প্রশাসনকে দর বাঁধতে বললেন জমিদাতারা

৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণে জমি-জটিলতার শুনানি হল নির্বিঘ্নে। বৃহস্পতিবার বহরমপুর ও নবগ্রাম ব্লকের ১০টি মৌজার ৩৫৮৮ জন জমিদাতা বহরমপুরে হাজির হয়ে জমি-জট কাটাতে সদিচ্ছা প্রকাশ করেন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য বহরমপুরের বাসুদেবখালি, আঁধারমাণিক, গোপজান ও ফতেপুর মৌজায় এবং নবগ্রামের শিবপুর, গোপগ্রাম, রাইন্ডা, মুকুন্দপুর, মেহেদিপুর ও দফরপুর মৌজা এলাকায় প্রায় ৫০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৪ ০০:৪৮
Share:

চলছে শুনানি। —নিজস্ব চিত্র।

৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণে জমি-জটিলতার শুনানি হল নির্বিঘ্নে। বৃহস্পতিবার বহরমপুর ও নবগ্রাম ব্লকের ১০টি মৌজার ৩৫৮৮ জন জমিদাতা বহরমপুরে হাজির হয়ে জমি-জট কাটাতে সদিচ্ছা প্রকাশ করেন।

Advertisement

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য বহরমপুরের বাসুদেবখালি, আঁধারমাণিক, গোপজান ও ফতেপুর মৌজায় এবং নবগ্রামের শিবপুর, গোপগ্রাম, রাইন্ডা, মুকুন্দপুর, মেহেদিপুর ও দফরপুর মৌজা এলাকায় প্রায় ৫০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। প্রশাসন ওই জমি অধিগ্রহণ করলেও দর নিয়ে জটিলতার জেরে জাতীয় সড়কের কাজ এখনও শুরু করা যায়নি। এই অবস্থায় ওই ১০টি মৌজায় ১১টি মামলা রয়েছে। ওই মামলাগুলির এ দিন শুনানি ছিল। সরকারের পক্ষে শুনানিতে হাজির ছিলেন ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের যুগ্ম সচিব ভি ললিতা লক্ষ্মী।

মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, “নবগ্রামের গোপজান মৌজায় চারটি মামলা ছিল। কিন্তু তার মধ্যে তিনটে মামলার মীমাংসা হয়ে গিয়েছে। ওই পরিবারগুলি একর প্রতি ১৫ লক্ষ টাকা নিয়েও নিয়েছে। ওই গোপজান এলাকায় ১টি মামলা ঝুলে রয়েছে। এ দিন ওই একটি মামলার সঙ্গে বাসুদেবখালি মৌজায় চারটে, আঁধারমানিকে দু’টি এবং বাকি সাতটি মৌজার চারটি মামলার শুনানি হয়েছে। জমির দরের বিষয়টি জমিদাতারা প্রশাসনের সিদ্ধান্তের উপরেই ছেড়ে দিয়েছেন। আমরা খুশি।”

Advertisement

যদিও শুনানির সময়ে জমিদাতারা স্পষ্ট ভাষায় জেলা প্রশাসনের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সেই সঙ্গে জাতীয় সড়ক নির্মাণের স্বার্থে তাঁরা যে জমি দিতে ইচ্ছুক, তা-ও জানিয়ে দেন। বাসুদেবখালির এক জমিদাতা মহম্মদ মণিরুজ্জামান বলেন, “জমি-জটিলতা কাটাতে এর আগে তিন বার আমাদের সঙ্গে প্রশাসনিক কর্তারা বৈঠক করেন। কিন্তু জমির দর নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত জানাতে পারেনি।” তিনি জানান, রাস্তাঘাটের যে হাল, তাতে শিল্প বা কল-কারখানা গড়তে কেউ আগ্রহী হবে না। জেলায় শিল্প বা কারখানা হলে এলাকার উন্নয়ন হবে। এলাকা উন্নয়নের স্বার্থে আমরা জমি দিতে আগ্রহী। প্রশাসনের উপরে ভরসা রেখে জমিদাতা ইমাম শেখ, সবদর শেখ একযোগে বলেন, জমি-জট কাটিয়ে জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ অবিলম্বে শুরু করা উচিত।

এর আগে অবশ্য বাসুদেবখালি মৌজার জমিদাতারা একর প্রতি এক কোটি ২০ লক্ষ টাকা দর দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। এ দিন তাঁরা ওই দাবি থেকে অনেকটাই সরে এসেছেন। তাঁদের কথায়, “জমির দর আমরা একটু বেশি চেয়ে ফেলেছি ঠিকই। কিন্তু জেলা প্রশাসন বিবেচনা করে একটা দর ঠিক করে দিলেই আমরা তা মেনে নেব।” বাসুদেবাখালির জমিদাতাদের ওই কথা শুনে সন্তোষ প্রকাশ করেন ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের যুগ্ম সচিব। তিনি বলেন, “আপনাদের কথা শুনে আমার খুব ভাল লাগল। আইন অনুযায়ী সব দিক খতিয়ে দেখে আপনারা যাতে জমির ঠিক দর পান, সে ব্যাপারে আমি চেষ্টা করব। তবে এখনই জমির দর আপনারা কত পাবেন জানাতে পারব না। আগামী সপ্তাহে আপনাদের জানিয়ে দেওয়া হবে।”

লোকনাথপুর থেকে ফরাক্কা পর্যন্ত ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক মুর্শিদাবাদ জেলার অধীনে। জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য মুর্শিদাবাদে প্রায় ২৪০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। তার মধ্যে এখনও পর্যন্ত অধিগ্রহণ হয়েছে প্রায় ১৪২ হেক্টর জমি। প্রায় ৫০ হেক্টর জমির জন্য এ দিন শুনানি হয়েছে। বাকি জমির মধ্যে প্রায় ১৩ হেক্টর জমির জন্য চেক তৈরি হয়ে রয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের ৯ হেক্টর জমি রয়েছে, প্রায় ৩ হেক্টর জমির চেক নেওয়ার জন্য আগামী ৩০ অগস্ট শেষ তারিখ ঘোষণা করেছে প্রশাসন।

এ দিকে, শুনানি চলাকালীন জমিদাতারা উত্তেজিত হয়ে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে পারে, এই আশঙ্কায় ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতররে ‘ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ভবনে’ ঢোকার মুখে ‘আপনি সিসিটিভি ক্যামেরার অধীনে’ লেখা ব্যানারও টাঙানো হয়। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) অরবিন্দ মিনা বলেন, “এর আগে জমিদাতাদের হাতে জেলা প্রশাসনিক কর্তার হেনস্থা হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তাই সতর্কতা হিসেবে ওই পন্থা নেওয়া হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন