দেরি হলেও টানা বৃষ্টিতে স্বস্তিতে জেলার চাষিরা

দেরিতে হলেও বর্ষা এসেছে। গত কয়েক দিনের মেঘঢালা বৃষ্টিতে হাসি ফুটেছে চাষিদের মুখে। এই সময়ে আমন ধানের বীজতলা তৈরি হচ্ছে। নাগাড়ে বৃষ্টিতে জমিতে জল জমে যাওয়ায় চাষিদের খুব সুবিধা হচ্ছে। উপকার হচ্ছে পাট চাষেও। আর সব্জি চাষে যেন প্রাণ এসেছে। মুর্শিদাবাদ জেলা কৃষি আধিকারিক দীনেশ পাল বলেন, “গত সপ্তাহে ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ওই বৃষ্টি প্রায় সমস্ত চাষের পক্ষে উপযোগী হবে।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর ও কান্দি   শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৪ ০০:১৮
Share:

দেরিতে হলেও বর্ষা এসেছে। গত কয়েক দিনের মেঘঢালা বৃষ্টিতে হাসি ফুটেছে চাষিদের মুখে। এই সময়ে আমন ধানের বীজতলা তৈরি হচ্ছে। নাগাড়ে বৃষ্টিতে জমিতে জল জমে যাওয়ায় চাষিদের খুব সুবিধা হচ্ছে। উপকার হচ্ছে পাট চাষেও। আর সব্জি চাষে যেন প্রাণ এসেছে। মুর্শিদাবাদ জেলা কৃষি আধিকারিক দীনেশ পাল বলেন, “গত সপ্তাহে ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ওই বৃষ্টি প্রায় সমস্ত চাষের পক্ষে উপযোগী হবে।”

Advertisement

মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার হেক্টর জমিতে পাট ও প্রায় ২ লক্ষ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়ে থাকে। অন্যান্য ফসল হয়ে থাকে ৫৫-৬০ হাজার হেক্টর জমিতে। সব মিলিয়ে প্রায় চার লক্ষ হেক্টর জমিতে চাষবাস হচ্ছে এখন। এর মধ্যে আমন ধান চাষের জন্য যে ধরনের আবহাওয়ার প্রয়োজন, ঠিক সেই ধরনের আবহাওয়া রয়েছে এখন। গত এক সপ্তাহ ধরে জেলা জুড়ে প্রায় ১২০ থেকে ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সঙ্গে মৃদুমন্দ বাতাস ও শতকরা ৯০ ভাগ আপেক্ষিক আর্দ্রতাসব কিছুই ধান চাষের অনুকূল। বৃষ্টির সঙ্গে যে নাইট্রিক অ্যাসিড ঝরে পড়ে, তাতে ধান চাষের উপকার হয়। বীজতলায় জল দাঁড়িয়ে থাকায় শ্যালো পাম্প দিয়ে আর জল তুলতে হচ্ছে না চাষিদের।

সুখবর পাট চাষেও। এই সময়ে জেলায় বিঘার পর বিঘা জমিতে পাট রয়েছে। জলের অভাবে বেশ কিছু পাট গাছে মটকা নামে এক পোকার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল। বৃষ্টি ওই পোকার হাত থেকে পাট গাছকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে। এর পাশাপাশি সারা বছর অনাবৃষ্টির কারণে মাটিতে রসের অভাবে পাট গাছ ঝিমিয়ে পড়ে ছিল। নাগাড়ে বৃষ্টি পাটের গোড়া যেমন মোটা করবে তেমনই লম্বায় বাড়তেও সহায়তা করবে।

Advertisement

দীনেশবাবু বলেন, “ধান ও পাট আমাদের জেলার প্রধান ফসল। ধানের বীজতলা তৈরির ক্ষেত্রে ওই বৃষ্টি যেমন দারুণ ভাবে সহায়ক হবে, তেমনই পাট চাষের ভাল হবে। বৃষ্টির অভাবে বেশ কিছু জমির পাটে পোকা দেখা দেওয়ার পাশাপাশি মাটিতে রসের অভাবের কারণে ঝিমিয়ে যাচ্ছিল। ফলে পাট চাষে এখন বৃষ্টির খুব প্রয়োজন ছিল।” গত কয়েক দিনের মতো এক টানা বৃষ্টি হলে পাট পচানোর ক্ষেত্রে চাষিদের সমস্যায় পড়তে হবে না বলেও জেলা কৃষি আধিকারিক জানান।

এ ছাড়াও এই সময়ে জমিতে সব্জি হিসেবে পটল, বেগুন, উচ্ছে-সহ বিভিন্ন শাক রয়েছে। সারা বছর বৃষ্টি না হওয়ায় মাটি শুকনো হয়ে গিয়েছিল বলে কিছু দিন আগে পর্যন্ত এই সব সব্জির ফলন ভাল হচ্ছিল না। সে ক্ষেত্রেও এই বৃষ্টি চাষিদের উপকার করছে। মাটি ভিজে জল জমার মতো পরিস্থিতি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত ফলনের ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা হবে না। তবুও সাবধানতা হিসাবে মাচা বাধার পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি আধিকারিকরা। পাশাপাশি এলোমেলো ঝড় হলে মাচার কিছু ফলন পড়ে যেতে পারে বলেও সতর্ক করে দিচ্ছে জেলা কৃষি দফতর।

এ দিকে, সদ্য যাঁরা জমি থেকে তিল কেটে ফেলেছেন, তাঁরা কিছুটা হলেও সমস্যায় পড়বেন। কেননা, বৃষ্টিতে তিল পচে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঠিক মতো রোদ না পেলে তিল শুকানো নিয়ে চাষিদের সমস্যায় পড়তে হতে পারে। জেলা কৃষি আধিকারিকের আক্ষেপ, “সময় মতো তিল চাষ করার জন্য চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হলেও তাঁরা আমল দিতে চান না। দেরি করে ফসল লাগানোর ফলে বর্ষা এসে যায়। তখন জমি থেকে তিল কেটে নেওয়ার পরে শুকনো করার জন্য ভোগান্তি পোহাতে হয় চাষিদের।” আর জমা জলে সমস্যা হতে পারে কচু চাষে। সে কথাও মনে করে দিচ্ছেন কৃষি আধিকারিকরা। বড়ঞা ব্লক কৃষি আধিকারিক রবিশঙ্কর দাস বলেন, “বৃষ্টির জল সমস্ত ফলনের পক্ষেই ভাল। খালি সব্জি বা কচু গাছের গোড়ায় জল জমলে অসুবিধা হতে পারে। সেদিকটা খেয়াল রাখতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন