পুলিশ ভরসা, গ্রামে ফিরল ৫৩টি পরিবার

উদ্যোগী হয়নি কান্দি থানার পুলিশ। শেষতক জেলা পুলিশের হস্তক্ষেপে বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্রামে ফিরল ৫৩টি পরিবার। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “কান্দির মারুরা গ্রামে এক মহিলার সঙ্গে অশালীন আচরনের প্রতিবাদে গ্রামে একটি মারপিটের ঘটনা ঘটেছিল। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু পরিবার গ্রাম ছেড়েছিল। এ দিন সেই পরিবারের সদস্যদের পুলিশি নিরাপত্তা দিয়ে ঘরে ফেরানো হয়েছে। গ্রামে একটি পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কান্দি শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:২৮
Share:

বৃহস্পতিবার ঘরে ফিরছেন, তবু আতঙ্ক কাটছে না। —নিজস্ব চিত্র।

উদ্যোগী হয়নি কান্দি থানার পুলিশ। শেষতক জেলা পুলিশের হস্তক্ষেপে বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্রামে ফিরল ৫৩টি পরিবার। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “কান্দির মারুরা গ্রামে এক মহিলার সঙ্গে অশালীন আচরনের প্রতিবাদে গ্রামে একটি মারপিটের ঘটনা ঘটেছিল। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু পরিবার গ্রাম ছেড়েছিল। এ দিন সেই পরিবারের সদস্যদের পুলিশি নিরাপত্তা দিয়ে ঘরে ফেরানো হয়েছে। গ্রামে একটি পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।”

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার রাতে। মারুয়া গ্রামে রাস্তার পাশেই কালীপুজো উপলক্ষে বসেছিল বাউলের আসর। গ্রামের বেশিরভাগ লোকজন সেখানে গান শুনতে ভিড় করেছিলেন। অভিযোগ, সেই সুযোগে গ্রামের জনাকয়েক মদ্যপ যুবক একটি বাড়িতে ঢুকে এক মহিলার শ্লীলতাহানি করে। ওই মহিলার চিৎকারে প্রতিবেশীরাও ছুটে এসে প্রতিবাদ করেন। তখন ওই যুবকেরা পালিয়ে গেলেও পরে দলবল নিয়ে ফিরে আসে।

অভিযোগ, সেই ‘অপমানের’ বদলা নিতে ওই মহিলার পাড়ায় গিয়ে রীতিমতো তাণ্ডব চালায় তারা। বাড়িঘর ভাঙচুরের পাশাপাশি বেশ কয়েকজনকে বেধড়ক মারধরও করা হয়। চার জন মহিলা-সহ মোট আট জন জখম হন। তাঁদের কান্দি মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরের দিন, বুধবার সকালে ফের ওই মহিলার পাড়ায় গিয়ে থানা-পুলিশ করলে মেরে ফেলার হুমকিও দেখানো হয় বলে অভিযোগ। এরপরে আর ওই এলাকায় থাকার সাহস দেখাননি ৫৩টি পরিবারের সদস্যরা। এ দিন সন্ধ্যায় গ্রাম ছেড়ে কানা ময়ূরাক্ষী পেরিয়ে রুদ্রবাটি গ্রামে চলে যান ওই পরিবারের সদস্যরা। মাঘের ঠাণ্ডায় ভিন্গ্রামে একটি নির্মীয়মাণ বাড়িতে ওই ৫৩টি পরিবার আশ্রয় নেয়।

Advertisement

ওই গ্রামের বাসিন্দারা এই ঘরছাড়াদের জন্য বাড়ি বাড়ি চাল, ডাল, সব্জির ব্যবস্থা করেন। চালে ডালে ফুটিয়ে সেখানেই খিচুড়ির ব্যবস্থা করা হয়। গ্রামছাড়া পরিবারদের এক সদস্যের কথায়, “গ্রাম থেকে চলে যাওয়ার আগেই কান্দি থানায় ওই মহিলা লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন। মারধর ও বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ জানিয়েছিলাম আমরাও। কিন্তু কান্দি থানার পুলিশ কোনওরকম পদক্ষেপ করেনি।”

ঘরছাড়াদের কথায়, “একে তো ওরা শাসাচ্ছে। অন্য দিকে পুলিশকে জানিয়েও কিছু কাজ হচ্ছিল না। তারপরেই বাধ্য হয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম। তারপরেই সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিই যে এর একটা বিহিত করতেই হবে।” সেই মতো আর কান্দি থানায় নয়, বৃহস্পতিবার নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে একটি ট্রাক ভাড়া করেন তাঁরা। সেই ট্রাকে লোকজন নিয়ে তাঁরা ৩০ কিলোমিটার দূরে পুলিশ সুপারের অফিসে গিয়ে গোটা বিষয়টি জানান। পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা। তাঁদের উপস্থিতেই এ দিন ঘরছাড়ারা ঘরে ফেরেন।

স্থানীয় বাসিন্দা মিঠুন বাগদি বলছেন, “ভাগ্যিস পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছিলাম। নাহলে হয়তো গ্রামে আর ফিরতেই পারতাম না। খোদ পুলিশ সুপার আমাদের নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছেন। সেই ভরসাতেই আমরা ঘরে ফিরেছি।” কান্দির মহকুমাশাসক বিজিনকুমার কৃষ্ণ বলেন, “শ্লীলতাহানির ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশকে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘরে ফেরা ওই পরিবারগুলি যাতে নিরাপদে থাকতে পারে তার জন্যও পুলিশকে কড়া নজর রাখার কথা বলা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন