বাণিজ্যে গতি আনতে স্থলবন্দর টুঙ্গি সীমান্তে

ঘোজাডাঙা, পেট্রাপোলের পর এ বার নদিয়ার টুঙ্গি সীমান্তে খুলতে চলেছে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যপথ। নদিয়ার মাজদিয়া ও বাংলাদেশের দৌলতগঞ্জের মাঝখানে নতুন স্থলবন্দর চালু করতে বুধবার সীমান্ত পরিদর্শনে এলেন বাংলাদেশের নৌ-পরিবহণ মন্ত্রী শাহজাহান খান ও বাংলাদেশের ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পঙ্কজ শরণ। সীমান্তে বিএসএফ-এর টুঙ্গি ক্যাম্পে বসে তাঁরা কথা বললেন নদিয়ার ব্যবসায়ী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

মাজদিয়া শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৪ ০০:২৫
Share:

পরিদর্শনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

ঘোজাডাঙা, পেট্রাপোলের পর এ বার নদিয়ার টুঙ্গি সীমান্তে খুলতে চলেছে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যপথ।

Advertisement

নদিয়ার মাজদিয়া ও বাংলাদেশের দৌলতগঞ্জের মাঝখানে নতুন স্থলবন্দর চালু করতে বুধবার সীমান্ত পরিদর্শনে এলেন বাংলাদেশের নৌ-পরিবহণ মন্ত্রী শাহজাহান খান ও বাংলাদেশের ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পঙ্কজ শরণ। সীমান্তে বিএসএফ-এর টুঙ্গি ক্যাম্পে বসে তাঁরা কথা বললেন নদিয়ার ব্যবসায়ী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে।

শাহজাহান বলেন, “আমাদের দিকে পরিকাঠামো তৈরি। আমাদের সরকার এটিকে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসাবে ঘোষণাও করে দিয়েছে। সেই মতো আমরা ভারতের রাষ্ট্রদূতকে সঙ্গে নিয়ে দু’দিকের পরিকাঠামোগত অবস্থা খতিয়ে দেখতে এসেছি।” স্থলবন্দরের পাশাপাশি টুঙ্গি সীমান্তে একটি ‘সীমান্ত-হাট’ হবে বলেও জানিয়েছেন বাংলাদেশের মন্ত্রী। ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পঙ্কজ শরণ বলেন, ‘‘এলাকাটা ভাল করে দেখে গেলাম। ভারত সরকারকে আমি রিপোর্ট পাঠিয়ে দেব।”

Advertisement

তবে বাংলাদেশের সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগের এই ‘রুট’ নতুন নয়। বরং বলা যায় বহু পুরনো এই সড়ক যোগাযাগ ব্যবস্থা। স্বাধীনতার পরেও দীর্ঘ দিন এই ‘রুট’ দিয়ে পণ্য পরিবহণ হত। এমনকী কৃষ্ণনগর থেকে যশোহর পর্যন্ত দত্ত কোম্পানির বাস চলত বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসীন্দারা। কিন্তু সেই সুখের দিন বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্থান যুদ্ধের সময় এই পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তার পরে আর চালু হয়নি।

দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতির লক্ষ্যে দীর্ঘ দিন ধরেই দুই পারের ব্যবসায়ীরা ‘রুট’টি চালু করতে চাইছিলেন। বিশেষ করে নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান, বীরভূম-সহ হুগলি জেলার পণ্য রফতানি ও আমদানির ক্ষেত্রে টুঙ্গি দিয়ে গেলে রাস্তা অনেক কম হবে। তাতে পরিবহণ খরচ যেমন কমবে, তেমনই সময়ও অনেক বাঁচবে। তাছাড়া চাপের সময় বেনাপোল-পেট্রাপোলে মাল বোঝাই ট্রাকগুলি দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে থাকে। তাতে খরচ অনেক বেড়ে যায়। টুঙ্গির স্থলবন্দরটি চালু হলে সেই সমস্যা আর থাকবে না। বাংলাদেশের মন্ত্রী শাহজাহান খান বলেন, ‘‘বেনাপোল-পেট্রাপোলের অতিরিক্ত চাপ কমাতে টুঙ্গিতে স্থলবন্দর চালু করাটা খুবই জরুরি। গত বছর ভোমরা-ঘোজাডাঙায় নতুন স্থলবন্দর চালু করা হয়েছে। এখন প্রতিদিন সেখান দিয়ে তিনশো থেকে সাড়ে তিনশো ট্রাক চলাচল করছে। এই বছরে আমরা ওই স্থলবন্দর দিয়ে প্রায় ৩৫ হাজার টন মালপত্র রফতানি করেছি আর প্রায় ১৭ হাজার টন আমদানি করেছি।”

নতুন ‘রুট’ খুলে গেলে কৃষ্ণনগর থেকে মাজদিয়া হয়ে টুঙ্গি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের জীবননগর হয়ে কালীগঞ্জের উপর দিয়ে সোজা চলে যাওয়া যাবে ঢাকা অথবা খুলনা। এ দিন বিএসএফ ক্যাম্পে উপস্থিত বাংলাদেশের দৌলতগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দর সি অ্যান্ড এফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হক বলেন, “এই পথ খোলার জন্য আমরা দীর্ঘ দিন ধরে লড়াই চালিয়ে আসছি।’’ একই লক্ষ্যে ১৯৮৯ সালে এপারের ব্যবসায়ীরা গঠন করেছিলেন মাজদিয়া-দৌলতগঞ্জ এক্সপোর্ট-ইনপোর্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। এই বিষয়ে বিভিন্ন মহলে দরবার করার পাশাপাশি তাঁরা দিল্লিতে গিয়ে দেখা করেন অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে। উদ্যোগী হয়েছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদ সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়ও। ভারতীয় এই ব্যবসায়ী সংগঠনের সম্পাদক বাবলু বিশ্বাস বলেন, ‘‘কিছুতেই কথা এগোচ্ছিল না। তবে আমরা হতাশ হইনি। শেষ পর্যন্ত এটা চালু হতে চলেছে জেনে আমরা খুবই আনন্দিত। চালু হলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা খুবই উপকৃত হবেন।” এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে নদিয়া জেলার চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-র যুগ্ম সম্পাদক তারক দাসও সব রকম ভাবে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন এ দিনের আলোচনায়।

টুঙ্গি সীমান্তে দুই দেশের জমির উপরে ‘সীমান্ত হাট’ তৈরি নিয়েও কথাবার্তা হয় এ দিন। সেখানে দুই দেশেরই নাগরিকরা ৫০ ডলার পর্যন্ত কেনা-কাটা করতে পারবেন বলে প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত কৃষ্ণগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কাকলি হালদার বলেন, ‘‘এই ধরনের উদ্যোগ এলাকার অর্থনৈতিক দিগন্ত খুলে দেবে।’’

বাণিজ্যপথ কবে খুলবে জানা নেই। তবে কথাবার্তা শুরু হতেই খুশির হাওয়া বইতে শুরু করেছে দুই বাংলায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন