আব্দুল হকের স্ত্রী-র সঙ্গে কথা বলছেন বাম নেতারা। ছবি: কল্লোল প্রামাণিক।
অবশেষে থানারপাড়া থানায় ৩০ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করলেন নদিয়ার ফাজিলনগরের নিহত সিপিএম সদস্য আব্দুল হক শেখের স্ত্রী মনোয়ারা বিবি। ওই অভিযুক্তদের তালিকায় নিহত তৃণমূল নেতা আনিসুর রহমান বিশ্বাসের পরিবারেরও কয়েকজনের নাম রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। বুধবার নদিয়ার ফাজিলনগরের নিহত সিপিএম সদস্যের বাড়িতে যান বাম পরিষদের একটি প্রতিনিধিদল। ওই প্রতিনিধিরা নিহতের পরিবারের পাশাপাশি কথা বলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গেও। এরপরেই নিহতদের পরিবারের তরফে অভিযোগ দায়ের হয় থানায়।
গত ২৭ জুন, শুক্রবার বিকেলে কুপিয়ে খুন করা হয় স্থানীয় তৃণমূল নেতা আনিসুর রহমান বিশ্বাসকে। তার কিছুক্ষণ পরে নারায়ণপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েত দফতরে ঢুকে গুলি করে খুন করা হয় সিপিএম সদস্য আব্দুল হক শেখকে। ওই রাতেই আনিসুরের ভগ্নীপতি নজরুল ইসলাম মণ্ডল ২০ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। ওই ঘটনায় পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতারও করেছে।
কিন্তু সেই সময় পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করতে ভরসা পায়নি নিহত আব্দুলের পরিবার। কারণ দলকে পাশে পায়নি তারা। ঘটনার পরে নিহত ওই সিপিএম সদস্যের বাড়িতে দলের পক্ষ থেকে কোনও নেতা না যাওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন গ্রামের অনেকেই।
বুধবার ওই আট জনের বাম পরিষদীয় প্রতিনিধিদলে ছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী ও ডোমকলের বিধায়ক আনিসুর রহমান, জলঙ্গির বিধায়ক আব্দুল রেজ্জাক, জামুরিয়ার বিধায়ক জাহানারা খান, কুমারগ্রামের মনোজ ওরাও, নবগ্রামের বিধায়ক কানাই মণ্ডল, পলাশিপাড়ার বিধায়ক এস এম সাদি, তেহট্টের বিধায়ক রণজিত্ মণ্ডল ও করিমপুরের বিধায়ক সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ। ওই দলের সঙ্গে ছিলেন তেহট্টের স্থানীয় নেতৃত্ব। ওই প্রতিনিধিদল পৌঁছনোর কিছুক্ষণ পরে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন সিপিএমের নদিয়া জেলা সম্পাদক সুমিত দে। ঘটনার দিনের বিস্তারিত বিবরণ শোনেন তাঁরা। প্রতিনিধিদল বাড়িতে আসার সঙ্গে সঙ্গেই আব্দুলের বাড়িতে ভিড় জমতে থাকে এলাকার মানুষের। তাঁদের অনেকেই ওই প্রতিনিধিদলের কাছে নানা অভিযোগ করেন। সাদিপুর লোকাল কমিটির সদস্য তথা জেলা পরিষদের সদস্য ইনসাফ মণ্ডলের স্ত্রী ফরিদা পারভিন বলেন, “আমার স্বামীকে খুনের মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার দশ বছরের মেয়ে ও সাত বছরের যমজ দুই ছেলে ভয়ে স্কুলে যেতে পারছে না। আপনারা কিছু একটা ব্যবস্থা করুন।” আব্দুলের পরিবারের সদস্যরাও ওই প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছেন, “যে গিয়েছে সে তো আর ফিরবে না। আমরা যেন সম্মান নিয়ে নিরাপদে থাকতে পারি।”
এদিন আনিসুর রহমান বলেন, “এখন বিধানসভা চলছে। তাই সকলে আসতে পারিনি। এক গ্রামে বাস করতে গেলে সামান্য ঝামেলা হতেই পারে। তাই বলে একজন মানুষকে মেরে ফেলতে হবে? আমরা কোনও খুনকেই সমর্থন করি না। তৃণমূলের যিনি মারা গিয়েছেন তাঁর জন্যও আমরা শোকাহত।” আনিসুর বলেন, “গ্রামের মানুষের কাছে নানা অভিযোগ শুনলাম। এই বিষয়ে আমরা পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব। ঘটনার কথা মুখ্যমন্ত্রীকেও জানাব।”