‘পেন’ পদ্ধতিতে মাছ চাষে লাভের আশা মৎস্য দফতরের

জেলার ১২টি বড় বিলকে চিহ্নিত করে তাতে ‘পেন’ পদ্ধতিতে মাছ চাষের পরিকল্পনা নিল মৎস্য দফতর। এক্ষেত্রে দশ হেক্টর বা তার বেশি বড় আকারের বিলগুলিকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি বিলে মাছ চাষের জন্য ২৩ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা ব্যয় করে হবে বলে জেলার মৎস্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৪:৩৪
Share:

জেলার ১২টি বড় বিলকে চিহ্নিত করে তাতে ‘পেন’ পদ্ধতিতে মাছ চাষের পরিকল্পনা নিল মৎস্য দফতর। এক্ষেত্রে দশ হেক্টর বা তার বেশি বড় আকারের বিলগুলিকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি বিলে মাছ চাষের জন্য ২৩ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা ব্যয় করে হবে বলে জেলার মৎস্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে।

Advertisement

তেহট্ট-১ ব্লকের ভাটুপাড়া-মরগাঙ্গি, ফতাইপুর-দামোস বিল, কৃষ্ণনগর-২ ব্লকের সতীতলা বিল, কালীগঞ্জ ব্লকের বিল ভালসানি এবং খাদিরপুর-বেলতলা বিল, রানাঘাট-১ ব্লকের আমদা বিল, হরিণঘাটা ব্লকের ভোমরা বিল, চাকদহ ব্লকের কুলিয়া বিল, কৃষ্ণনগর ১ ব্লকের অঞ্জনা বিল, হাঁসখালি ব্লকের গাজনার পিপুলবেড়িয়ার বিল এবং রামনগর-নেবুতলা বিল, চাপড়া ব্লকের কুকড়াদহের বিল-সহ জেলার আরও চারটি বিলে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা হবে। বাকি চারটি বিলের নাম এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। এই টাকা দিয়ে চাষের জন্য চারা মাছ কিনে দেওয়ার পাশাপাশি সমবায় সমিতিগুলিকে দুটি নৌকা, মাছ ধরার টানা জাল, পাম্প সেট, পাকা ঘাট তৈরি, গোবর, মহুয়া খোল-সহ চারা পোনা বড় করার জন্য নির্দিষ্ট এক হেক্টরের ছোটো জলাশয় তৈরির পাশাপাশি বড় জলাশয় তৈরির অন্যান্য খরচ, মাছের খাবার সরবরাহ করা হবে।

কি এই ‘পেন’ পদ্ধতি?

Advertisement

জেলা মৎস্য দফতরের আধিকারিক সম্পদ মাজি জানান, দশ হেক্টর জলাশয়ের মধ্যে প্রথমে এক হেক্টর জলাশয় বাঁশের চটা আর জাল দিয়ে আলাদা করে ঘিরে ফেলা হবে। সেখানে একেবারে ছোটো চারাপোনা ছাড়া হবে। কিন্তু অল্প জায়গায় কম জলে অনেক মাছ থাকায় সেই মাছ তার স্বাভাবিক বৃদ্ধির সুযোগ পাবে না। তারপর যখন তাদের পাশের ন’হেক্টর জমির জলাশয়ে ছাড়া হবে, তখন হঠাৎ করে অনেকটা বেশি জায়গা পাওয়ায় মাছের পোনা দ্রুত বাড়তে থাকবে।

মৎস্য দফতর সূত্রে খবর, বিলগুলিতে ভারতীয় ‘মেজর কার্প’ অর্থাৎ রুই, কাতলার পাশাপাশি মৃগেল মাছও চাষ করা হবে। নিয়ম, জানুয়ারি মাসেই এক হেক্টর জলাশয়ের মধ্যে ৭৫ কেজির ছোট আড়াই লক্ষ মাছ ছাড়া হয়। এরপর মার্চের শেষ বা এপ্রিলের প্রথমে ওই মাছের ওজন একশো থেকে দেড়শো গ্রাম হলে মাছ তুলেপাশের ন’হেক্টরের বড় জলাশয়ে ছাড়া হয়। বড় জলাশয়ে প্রয়োজনীয় খাবার দেওয়ার পর সাত থেকে আট মাস পরে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে সেই মাছের ওজন দেড় থেকে দু’কেজি হয়ে গেলে বিক্রির জন্য তুলে ফেলা হবে। নদিয়া জেলায় যেহেতু প্রথম এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ হচ্ছে তাই প্রস্তুতি সারতে দেরি হওয়ায় ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি চাষের কাজ শুরু হবে বলে মৎস্য দফতর সূত্রে খবর।

জেলা পরিষদের মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ বিকাশ স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ চঞ্চল দেবনাথ বলেন, “আমরা চাই বাইরের রাজ্য থেকে যেন আমাদের আর বড় মাছ আমদানি করতে না হয়। আমরা জেলার বড় বিলগুলিতে কেন্দ্র সরকারের ‘ন্যাশনাল মিশন ফর প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট’ প্রকল্পের টাকায় ‘পেন’ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করার উদ্যোগ নিয়েছি।” দোগাছি গ্রাম পঞ্চায়েত মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের ম্যানেজার নিখিল হালদার বলেন, “১৯৮১ সালে আমাদের এই সমবায় সমিতি গঠিত হয়েছিল। এত বছর ধরে আমরা মাছ চাষ করছি কিন্তু পেন পদ্ধতিতে মাছ চাষ এই প্রথম। গত বছর আমরা ১৬ হাজার কেজি মাছ বিক্রি করেছি। আশা করি এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে আমরা আরও বেশি মাছ উৎপাদন করতে পারব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন