সাগরদিঘির ওই গ্রামগুলিতে সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল নয়। সড়ক পথে ব্লক সদর সাগরদিঘি যেতে হলে ২৪ কিলোমিটার উজিয়ে যেতে হয়। তাও যাত্রীবাহী কোনও যানবাহন নেই। ট্রেনই ভরসা। কিন্তু শনিবার রেল কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে, পোড়াডাঙা স্টেশনে দু’টো প্যাসেঞ্জার ট্রেন দাঁড়াবে না। এত দিন পাঁচটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন আপ-ডাউন মিলিয়ে ১০ বার দাঁড়াত। নতুন নিয়মে ৬ বার দাঁড়াচ্ছে। তাতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এ দিন সকালেই পোড়াডাঙা স্টেশনে রেললাইনের উপর বসে পড়েন গ্রামবাসীরা। লাইনের উপর টাঙিয়ে দেওয়া হয় লাল ফেস্টুন। অবরোধে প্রথমে আটকে পড়ে হাওড়াগামী মালদহ–হাওড়া ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস। অবরোধের মাঝেই স্টেশনে এসে পড়ে মালদহগামী একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন। আটকে পড়ে সেটিও। ইন্টারসিটির যাত্রীদের কাকুতি মিনতিতে সেই ট্রেন অবরোধকারীরা ছেড়ে দিলেও সেখানে এসে অবরোধের মধ্যে পড়ে দাঁড়িয়ে পড়ে ‘নন স্টপ’ গৌহাটি-কলকাতাগামী গরীব রথ। আটকে পড়ে দু’টি প্যাসেঞ্জার ট্রেনও।
স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান জানান, পাশেই আজিমগঞ্জ ৫ কিলোমিটার দূরে। বাজারহাট সব কিছুতেই সেটাই কাছের। জঙ্গিপুর মহকুমার সদর রঘুনাথগঞ্জ ৪০ কিলোমিটার দূরে। ব্লক সাগরদিঘি ২৪ কিলোমিটার পথ। সব ক্ষেত্রেই পোড়াডাঙা স্টেশন থেকে ট্রেন পথে যাতায়াত করতে হয় তাঁদের। তিনি বলেন, ‘‘এতদিন ৫টি প্যাসেঞ্জার ট্রেন যাতায়াতে ১০ বার দাঁড়াত। শনিবার থেকে দু’টি ট্রেনের স্টপেজ পোড়াডাঙায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে সকলেই বিড়ম্বনায় পড়েছেন। তাই গ্রামবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।’’
মানবাধিকার সংগঠনের কর্মী নুরুল হক বলেন, ‘‘রেলপথ ছাড়া যেখানে কোনও গতি নেই সেখানে হঠাৎ করে শনিবার স্টেশনে মাইকে ঘোষণা করে স্টপেজ তুলে দেওয়া রেল কর্তৃপক্ষের উচিত হয়নি।’’ তিনি জানান, এমনিতেই এলাকার মানুষের ক্ষোভ রয়েছে সাধারণ প্যাসেঞ্জার ট্রেন হওয়া সত্বেও হাওড়া-মালদহ টাউন ও জঙ্গিপুর থেকে ছাড়া ডেমু প্যাসেঞ্জার ট্রেনগুলি পোড়াডাঙায় দাঁড়ায় না বলে। এখন সকলেরই দাবি সব প্যাসেঞ্জার ট্রেনকে পোড়াডাঙায় দাঁড়াতে হবে।
স্টেশন ম্যানেজার অমিতেশ বাগচি বলেন, ‘‘রবিবারের এই বিক্ষোভের কথা আমাকে কেউ জানাননি। এ ব্যাপারে ডিভিসন অফিসই সিদ্ধান্ত নেয়। গ্রামবাসীরা সেটা বুঝতে চাননি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘একের পর এক এক্সপ্রেস ও প্যাসেঞ্জার ট্রেন আটকে দেন তাঁরা। বেলা ১টা নাগাদ পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ উঠলে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।’’
এক রেল কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘পোড়াডাঙা থেকে যত সংখ্যক যাত্রী ট্রেনে যাতায়াত করেন সেই তুলনায় টিকিট বিক্রি হয় না। গড়ে ৫জন যাত্রীর মধ্যে একজন টিকিট কাটেন। এটা গ্রামবাসীদেরই বন্ধ করতে হবে। শুধু ট্রেন চাইলেই তো হবে না।’’
গোবর্ধনডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ফর্ডওয়ার্ড ব্লকের আসিফুর রহমান বলেন, ‘‘পোড়াডাঙা স্টেশনে ডিআরএম নিজে এসেছিলেন নকল দুর্ঘটনার মহড়ায়। তখনও তিনি গ্রামবাসীদের এ ব্যাপারে সচেতন করতে পারতেন। তা না করে হঠাৎ করে ট্রেনের স্টপেজ তুলে দিয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষকে বিড়ম্বনায় ফেলা ঠিক হয়নি। রেল কর্তৃপক্ষের উচিত গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনা করা।’’
এ দিকে, মালদহের ডিআরএম রাজেশ অরগলকে বারবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। এসএমএস-এরও উত্তর মেলেনি।