খুশির বাঁধ ভেঙেছে। ছবি: বিশ্বজিৎ রাউত।
সঞ্জীব কর্মকার আর সইদুল ইসলাম। এক জনের বাড়ি তেহট্টে অন্য জন থাকেন ডোমকলে। পেশা অবশ্য দু’জনেরই এক, রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেন ভিন্ রাজ্যে। এ বছরই দু’জনের আলাপ বাড়ি ফেরার পথে। হাওড়া স্টেশন থেকে ধর্মতলা হয়ে ডোমকলের বাসে প্রায় সাড়ে ছ’ঘণ্টার যাত্রায় একে অন্যের বন্ধু হয়ে উঠলেন। আর তাই এ বছরের উৎসবটাও ভাগ করে নিলেন একে অন্যের সঙ্গে। পুজোয় মেয়েকে নিয়ে সঞ্জীবের বাড়ি ঘুরে এসেছেন সইদুল। ঈদে সঞ্জীব এসেছিলেন সইদুলের বাড়ি।
সোমবার সকাল থেকেই ভাঙা হাটে ফের উৎসবের মেজাজ। একদিন আগেও মণ্ডপে ছিল দুর্গা প্রতিমা। সেই সব মণ্ডপে সোমবার রাতেই আবার চলে এসেছেন দেবী লক্ষ্মী। আর তারই মাঝে ঈদের পরব। সকালে ঈদ ময়দানে নমাজ পড়তে যাওয়ার আগে পায়েস, সিমাই, রসগোল্লা বা লুচির সঙ্গে হালুয়া মিহিদানা। দুপুরে পোলাও বিরিয়ানির পাশাপাশি ঈদের দিনে খাসির মাংস আর খিচুড়িতেও জমাটি ঈদের উৎসব। অনেক বাড়িতেই ছোলা বা কলাই ডালের ভুনা খিচুড়ি।
কুপিলা গ্রামের হাসান আলি বিশ্বাসের বাড়িতে দুপুরের মেনু বিরিয়ানি। বাড়ির ছোট বউ নাসিমা বিবি সকাল থেকে সে সব নিয়ে ব্যস্ত। তাঁর কথায়, “ঈদের দিনে আমাদের বাড়িতে সকালে সিমুই পায়েস মিষ্টর সঙ্গে খিচুড়ি থাকে। দুপুরে পোলাও অথবা বিরিয়ানি। নিজের হাতে রান্না করে পরিবেশন করার মজাই আলাদা।” রাতের পাতে আবার মাংসের সঙ্গে জুড়ে যায় পরোটা। তার সঙ্গে গোটাকয় রসগোল্লা থাকা চাই-ই। তবে অনেক গৃহিনীরাই বলছেন, রাতের মেনুতে আর যাই থাক, শশা টম্যাটোর স্যালাড চাই। শহর থেকে বেশ খানিকটা দূরে এখনও শহুরে কেতা হানা দেয়নি। তবু পরবের আনন্দে বাদ পরেনি কোনও কিছুই। শেষ পাতে দামি কোম্পানির ঠাণ্ডা পানীয়ও তাই যথেষ্ট জনপ্রিয়।
এক সপ্তাহের ভিতর একের পর এক উৎসবে মাতোয়ারা বাঙালি। দুর্গাপুজো মিটতে না মিটতেই ঈদের পরব। আবার ঈদের পরের দিনই লক্ষ্মী পুজো। এক সপ্তাহে এই তিন উৎসবে খুশি জোয়ার ব্যবসায়ী মহলেও।
দেশ বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে ঘরে ফেরার পালা শুরু হয়েছে। হিন্দু বাঙালিদের পাশাপাশি এ বছর এই সময়টায় ঘরে ফিরেছেন মুসলিম পরিবার গুলিও। সৌজন্যে ঈদুজ্জোহা। তাই কেনাকাটাতেও ভাঁটা নেই। সামগ্রিক ভাবে নানা কারণে বাজার মন্দা থাকলেও দুই উৎসব মিলে যাওয়ায় শেষ সময়ে খুশির হাওয়া লেগেছে ব্যবসায়। বাঙালির পাতে এই ক’টা দিনে উঠেছে খাসির মাংস, ইলিশ, পায়েস খিচুড়ি ছাড়াও পোলাও বিরিয়ানীর রমরমা। সবার ছুটি মিললেও মিষ্টির দোকানগুলিতে বাতিল হয়েছে কর্মীদের ছুটি। নামী দোকানগুলোতে দই-মিষ্টির লম্বা লাইন সেই বিজয়া থেকে। সোমবার ঈদের দিনেও তার কোনও ব্যতিক্রম হয়নি।
অথচ এই ক’দিন আগেও মন্দার বাজারে ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত ছিল। কৃষি প্রধান এলাকা ডোমকলে পাট ঘরে উঠলেও দাম না থাকায় বিপাকে পড়েছিলেন চাষিরা। ইসলামপুর বাজার ব্যাবসায়ী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক শঙ্কর মণ্ডল বলেন, “এবছর পুজো ও ঈদের বাজার নিয়ে আমরা হতাশ ছিলাম। দুই উৎসবের শেষ কয়েক দিনে কিছুটা হলেও আমাদের সেই মন্দা কেটেছে। দুটো উৎসব এক সঙ্গে না হলে এ বছর মাছি তাড়িয়েই কাটাতে হত আমাদের।” একই মত ডোমকল বাজার ব্যাবসায়ী সমিতির সম্পাদক আফাজুদ্দিন বিশ্বাসের। তাঁর কথায়, “এ বছর দুটো উৎসব একসঙ্গে না হলে ব্যাবসায়ীরা মাঠে মারা যেত। শেষের কয়েক দিন কিছুটা হলেও আমাদের মুখে হাসি ফুটেছে।”