সজল ঘোষ হত্যা মামলা

প্রত্যক্ষদর্শীরা শুধুই বিশেষ রাজনৈতিক দলের, সওয়াল করলেন আইনজীবী

ঘটনাস্থলের সামনেই রয়েছে ওষুধের দোকান, ঘরবাড়ি, রয়েছে রোগীদের আত্মীয়দের প্রতীক্ষালয়ও। অথচ খুনের ঘটনার সাক্ষ্যে বা প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বিশেষ এক রাজনৈতিক দলের লোকদেরই দেখা গিয়েছে-- বৃহস্পতিবার সজল ঘোষ হত্যা মামলার চতুর্থ দিনের সওয়ালে এমনই যুক্তি দেখালেন অভিযুক্তের আইনজীবী প্রতিম সিংহ রায়।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৪ ০১:২০
Share:

সজল ঘোষ।—ফাইল চিত্র।

ঘটনাস্থলের সামনেই রয়েছে ওষুধের দোকান, ঘরবাড়ি, রয়েছে রোগীদের আত্মীয়দের প্রতীক্ষালয়ও। অথচ খুনের ঘটনার সাক্ষ্যে বা প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বিশেষ এক রাজনৈতিক দলের লোকদেরই দেখা গিয়েছে-- বৃহস্পতিবার সজল ঘোষ হত্যা মামলার চতুর্থ দিনের সওয়ালে এমনই যুক্তি দেখালেন অভিযুক্তের আইনজীবী প্রতিম সিংহ রায়।

Advertisement

বৃহস্পতিবার শুরুতেই প্রতিমবাবু সজল ঘোষ খুন হওয়ার সময় নিয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, এই মামলার এক নম্বর সাক্ষী এবং এফআইআরকারী পঙ্কজ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর জবানবন্দিতে বলেছেন যে সজল ঘোষ খুন হয়েছিলেন ০৯-০১-১২ তারিখ রাত ১১.৫০ মিনিটে। অথচ মামলার সাত নম্বর সাক্ষী এবং এফআইআরের লেখক জীবেশ চক্রবর্তী বলেছেন তিনি রাত ১১.৩০ মিনিট নাগাদ জানতে পারেন যে সজল ঘোষ খুন হয়েছেন। প্রতিমবাবুর দাবি, এ যেন রামের জন্মের আগেই রামায়ণ লেখার মতো। আবার মামলার এগারো নম্বর সাক্ষী এবং নবদ্বীপ হাসপাতালের তৎকালীন সুপার প্রদীপকুমার দাস বলেন নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালের ডেথ রেজিস্ট্রারে সজল ঘোষের মৃত্যুর সময় রাত ১১.৩৫ মিনিট। আইনজীবীর প্রশ্ন, তাহলে কি সজল ঘোষের মৃত্যুর আগেই খবর চলে গিয়েছিল জীবেশ চক্রবর্তীর কাছে?

এফআইআর থেকে উদ্ধৃত করে প্রতিমবাবু বলেন, দেখা যাচ্ছে ওই রাতে নবদ্বীপ হাসপাতাল চত্বরে গুলিবিদ্ধ হয়ে সজল ঘোষ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এবং তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। অর্থাৎ সজলবাবুর চিকিৎসার কোনও সুযোগই পাওয়া যায়নি। তাহলে আদালতে পেশ করা সজলবাবুর চিকিৎসা সংক্রান্ত নথিপত্র এল কোথা থেকে? প্রতিমবাবু আরও বলেন, সজল ঘোষ খুনের দিন সন্ধ্যায় ঝড়জল হয়েছিল। পরে দুর্যোগ থামলেও সারারাত বৃষ্টি হয়। অথচ, পঙ্কজ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন তাঁরা ওই রাতে সাড়ে দশটা নাগাদ পূর্বস্থলী উত্তরের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়ের গাড়িতে নবদ্বীপ হাসপাতালে এসেছিলেন। সেখানে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে গল্পগুজব করছিলেন তাঁরা। এরপর সজল ঘোষ গুলিবিদ্ধ হলে সকলে মিলে তাঁকে হাসপাতালের ভিতরে নিয়ে যান। প্রশ্ন হল, বৃষ্টির রাতে এত ঘটনা ঘটল, অথচ প্রত্যক্ষদর্শীরা কেউ তো আদালতে বললেন না যে তাঁরা ভিজে গিয়েছিলেন।

Advertisement

সওয়ালের আর এক অংশে অভিযুক্তের আইনজীবী বলেন, সেই রাতে হাসপাতালে আহত ছাত্রদের দেখতে এসেছিলেন পূর্বস্থলীর বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়। তিনি থাকাকালীন তাঁর দলের একজন খুন হলেন, অথচ পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করল না, তিনিও স্বেচ্ছায় আদালতের কাছে কিছু বলতে চাইলেন না। অথচ তিনি সেই রাতে শুধু হাসপাতালেই ছিলেন না, দেহ ময়না-তদন্তের সময়ও সঙ্গে ছিলেন। বিচার চলাকালীনও আদালতেও এসেছেন। তবু কেন তিনি চুপ থাকলেন এটা স্পষ্ট নয়। প্রতিমবাবুর আরও দাবি, নবদ্বীপ হাসপাতালের মেন গেট থেকে জরুরি বিভাগের গেট পর্যন্ত যে পাকা রাস্তার মধ্যে সজল ঘোষ খুন হয়েছিলেন বলে অভিযোগ, তার খুব কাছেই স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়ি। মেন গেটের সামনে তিনটে ওষুধের দোকান, তার একটা আবার সারারাত খোলা থাকে। অথচ োইসব বাড়ির কোনও বাসিন্দা বা কোনও দোকানদার এত বড় একটা ঘটনায় ছুটে এলেন না, তাঁদের কাউকে পুলিশ সাক্ষী বা প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে পেল না, এমনকী যেখানে খুনের ঘটনাটি ঘটে তার সামনে ওই হাসপাতালের রোগীর আত্মীয় স্বজনদের প্রতীক্ষালয়, সেখান থেকেও কেউ এল না? তাহলে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের বাছাই করা নেতা কর্মীদেরই কেন আদালতে হাজির করা হল? কোন উদ্দেশ্যে? এরপর তিনি বলেন, গত বিধানসভা ভোটে তপন চট্টোপাধ্যায় পূর্বস্থলী উত্তর থেকে মাত্র ২১৪০ ভোটে জিতেছিলেন। তিনি জানতেন জনপ্রিয়তায় তিনি প্রদীপ সাহার থেকে অনেক পিছিয়ে আছেন। তাই যে কোনও ভাবে প্রদীপ সাহাকে তিনি জেলে ঢোকাতে চেয়েছিলেন। তাই এই মিথ্যা মামলা। তিনি বলেন, শীতকালের রাতে ঠাণ্ডা থেকে বাঁচতে সবাই টুপি মাফলারে কান মাথা ঢেকে রাখে, সে অবস্থাতেই ওই রাতে প্রদীপ সাহাকে দূর থেকে চিনতে পারেন সাক্ষীরা। কিন্তু হাসপাতাল চত্বরে রাখা মোটরবাইকের রঙ বা মডেল বলতে পারেন না। এ দিন নবদ্বীপের অতিরিক্ত এবং সেশন জজ সুধীর কুমারের আদালতে দু’ঘণ্টার সওয়াল জুড়েই কালো প্যান্ট সাদা হাফ শার্টে কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন প্রদীপ সাহা। সোমবার ফের শুনানি হওয়ার কথা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন