সান্যালচরে ভাঙছে পাড়। নিজস্ব চিত্র।
নদিয়ার চাকদহ ব্লকের চান্দুরিয়া ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের সান্যালচর এলাকায় ভাঙন-সমস্যার কোনও সুরাহা নেই। মালোপাড়া থেকে বাবুপাড়া পর্যন্ত কমবেশি তিন কিলোমিটার এলাকা খামখেয়ালি গঙ্গা পাড় ভেঙে চলেছে। বসতিপাড়া, ফকিরপাড়া, বগাঝিপাড়া এর আগেই ভেঙেছে। এখন ভাঙন চলছে বিশ্বাসপাড়া এবং মালোপাড়ায়। মালোপাড়াতে ভাঙনের সমস্যা সবচেয়ে বেশি।
স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের শোভারানি বৈদ্য জানালেন, এক সময় এই অঞ্চলে ১৩ টি বুথ ছিল, এখন সেটা পাঁচে দাঁড়িয়েছে। ভোটার ছিলেন সাড়ে তেরো হাজারেরও বেশি। এখন সেই সংখ্যাটা চার হাজারের কাছাকাছি। তিনটি মৌজার হাজার পাঁচেক বিঘা চাষের জমি চলে গিয়েছে নদীবক্ষে।
এই ভাঙনের ইতিহাস প্রায় ৪০ বছরের। হাজার হাজার মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছেন। বর্ধিষ্ণু চাষিরা এখন অনেকেই অন্যের জমিতে মজুুরি খাটেন। হাজার হাজার মানুষ সব হারিয়ে পরিবার নিয়ে চলে গিয়েছেন চাকদহ, মদনপুর, শিমুরালি, পালপাড়া, কল্যাণীতে। কেউ আবার চলে গিয়েছেন হুগলি জেলায়।
কিন্তু এখনও ভাঙনরোধে তেমন কিছুই করে উঠতে পারেনি সরকার বা প্রশাসন। শোভারানিদেবী বলেন, “বিষয়টা ক্রমশই জটিল হয়ে উঠছে। ভাঙনের কথা প্রশাসন ও সেচ দফতরকে জানানো হয়েছে।”
কিন্তু এ বিষয়ে আপাতত আশার কথা শোনাতে পারেননি রানাঘাট মহকুমার সেচ আধিকারিক অলোক নাথ। তিনি বলেন, “ওই অঞ্চলে ভাঙনের মাত্রা খুব বেশি। বিশেষ করে মালোপাড়া এলাকায় পরিস্থিতি বেশ সঙ্কটজনক। মালোপাড়া পরিদর্শন করে এসেছি আমরা।” তিনি স্পষ্ট জানান এলাকার ভাঙন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ কাজ নয়। দফতরের পক্ষ থেকে ‘ফ্লো-ডাইভারশন’ করার কথা ভাবা হচ্ছে। বিষয়টি উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের জানানো হয়েছে বলেও জানান অলোকবাবু।
এ দিকে উদ্বেগ ক্রমশই বাড়ছে। সর্বহারা মানুষগুলো আরও বিপদের সম্মুখীন হতে হবে ভেবেই মন বাঁধছেন। এলাকার বাসিন্দা দশরথ গাইন বলেন, “গঙ্গার ভাঙনে দু’বিঘা জমি হারিয়েছি এর আগেই। প্রাণটুকু সম্বল করে উঠে এসেছি গ্রামের উঁচু দিকটায়। কিন্তু এখানেই বা কত দিন থাকতে পারব কে জানে। যে ভাবে পাড় ভাঙছে তাতে এইসব এলাকাও খুব তাড়াতাড়ি নদীগর্ভে চল যাবে।”
গঙ্গার ভাঙনে গিয়েছে চাষের জমি, বসতবাড়ি, প্রাথমিক স্কুল- সব কিছুই। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে পাড় ভাঙার ভয়ঙ্কর দৃশ্য। যখন তখন খসে পড়ছে মাটি। কোথাও দেখা যায় ভাঙা বোল্ডারও। বোঝা যায়, ও গুলো অসহায় মানুষের নিস্ফল চেষ্টা। প্রশাসন যে ভাবে ভাঙন রোধের চেষ্টা করেছে তা মোটেও কার্যকরি হতে দেয়নি খেয়ালি গঙ্গা। এক পঞ্চায়েত কর্মী জানালেন, নদীর পাড় দিয়ে একটি মোরামের রাস্তা তৈরির কাজ হয়েছিল। সে রাস্তার বেশির ভাগটাই চলে গেল জলে।
এলাকার বাসিন্দারা অবশ্য এই ভাঙনকেই ভবিতব্য বলে ধরে নিয়েছেন। নদীর পাড়ে বসেই এক বৃদ্ধ আক্ষেপের সুরে জানান, ভাঙন নিয়ে আর কিছু করার নেই তাঁরা বুঝে গিয়েছেন। সংবাদপত্রে লেখালিখি বা প্রশাসনিক তৎপরতা কোনও কিছুই আর তাঁদের মনে দাগ কাটে না।