ফাজিলনগরে অসমাপ্ত সেতুর কাজ শুরু ফের

মাত্র তিনটি স্তম্ভ হয়েছে। এলাকাবাসীর সঙ্গে ঠিকাদারের গোলমালে দীর্ঘ আট বছর ধরে আটকে নদিয়ার ফাজিলনগর ও মুর্শিদাবাদের আমতলার মাঝে সেতু তৈরির কাজ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বেলডাঙা ও করিমপুর শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৪ ০০:৩৭
Share:

কাজ শুরু সেতুর। কল্লোল প্রামাণিকের ছবি।

মাত্র তিনটি স্তম্ভ হয়েছে। এলাকাবাসীর সঙ্গে ঠিকাদারের গোলমালে দীর্ঘ আট বছর ধরে আটকে নদিয়ার ফাজিলনগর ও মুর্শিদাবাদের আমতলার মাঝে সেতু তৈরির কাজ।

Advertisement

কাজ শুরু করানোর জন্য প্রশাসনেরও হেলদোল ছিল না এত দিন। সম্প্রতি এলাকাবাসীর তাগাদায় নড়েচড়ে বসেছে নদিয়া জেলা প্রশাসন। সপ্তাহখানেক আগে ফাজিলনগরে এসে প্রশাসনিক আধিকারিকরা অসমাপ্ত সেতু পরিদর্শন করে যান। দিন দু’য়েক হল ফের কাজ শুরু করে দিয়েছে ঠিকাদারি সংস্থা।

দুই জেলার মধ্যে সেতুটি হয়ে গেলে দু’পারের লোকজনেরই সুবিধা হত। তবে নদিয়ার দিকে ফাজিলনগর, লালনগর, নারায়ণপুর, পিয়ারপুর, ফরাসডাঙা প্রভৃতি এলাকার বাসিন্দাদের সুবিধাটা বেশি। এই সব এলাকার লোকজনদের প্রতিদিন নানা কাজে বহরমপুর, বেলডাঙা, আমতলা, হরিহরপাড়া বা মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। নদীর উপর বাঁশের ফরাস পাতা সাঁকোই যাতায়াতের একমাত্র পথ। ফাজিলনগরের বাসিন্দা কুদ্দুস আলি শেখ বলেন, “আমাদের এলাকায় কলেজ বা হাসপাতাল কিছুই নেই। মাধ্যমিক পাশ করার পর কলেজে যেতে হলে ছেলে-মেয়েদের প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের করিমপুর কলেজে কিংবা চিকিৎসার জন্য করিমপুর হাসপাতালে ছুটতে হয়। এই সেতু তৈরি হলে আমতলা কলেজ বা হাসপাতালের দূরত্ব হবে দু’কিমি। মুর্শিদাবাদের সদর শহর বহরমপুরের ব্যবধান কমে হবে ২০ কিলোমিটার।”

Advertisement

এলাকাবাসীর দাবি মেনে ২০০৬ সালে এই সেতুর শিলান্যাস করেছিলেন তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামী। সেতুর জন্য বরাদ্দ ছিল প্রায় আট কোটি টাকা। জমি অধিগ্রহণের কাজও কিছুটা এগোয়। জমিদাতারা সকলে ক্ষতিপূরণের টাকা না পেলেও শুরু হয়ে যায় সেতু তৈরির কাজ। টাকা না পাওয়া নিয়ে অবশ্য খুব একটা দুঃখ ছিল না এলাকাবাসীর। সেতুটা তাড়াতাড়ি হয়ে যাক, এটাই একমাত্র চাহিদা ছিল তখন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই ঠিকাদারের সঙ্গে ছোটখাটো নানা বিষয় নিয়ে গোলমাল বেধে যায় এলাকার লোকজনের। নিম্ন মানের উপকরণ দিয়ে কাজ হচ্ছে অভিযোগ তুলে কাজ বন্ধ করে দেয় একাংশ এলাকাবাসী। প্রায় এক বছর বন্ধ থাকার পর আবার এক প্রস্থ কাজ হয়। সেতুর তিনটে স্তম্ভ বসেছিল সবে। ফের ঠিকাদারি সংস্থার সঙ্গে এলাকাবাসীর ঝামেলায় কাজ হয়ে বন্ধ হয়ে যায়। তেহট্টের বিধায়ক সিপিএমের রঞ্জিত কুমার মণ্ডল বলেন, “ওখানে ব্রিজের কাজ শুরু হওয়ার কিছু দিন পরেই ঠিকাদার ও শ্রমিকদের মধ্যে একটা গণ্ডগোল হয়েছিল। ঠিকাদারের বিরুদ্ধে নিম্ন মানের উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগ তুলে কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন ওই এলাকার মানুষজন। পরে নওদার বিধায়ক আবু তাহের ও আমি আমতলায় মিটিং করেছিলাম এলাকাবাসীর সঙ্গে। বিধানসভাতেও তুলেছিলাম কথাটা। কিন্তু তারপরেও কাজ হয়নি।”

বহু বার প্রশাসন ও ঠিকাদার সংস্থাকে জানিয়েও কাজ না হওয়ায় হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন এলাকার মানুষজন। ফরাসডাঙ্গাপাড়ার বাসিন্দা রসেন শেখ, লালন হালসানা, সাইফুল শেখরা বলেন, “এই সেতু নিয়ে এতদিন প্রশাসন যেমন উদাসীন ছিল, তেমনই ঠিকাদার সংস্থাও গড়িমসি করছিল। আমরা ভেবেছিলাম এই সেতু আর কোনও দিন হবে না।” সম্প্রতি ফাজিলনগরের বাসিন্দারা পুনরায় তেহট্ট মহকুমাশাসকের সঙ্গে দেখা করে সেতু তৈরির দাবি জানান। গত বৃহস্পতিবার ফাজিলনগরে গিয়ে সেতুটি পরিদর্শন করে আসেন নদিয়ার জেলাশাসক, তেহট্টের মহকুমাশাসক, করিমপুর ২-এর বিডিও। জেলাশাসক পি বি সালিম বলেন, “এত দিনে ব্রিজের কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। তা যে হয়নি, এটা দুর্ভাগ্যজনক। দ্রুত সেতুর কাজ শুরু করতে হবে। জমিদাতারা ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকা খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবেন।” ব্রিজের কাজ দেখাশোনার জন্য সরকারি প্রতিনিধি ও পাঁচ জন স্থানীয় বাসিন্দা নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে দেন জেলাশাসক। ঠিকাদার সংস্থার সঙ্গেও কথা বলেন জেলাশাসক।

ঠিকাদার সংস্থার পক্ষে সঞ্জীব শীল বলেন, “মুর্শিদাবাদ জেলার অংশে কিছু কাজ হয়েছে। মাঝে কাজ বন্ধ ছিল। কিন্তু আমরা আবার কাজ শুরু করে দিয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন